মাশরাফিরা কাজটি কি ঠিক করলেন?
স্পোর্টস ডেস্ক: বিশ্বকাপ আসরের পর থেকে ক্রিকেটে বাংলাদেশ যেন অন্য এক ক্রিকেট পরাশক্তিতে পরিণত হয়েছে। সাম্প্রতিক সময়ে মাশরাফির নেতৃত্বে এক এক করে পাকিস্তান, ভারত ও দক্ষিণ আফ্রিকার মতো ক্রিকেট শক্তিকে বড় ব্যবধানে হারিয়ে ক্রিকেটের নয়া শক্তি যে বাংলাদেশ তা প্রমাণ করেছে। তবে এই বড় দলগুলোর পরে আরও একটি বড় দল অস্ট্রেলিয়ার বিরুদ্ধে খেলার সূচী ছিল টাইগার বাহিনীর। তবে তারা নিরাপত্তাহীনতার অযুহাতে তাদের নির্ধারিত বাংলাদেশ সফর স্থগিত করে।
অস্ট্রেলিয়া দল যখন নিরাপত্তাভীতিতে সফরে এল না, ক্রিকেট দক্ষিণ আফ্রিকাও অনিরাপদ বোধ করল মেয়েদের পাঠাতে, তখন এগিয়ে এল জিম্বাবুয়ে। জানুয়ারির পূর্ণাঙ্গ সিরিজের ওয়ানডে ও টি-টোয়েন্টির অংশটা খেলে যেতে রাজি হলো সংকটকালে। অথচ তাদেরই কিনা এমন নাকানিচুবানি খাওয়ানো!
না, ক্রিকেট মাঠের বাইরে জিম্বাবুয়ে দলের জন্য আতিথেয়তা সেই আগের মতোই অকৃত্রিম। কাল তো বাংলাদেশ দলের সমর্থকদের সংগঠক বিসিএসএ প্রতিনিধিরা টিম হোটেলে গিয়ে জিম্বাবুয়ে অধিনায়ক এলটন চিগুম্বুরার হাতে তুলে দিয়ে এলেন একটা বন্ধুত্বের স্মারকও। চিগুম্বুরা তাতে অভিভূত। কিন্তু খেলায় আগের ‘অতিথিপরায়ণ’ মনোভাবটা যে আর নেই বাংলাদেশ দলের মধ্যে! বাংলাদেশের ক্রিকেটারদের অতিথিসৎকারে ভারত, পাকিস্তান, দক্ষিণ আফ্রিকার মতো দলেরও এখন ‘শেষকৃত্য’ হয়ে যায়, আর এ তো জিম্বাবুয়ে!
সিরিজের শেষ টি-টোয়েন্টি ম্যাচের আগে আফ্রিকার দলটা তাই বিষণ্ন। গত বছরের অক্টোবর-নভেম্বরের হারের ধারা বজায় রেখে এবার এখনো জয়শূন্য তারা। মিরপুরে আজ শেষ ম্যাচে সান্ত্বনার জয় কি পাবে জিম্বাবুয়ে? আগের ম্যাচে জিম্বাবুয়ের হয়ে দ্রুততম টি-টোয়েন্টি ফিফটি করা ম্যালকম ওয়ালার অবশ্য আশা ছাড়ছেন না। হারের তিক্ত স্বাদ নিয়েও পরশু রাতে বলছিলেন, ‘আমরা আরও একটা ম্যাচ খেলব এবং শেষ ম্যাচে জয় নিয়েই বাড়ি ফিরতে চাই।’
আর বাংলাদেশ? জিম্বাবুয়ের কফিনে শেষ পেরেকটা ঠুকে দিয়ে ওয়ানডে, টি-টোয়েন্টি মিলিয়ে ব্যবধানটাকে নিশ্চয়ই ৫-০ করতে চাইবে মাশরাফি বিন মুর্তজার দল। কিন্তু লক্ষ্যের কথা কাল বাংলাদেশ দলের কারও কাছ থেকেই সরাসরি জানা গেল না। অন্য কেউ তো বললেনই না, অধিনায়ক মাশরাফি বিন মুর্তজার মুখেও লাগাম পরানো।
লাগামটা প্রথমে পরিয়েছিলেন কোচ চন্ডিকা হাথুরুসিংহে। কাল জানা গেল বিসিবি থেকেও কড়া নিষেধাজ্ঞা দেওয়া হয়েছে—ক্রিকেটাররা কেউ সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলতে পারবেন না। সিরিজের শেষ প্রান্তে এসে এমন নিষেধাজ্ঞা একটু বিস্ময়করই। বিসিবির মিডিয়া ম্যানেজার রাবীদ ইমাম অবশ্য বোঝাতে চাইলেন, ‘তেমন কোনো কারণ নেই...আজ (গতকাল) খেলোয়াড়দের সবকিছু থেকে বিশ্রাম দেওয়া হয়েছে। সে কারণেই কেউ কথা বলছে না।’
বিশ্রামের দিনেও অবশ্য মিরপুরে গিয়ে ঘণ্টা দুয়েক ব্যাটিং অনুশীলন করেছেন মুশফিকুর রহিম। অনেকে কাজ করেছেন হোটেলের জিমনেসিয়ামে। একটা টিম মিটিংও হয়েছে বিকেলের দিকে। মিটিংয়ের আলাপ-আলোচনা থেকে যে আভাস মিলেছে তাতে প্রথম টি-টোয়েন্টি ম্যাচের একাদশেরই খেলার কথা শেষ ম্যাচেও। লক্ষ্যও আগেরটাই—আরেকটু ছাড়িয়ে যেতে হবে নিজেদের। বিশেষ করে বিশুদ্ধ ব্যাটিংয়ের চেষ্টাটাকে করতে হবে সফল। মাশরাফি অবশ্য পরশু রাতেই শেষ ম্যাচ থেকে চেয়ে রেখেছেন আরও একটা বিষয়, ‘দলে নতুন আসারা চাপের মধ্যে কীভাবে খেলে হয়তো সেটা দেখার আরও একটা সুযোগ পাব আমরা দ্বিতীয় ম্যাচে।’
জিম্বাবুয়ে দল সিরিজে প্রথম এবং এখন পর্যন্ত একটিবারের মতোই বাংলাদেশকে সামান্য হলেও চাপে ফেলতে পেরেছিল প্রথম টি-টোয়েন্টিতে। মাশরাফির মনের আকাশে যৎকিঞ্চিৎ শঙ্কা সেটি নিয়েই। আর নিজেদের ব্যাটিং নিয়ে তো ওয়ানডে সিরিজ থেকেই আছে অতৃপ্তি। শেষ ম্যাচে সব অতৃপ্তি দূর করা একটা জয় কি পাবে বাংলাদেশ?
১৫ নভেম্বর, ২০১৫/এমটিনিউজ২৪/রাসেল/মাহমুদ