৭৯ অলআউট, লজ্জায় মুখ লুকাচ্ছে দ.আফ্রিকা!
স্পোর্টস ডেস্ক : নাগপুরে মাত্র ১২৭ মিনিট! যে কোনও হিন্দি সিনেমার চেয়েও সময় কম। একটা শাহরুখ খান কিংবা আমির খানের ছবি শেষ হতে হতে আড়াই ঘণ্টা লেগে যায়। সেখানে দু’ঘণ্টা সাত মিনিটেই শেষ! ভাবা যায় না! ভয়ে, কেঁপেই শেষ!
দোষ কার? পিচের? না, ব্যাটসম্যানদের? অবশ্যই প্রোটিয়া ব্যাটসম্যানদের। তারা কেঁপেই গেলেন গোটা সিরিজে। ভারতীয় স্পিনারদের বিরুদ্ধে। মোহালিতে, বেঙ্গালুরুর প্রথম দিনে তারপর এখানে। জামঠায়। পিচে বল এমন কিছু ‘ভ্যাবচাক’ হল না যে খেলা যায় না। যা চোখে দেখা যায় না, তা হল হাসিম আমলার ব্যাটসম্যানদের ব্যাটিং। যেভাবে তারা আউট হলেন তা দেখে সানি গাভাসকার, সঞ্জয় মঞ্জরেকাররা বলা শুরু করে দিলেন, ‘দেখে মনে হচ্ছে ব্যাটসম্যানরা বল না দেখে শুধু বোলার দেখেই খেলছে। সেজন্য এই অবস্থা।’
তাই তো। না–হলে যা সব আউট হয়েছেন এবি ডি’ভিলিয়ার্সরা তা কিছুতেই পিচের জন্য হতেই পারে না। মাত্র ৭৯ রানে গুটিয়ে যাওয়া! এর আগে ভারতের বিরুদ্ধে দক্ষিণ আফ্রিকা এত কম রানে দেশে–বিদেশে গুটিয়ে যায়নি। ২০০৬ সালে জোহানেসবার্গে ৯৬ রানে ভারতের বিরুদ্ধে শেষ হয়েছিল দক্ষিণ আফ্রিকা। আর তার আগে ’৯৬ সালে আমেদাবাদে প্রোটিয়ারা ১০৫ রানে অলআউট হয়ে যায়। কিন্তু জামঠায় আমলারা নিজেদেরই ছাপিয়ে গেলেন!
বুধবার টেস্টের প্রথম দিন প্রথম ইনিংসে ১১ রানে ২ উইকেট হারিয়েছিল দক্ষিণ আফ্রিকা। ভাবা গিয়েছিল বৃহস্পতিবার সকাল থেকে কিছু একটা করে দেখাবেন আমলারা। দেখালেন, তবে উল্টো। কী জঘন্যভাবে আউট হওয়া যায় তার জ্বলন্ত উদাহরণ হয়ে থাকবে নাগপুরের এই টেস্ট। পরে নিজেরা ভিডিও দেখলে লজ্জায় কোথায় মুখ লুকোবেন তা নিজেরাই জানেন।
দ্বিতীয় দিনের সকালে প্রথম ওভারেই ফিরে গেলেন ওপেনার এলগার। ইনসাইড এজ। অশ্বিনের বলে। অহেতুক বাইরে বেরিয়ে যাওয়া বল টেনে এনে স্টাম্প ভেঙে দিলেন! পিচের দোষ নেই।
এবার আসা যাক প্রোটিয়া অধিনায়কের কথায়। অশ্বিনের ডেলিভারি গুড লেংথ স্পটে পড়ল। আমলা সুইপ করতে গেলেন। বল হাতে লেগে, উঁচু হয়ে লাগল ব্যাটের উল্টো ব্লেডে। বল উড়ল। উইকেটকিপার ঋদ্ধির কাঁধে লেগে লব হয়ে গিয়ে প্রথম স্লিপে দাঁড়ানো রাহানের হাতে। পিচ কী করল!
যার দিকে তাকিয়ে ছিল দক্ষিণ আফ্রিকা শিবির সেই এবি ডি’ভিলিয়ার্স কীভাবে আউট হলেন? রবীন্দ্র জাদেজার শর্ট বল। অফস্টাম্পের বাইরে বেরিয়ে যাচ্ছিল। অহেতুক এবি বলটি অনসাইডে খেলতে গেলেন। দরকার ছিল না। সোজা বল চলে গেল জাদেজারই হাতে। পিচ কী করল এখানে? যাঁরা অহেতুক হঠাৎ পিচ নিয়ে কচকচি শুরু করেছেন তাঁরা কি দেখেছেন প্রোটিয়াদের প্রতে্যকের আউটের দৃশ্য?
আসা যাক ফাফ ডুপ্লেসিসের আউটে। মিনিট কুড়ি ক্রিজে ছিলেন। তারপর সোজা বলে দুম করে ব্যাট আড়া চালিয়ে বোল্ড। পিচ কী করল? দক্ষিণ আফ্রিকার উইকেটকিপার ভিলাস বোলার জাদেজার যে বলে আউট হয়েছেন তা হল দক্ষিণ আফ্রিকার প্রথম ইনিংসের সেরা বল। বল পড়ল মিডল স্টাম্পে। ছোট্ট টার্ন। ভিলাসের অফস্টাম্প ভেঙে দিল। স্পিনারের বল টার্ন নেওয়া কি অপরাধ? অফস্পিনার হার্মার অশ্বিনের ক্যারম বল বুঝতে না পেরে দু’পায়ের ফাঁক দিয়ে বিশ্রীভাবে বোল্ড হলেন।
খেললেন একজনই। জে পি ডুমিনি। স্পিনারদের বিরুদ্ধে ফুটওয়ার্ক কী হওয়া উচিত তা সতীর্থদের দেখিয়ে দিলেন। তারই সর্বোচ্চ ব্যক্তিগত রান। বাকিরা এলেন আর গেলেন। প্রথম ইনিংসেই দক্ষিণ আফ্রিকা পিছিয়ে পড়ল ১৩৬ রানে। অনেকটা পথই বটে। আবার ‘অ্যাশ–জাড’ জুটি সফল। অশ্বিন ৩২ রানে ৫টি এবং জাদেজা ৩৩ রানে ৪টি উইকেট নিলেন। এই নিয়ে অশ্বিনের টেস্টে ইনিংসে ১৪বার পাঁচ উইকেট নেওয়া হয়ে গেল! স্বপ্নের ফর্মে রয়েছেন। ‘স্যর জাদেজা’–কেও বাদ দেওয়া যায় না। যোগ্য সঙ্গত।
দ্বিতীয় ইনিংসে ভারতীয় ব্যাটসম্যানদের মধ্যে খানিকটা শিখর ধাওয়ান ও চেতেশ্বর পুজারা ছাড়া আর কেউই সেভাবে প্রোটিয়া বোলারদের সামনে ভাল ব্যাটিংয়ের নির্দশন রাখতে পারেননি। জানা নেই, কী হয়েছে ভারতীয় ব্যাটিংয়ের। অধিনায়ক বিরাট কোহলি নিজেকে ছুঁড়ে দিয়ে এলেন আবারও। অকারণে মারতে গিয়ে যেভাবে আউট হলেন তা অধিনায়কের কাছ থেকে মানা যায় না। এটা ধোনি হলেই সমালোচনার ঝড় উঠে যেত। নিশ্চিতভাবে। দ্বিতীয় ইনিংসে বেশিরভাগ ক্রিকেটার নিজেদের উইকেট দিয়ে এলেন প্রটিয়া লেগ স্পিনার ইমরান তাহিরকে। দ্বিতীয় ইনিংসে ভারত অলআউট ১৭৩ রানে। দক্ষিণ আফ্রিকার সামনে ৩১০ রানে লক্ষ্য রেখে। কঠিন লক্ষ্য। তা নিয়ে কথা হবে না। কিন্তু দুটো ইনিংসেই ভারতীয় ব্যাটসম্যানরা যে ব্যাটিংয়ের নমুনা দেখালেন তা খুব একটা স্বস্তি দেবে না ভবিষ্যতে।
৩১০ রান তাড়া করতে গিয়ে সেই প্রথম দিনের ছবি। যেন ফটোকপি। দিনের শেষে দক্ষিণ আফ্রিকা ২ উইকেটে ৩২। লক্ষ্য এখনও ২৭৮। হাতে ৮ উইকেট। সঙ্গে দু’টো দিন। অশ্বিন ও অমিত মিশ্রর দাপটে ফিরে গেছেন ওপেনার ভ্যান জিল ও নৈশপ্রহরী ইমরান তাহির। ১১ বছর পর আবার ঘরের মাটিতে দক্ষিণ আফ্রিকার বিরুদ্ধে ভারতের সিরিজ জয়ের হাতছানি প্রকট হয়ে উঠছে। যদি না এবি ডি’ভিলিয়ার্সের মতো চওড়া কোনও ব্যাট তৃতীয় দিন বাধা হয়ে দাঁড়ায়। হতে পারেন অধিনায়ক আমলাও। পূর্বাভাস যদিও তেমন বলছে না। তবে ক্রিকেট যে আবহাওয়ার চেয়েও অনেক বেশি ‘আনপ্রেডিক্টেবল’। তার হাতে–গরম প্রমাণ তো পাওয়াই গেল বৃহস্পতিবার। সারা দিনে পড়ল ২০টা উইকেট!
২৭ নভেম্বর,২০১৫/এমটি নিউজ২৪/এসবি/এসএস