স্পোর্টস ডেস্ক: অনূর্ধ্ব-১৫ নারী সাফ চ্যাম্পিয়নশিপের সর্বোচ্চ গোলদাতা তহুরা খাতুন ময়মনসিংহের ধোবাউড়া উপজেলার কলসিন্দুর গ্রামের কৃষক ফিরোজ আলীর মেয়ে। ছোটবেলা থেকেই ফুটবলার হওয়ার অদম্য এক ইচ্ছা মনে লালন করতেন তহুরা। কিন্তু মেয়ে হওয়ায় তার ফুটবল খেলা নিয়ে চারপাশে ছিল প্রতিবন্ধকতার হাজারো দেয়াল।
পরিবারের সঙ্গে ছিল সামাজিক বাধাও। সবচেয়ে বেশি যে কথাটা শুনতে হয়েছে তহুরাকে তা হলো – মেয়েরা ফুটবল খেললে ‘গুনাহ’ হয়! তবে তহুরা এতসব বুঝতেন না, তার চিন্তা-ভাবনায় ছিল শুধুই ফুটবল। অনেকটা পরিবার ও সমাজের বিরুদ্ধে গিয়েই ফুটবলে জড়িয়েছেন প্রতিভাবান এই ফুটবলার।
দ্বিতীয় শ্রেণিতে পড়ার সময় বঙ্গমাতা শেখ ফজিলাতুন্নেছা মুজিব প্রাথমিক জাতীয় নারী ফুটবল প্রতিযোগিতার মাধ্যমে ফুটবল জীবন শুরু হয় তহুরার। পায়ের জাদুতে সবাইকে বিমোহিত করে তহুরা অতি অল্প সময়ে গায়ে চাপান বয়সভিত্তিক জাতীয় দলের জার্সি। দেশের নারী ফুটবলের রেকর্ড পাতায় অদম্য এক ফুটবলার হিসেবে তহুরা নিজেকে নিয়ে গেছেন ভিন্ন উচ্চতায়। উপজেলা, জেলা, বিভাগীয় ও জাতীয় পর্যায়ে একাধিক সেরা খেলোয়াড়ের পুরস্কার পাওয়া তহুরা আজ শুধু ময়মনসিংহ নয়, সারা বাংলাদেশের গর্ব।
পরিবার ও সমাজের শত বাধা পেরিয়ে আজকের এই অবস্থানে ওঠে আসা তহুরা স্বপ্ন দেখেন সারাজীবন দেশের হয়ে খেলার। পুরনো দিনের স্মৃতিচারণ করতে গিয়ে এই স্ট্রাইকার প্রিয়.কমকে বলেন, ‘শুরুতে সবাই মানা করত। গ্রামের মানুষরাও অনেক কিছু বলতো। সবাই বলতো, মেয়েরা আবার ফুটবল খেলে নাকি? মেয়েরা ফুটবল খেললে গুনাহ হয়। এমন অনেক কথা শুনেছি। কিন্তু অনেক ইচ্ছা ছিল ফুটবলার হব। শুরুতে বাবা-মাও পছন্দ করত না। তবে এখন ভালো বলে। সবাই অনেক খুশি আমার খেলা দেখে। আমিও খুশি। আমি আরও বড় ফুটবলার হতে চাই। দেশের হয়ে এভাবেই সারাজীবন খেলে যেতে চাই। ’
ক্লাস টু থেকেই ফুটবলের সাথে প্রেম অনূর্ধ্ব-১৫ দলের এই স্ট্রাইকারের। তখন থেকেই গোল করাকে রীতিমতো অভ্যাসে পরিণত করেছেন তহুরা। আন্তর্জাতিক ফুটবলে এখন পর্যন্ত তহুরার গোল সংখ্যা ১৬টি। রয়েছে দুটি হ্যাটট্রিক! এএফসি অনূর্ধ্ব-১৪ এর আঞ্চলিক আসরে স্বাগতিক তাজিকিস্তানের বিপক্ষে হ্যাটট্রিক করার পর সর্বশেষ সাফ অনূর্ধ্ব-১৫ মহিলা চ্যাম্পিয়নশিপে নেপালের বিপক্ষে হ্যাটট্রিকের দেখা পান তহুরা। নিজের এলাকায় এই গোলমেশিনকে সবাই ‘মেসি’ বলেই ডাকে!
তহুরা জানান, ‘আমাকে সবাই কলসিন্দুরের মেসি বলে ডাকে। সেখানকার রাস্তা দিয়ে গেলে যখন এই নামে ডাকে, তখন আমার খুব ভালো লাগে। এলাকার মুরব্বিরাও আমাকে দেখলে মাথায় হাত বুলিয়ে আদর করেন আর বলেন, মেসির মতো যেন সব ম্যাচেই গোল করি। ’
২০১৭ সালের ডিসেম্বরে সাফ অনূর্ধ্ব-১৫ নারী ফুটবলে চ্যাম্পিয়ন হওয়ার পুরস্কার হিসেবে গণভবনে তহুরা ও তার সতীর্থদের সংবর্ধনা দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রীর কাছে একটি দাবিও জানিয়েছেন তহুরা। তবে তা নিজের জন্য নয়। প্রধানমন্ত্রীর কাছে নিজের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান কলসিন্দুর উচ্চ বিদ্যালয়কে সরকারিকরণের দাবি জানান নবম শ্রেণির ছাত্রী তহুরা।
এ নিয়ে বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রীকে বলেছি, কলসিন্দুর উচ্চ বিদ্যালয়কে সরকারি করে দিন। ’ প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাও নিরাশ করেননি তাকে। তহুরার চাওয়ার উত্তরে প্রধানমন্ত্রী বলেছেন, ‘ঠিক আছে করে দেবো। ’
প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে কথা বলে রীতিমতো রোমাঞ্চিত তহুরা, ‘প্রধানমন্ত্রী বলেছেন, তিনি আমাদের খেলা দেখেছেন। খেলা দেখে তিনি খুবই খুশি। ভবিষ্যতে আরও ভালো করার কথা বলেছেন। এ নিয়ে আমি তিনবার প্রধানমন্ত্রীর কাছাকাছি গেলাম। খুবই ভালো লাগছে। তার কথায় আরও ভালো খেলার অনুপ্রেরণা পেয়েছি।
৯ ডিসেম্বর ২০১৭/এমটিনিউজ২৪.কম/হাবিব/এইচআর