স্পোর্টস ডেস্ক: ২০১৮ সালের রাশিয়া বিশ্বকাপের জন্য দল ঘোষনা করেছে ব্রাজিল কোচ টিটে। সাধারনত, অন্যান্য কোচরা যখন প্রাথমিক দল ঘোষনা করছে, তখন ব্রাজিল কোচ টিটে ২৩ সদস্যের মুল দলই ঘোষনা করেন।
ব্রাজিল কোচ এই দল ঘোষনার সাথে সাথে বিশ্লেষন শুরু হয় ২০১৪ সালের ব্রাজিল দলের সাথে। দুই দলের কোথায় কোথায় পার্থক্য সেসব নিয়ে চলছে বিশ্লেষন। আর সেগুলোই পাঠকদের জন্য তুলে ধরা হল।
২০১৪ সালে ব্রাজিল দলের যে স্কোয়াড ছিল সেই স্কোয়াডের ৬ তারকা আছেন এই ২০১৮ বিশ্বকাপের স্কোয়াডে। এরা হলেন, মার্সেলো, থিয়াগো সিলভা, ফার্নান্দিনহো, পাউলিনহো, উইলিয়ান ও নেইমার। এই ছয় তারকার মধ্যে শুধু ২ জন জার্মানীর বিপক্ষে সেমিফাইনালে একাদশে ছিলেন। সেই দুজন হল মার্সেলো ও ফার্নান্দিনহো।
২০১৪ সালের বিশ্বকাপে ব্রাজিলের সেরা একাদশটি ছিল: হুলিও সিজার, থিয়াগো সিলভা, ডেভিড লুইজ, ফার্নান্দিহনো, মার্সেলো, হাল্ক, পাউলিনহো, ফ্রেড, নেইমার, অষ্কার, মাইকন।
এদের বাইরে যারা বদলি হিসেবে নামত তারা হল- উইলিয়ান, হেনরিক, দান্তে, দানি আলভেস, রমিরেস, গুস্তাবো, জো।
এখানে একটা বিষয় লক্ষনীয় যে, নিয়মিত একাদশের কোন সেন্টারব্যাক না খেললে (যেমনটা হয়েছিল জার্মানীর বিপক্ষে) নামানো হত দান্তেকে। নিয়মিত একাদশের হাল্ক, ফ্রেডরা সেসময় ছিলনা ফর্মে। মিস করত প্রচুর। রিজার্ভ বেঞ্চও ছিলনা তেমন শক্তিশালী। সব মিলিয়ে ব্রাজিল দলটা ছিল নেইমার নির্ভরশীলতা। নেইমার খেলা তৈরি করলে ভালো, না করলেই অসহায়। মিডে এক অষ্কার ছাড়া নেইমারের সাথে তাল মেলাতে পারতনা কেউই।
ফলাফলও সেটাই বলে। নেইমার প্রথম ম্যাচে করেছে ২ গোল, ব্রাজিল জিতেছে। পরের ম্যাচে গোল পায়নি, ব্রাজিলও জিতেনি। তৃতীয় ম্যাচে করেছে জোড়া গোল। ব্রাজিলও জিতেছে। দ্বিতীয় রাউন্ডে চিলির বিপক্ষে গোল পায়নি। ম্যাচ গিয়েছে টাইব্রেকারে। কোয়ার্টার ফাইনালে তো মেরুদন্ডই ভেঙে ফেলার উপক্রম করল কলম্বিয়া। আর ব্রাজিলও বিদায় নিল পরের রাউন্ডে।
অন্যদিকে বর্তমান ব্রাজিলের সেরা একাদশ হল: অ্যালিসন, থিয়াগো সিলভা, মিরান্ডা, মার্সেলো, দানিলো, ক্যাসমিরো, ফার্নান্দিনহো, কৌতিনহো, নেইমার, জেসুস, উইলিয়ান।
এই একাদশের প্রতিটি পজিশনে যেসকল তারকা আছে তারা সবাই নিজ নিজ পজিশনে সেরা। বর্তমান বিশ্বের সেরা পাঁচ গোলকিপারের একজন অ্যালিসন এবং ইতালিয়ান লিগের সেরা গোলকিপার তিনি। সেন্টারব্যাকে মিরান্ডা ও থিয়াগো সিলভা এখনো নিজেদের সেরা অবস্থান ধরে রেখেছেন। লেফটব্যাক বলতেই মার্সেলোর নাম আসবে সবার আগে। হয়তো রাইট ব্যাকে দানি আলভেস থাকলে বিশ্বসেরা বলা যেত, কিন্তু দানিলোও কোন অংশেই কম নয়।
এবার মিডের দিকে খেয়াল করলে দেখা যাবে বর্তমান বিশ্বের সেরা ডিফেন্সিভ মিড যাকে বলা হয় সেই ক্যাসমিরো আছেন। পেপ গার্দিওলার মতে বিশ্বের সেরা তিন ডিফেন্সিভ মিডফিল্ডারের একজন ফার্নান্দিনহো আছেন। আছেন ছন্দের জাদুকর কৌতিনহো যাকে নেইমারের রিপ্লেস বলেই মনে করে বার্সালোনা।
ফরোয়ার্ড লাইনে আছে বিশ্বের তৃতীয় সেরা ও ড্রিবলিং মাষ্টার ফুটবলার নেইমার। সেন্ট্রাল ফরোয়ার্ডে আছেন গ্যাব্রিয়েল জেসুস যিনি টিটের অধিনে সবচেয়ে বেশি গোল করেছেন ব্রাজিলের হয়ে। রাইট উইংয়ে আছে উইলিয়ান যিনি চেলসির এই মৌসুমের সেরা খেলোয়ার নির্বাচিত হয়েছেন।
এত এত সেরা তারকার মধ্যে বেঞ্চের দিকে একটু তাকান। সেখানে বসে আছে বিশ্বের সেরা পাঁচ ও প্রিমিয়ার লিগে দ্বিতীয় সেরা গোলকিপার এডারসন। ডিফেন্ডার হিসেবে পিএসজির বর্সসেরা একাদশের ও বর্তমান বিশ্বের অন্যতম সেরা সেন্টারব্যাক মার্কুইনহোস বসে আছেন। লেফটব্যাকে ফিলিপ লুইজ আছেন যার কারনে আলেক্স সান্দ্রোর মত খেলোয়ার দলে আসতে পারছেন না।
মিডফিল্ডে তাকান। বর্তমানে বার্সা ও ব্রাজিলের প্রান পাউলিনহো এবং সাখতার দানেস্কের সেরা তারকা ফ্রেড বসে আছেন। জুভেন্টাসের আক্রমন ভাগের অন্যতম সেরা তারকা ডগলাস কস্তা ও প্রিমিয়ার লিগের সবচেয়ে কমপ্লিট ফরোয়ার্ড হিসেবে খেতাব পাওয়া ফিরমিনোও আছেন বেঞ্চে।
দুই বিশ্বকাপের ব্রাজিলের মধ্যে ২০১৪ সালের ব্রাজিলের সেরা একদশের থেকেও ২০১৮ সালের ব্রাজিলের দ্বিতীয় একাদশটিই কোন সন্দেহ ছাড়াই সবচেয়ে বেশি ভারসাম্যপূর্ন। সবচেয়ে বড় কথা হল, এই দুই একাদশের কোনটিই একমাত্র নেইমারের উপর নির্ভর নয়। দলে অনেক গোলস্কোরার আছে। আর এমন একটি পরিপূর্ন স্কোয়াড নিয়ে বিশ্বজয়ের আশা করতেই পারে ব্রাজিল ভক্তরা।
এমটিনিউজ২৪.কম/টিটি/পিএস