শুক্রবার, ০৪ ডিসেম্বর, ২০১৫, ০৮:২৮:৪০

এবারের বিপিএলের আলোচিত ৮ ঘটনা

এবারের বিপিএলের আলোচিত ৮ ঘটনা

স্পোর্টস ডেস্ক: বাংলাদেশ প্রিমিয়ার লিগ (বিপিএল) এর ঢাকা ও চট্টগ্রাম পর্বের খেলা নানা ঘটনার মধ্যে দিয়ে শেষ হয়েছে। চার-ছক্কায় ব্যাটসম্যানদের আধিপত্যের সঙ্গে মাথা উচু করে দাঁড়িয়েছে বোলাররাও। সামষ্টিক নৈপূণ্যে সামনের দিকে এগিয়ে যেতে মরিয়া প্রত্যেকটি দল। পিছিয়ে পড়া দলগুলো বেশ চিন্তায়, শেষটায় চমক দিয়ে মুখিয়ে তারা। এমন কিছু মুহুর্তের কিছু ঘটনা নিচে তুলে ধরা হলো- ১। টানা ১ রানের দুই হার: শুরুর হতাশায় ক্লান্ত সিলেট। না হলে সবার নিচেই কেন থাকবে মুশফিকুরের সিলেট সুপার স্টার্স। অথচ শুরুটা ভালো হলে চিত্র ভিন্ন হতে পারত, কিন্তু ভাগ্য বিধাতাই বুঝি সহায় হয়নি। ক্রমাগত হেরেই চলেছে তারা। অনেকের চোখ তাই সিলেটের শুরুর দুটি ম্যাচের দিকে, যে দুটি ম্যাচের রেজাল্টই নাকি প্রভাব ফেলছে পরের ম্যাচগুলোতেও। টানা দুই ম্যাচে এক রানে হার, এও সম্ভব? ২৩ নভেম্বর নিজেদের প্রথম ম্যাচে চিটাগং ভাইকিংসের মুখোমুখি হয়েছিল সিলেট। প্রতিপক্ষের করা ১৮০ রানের জবাবে সিলেট ৬ উইকেটে থামে ১৭৯ রানে, দুর্ভাগ্য। দ্বিতীয় ম্যাচেও একই চিত্র। যা অবাকই করেছে সবাইকে। একদিন পরেই বরিশাল বুলসের ১০৮ রান টপকাতে পারেনি মুশফিকরা। ৯ উইকেটে তাদের সংগ্রহ ১০৭, চরম দুর্ভাগা সিলেট সুপার স্টার্স শিবির, বলাই যায়। ২। তামিম ও অনাকাঙ্খিত মুহূর্ত: খেলোয়াড় বনাম ফ্রাঞ্চাইজি কর্মকর্তাদের মধ্যে উত্তপ্ত বাক্য বিনিময়। যা গরম করে রাখল ম্যাচ পরবর্তী সংবাদ সম্মেলন। যেখানে এমনটি হলে খেলার ছাড়ার হুমকি দিয়েছিলেন চিটাগং ভাইকিংসের অধিনায়ক তামিম ইকবাল। ঘটনা ২৩ নভেম্বরের। চিটাগংয়ের প্রতিপক্ষ সিলেট সুপার স্টার্স। বিদেশী দুই খেলোয়াড় রবি বোপারা ও জোশুয়া কবের সিলেটের হয়ে খেলা নিয়ে সমস্যার শুরু। নিজ দেশের ক্রিকেট বোর্ডের অনাপত্তি পত্র ছিল না তাদের। টস হলেও খেলা শুরু বিলম্বে। এরই মাঝে সিলেট কর্মকর্তাদের সঙ্গে এক চোট হয়ে যায় তামিমের। পরে তামিম মিডিয়ার সামনে বলেন, ‘তারা আমার সঙ্গে ভিক্ষুকের মতো আচরণ করেছে। এমন চলতে থাকলে খেলাই ছেড়ে দেব’। ৩। ২৪ ঘন্টায় তিনবার আউট: পিলে চমকেই উঠতে পারে এমন খবরে। ২৪ ঘন্টার মধ্যে কিভাবে এক ব্যাটসম্যান তিনবার আউট হতে পারে। তিনবার আউট হতে গেলে অন্তত তিনটি ম্যাচ খেলতে হবে তাকে, যাতে সময় ব্যয় হবে প্রায় তিন দিন, সেখানে ২৪ ঘন্টা? আশ্চর্যের হলেও এমন কাণ্ডের নায়ক চিটাগং ভাইকিংসের পাকিস্তানী ক্রিকেটার উমর আকমল। তবে সব আউট বিপিএলে নয়, আছে আন্তর্জাতিক ম্যাচও। ৩০ ডিসেম্বর রাতে সংযুক্ত আরব আমিরাতে টি২০ ম্যাচে ইংল্যান্ডের মুখোমুখি হয়েছিল পাকিস্তান। ঐ ম্যাচে চার রান করে আউট হয়েছিলেন উমর। ম্যাচটিতে দুই দলের স্কোর হয়েছিল সমান, ১৫৪। ফলে ম্যাচ গড়ায় সুপার ওভারে। এক ওভারের ম্যাচে পাকিস্তানের হয়ে মাঠে নামেন আফ্রিদি ও উমর। ইংলিশ পেসার ক্রিস জর্দানের শেষ বলে আউট হন উমর। ঐ ম্যাচের ১২ ঘন্টা পরই চট্টগ্রামে বিপিএলের ম্যাচে রংপুরের বিরুদ্ধে মাঠে নামেন উমর। আট বল খেলে এক রান করে হন সাকিব আল হাসানের বলে আউট। বড়ই বিস্ময়কর, ২৪ ঘন্টায় তিনবার আউট। ক্রিকেট বিশ্বে এমন বিরল রেকর্ড হয়তো আর কারো নেই। ৪। নিষিদ্ধ সাকিব: চলতি বিপিএলে প্রথম নিষেধাজ্ঞার খড়গ চাপে বিশ্বসেরা অলরাউন্ডার সাকিব আল হাসানের উপর। ২৬ নভেম্বর সিলেট সুপার স্টার্সের মুখোমুখি হয়েছিল সাকিবের রংপুর রাইডার্স। ম্যাচ জেতে রংপুর। ম্যাচ সেরাও হন সাকিব। তবে পরে শোনেন দুঃসংবাদ। আম্পায়ারের সিদ্ধান্তের প্রতিবাদ করায় এক ম্যাচের জন্য নিষিদ্ধ হন সাকিব, সঙ্গে ২০ হাজার টাকা জরিমানাও। ৫। হ্যাটট্রিকে আল-আমিনের ফেরা: বছরের শুরুতে ওয়ানডে বিশ্বকাপে ছিলেন দলের সঙ্গে। তবে মাঠে নামার আগেই শৃঙ্খলা ভঙ্গের অভিযোগে অস্ট্রেলিয়া থেকে দেশে ফেরত পাঠানো হয় তাকে। মাঝে অনেকদিন ছিলেন মাঠের বাইরে। তবে বিপিএলের তৃতীয় আসর পেসার আল-আমিনের জন্য পোয়াবারো। চলতি আসরের প্রথম হ্যাটিট্রকম্যান তিনি। ২৪ নভেম্বর সিলেটের বিরুদ্ধে হ্যাটট্রিকসহ পাঁচ উইকেট নিয়ে হয়েছিলেন ম্যাচ সেরা। তবে এই কৃতিত্বে কিছুটা কালি লাগে অশোভন আচরণের কারণে। কারণ ব্যাট হাতে মোহাম্মদ শহীদের বলে বোল্ড হওয়ার পর অপেশাদার আচরণ করেন আল–আমিন। সঙ্গে শহীদও জড়ান বিবাদে। জরিমানা করা হয় দুজনকেই। ম্যাচ সেরা পুরস্কারের সঙ্গে জরিমানাও গুনলেন আল-আমিন, ৬। লুইসের ঝড়ো সেঞ্চুরি: চার-ছক্কা-উইকেট- সবই হচ্ছিল। তবে দেখা মিলছিল না ব্যাট হাতে কোন ব্যাটসম্যানের সেঞ্চুরি। শেষ পর্যন্ত চলতি বিপিএলে তা করে দেখান বরিশাল বুলসের ক্যারিবীয় তরুণ ব্যাটসম্যান এভিন লুইস। ঢাকা ডায়নামইটসের বিরুদ্ধে রীতিমতো তাণ্ডবই চালান তিনি। মুস্তাফিজ, নাসির, ডেসকাট কাউকে রেহাই দেননি। ৬৪ বলে লুইস পূর্ণ করেন শতক। শেষ পর্যন্ত ৬৫ বলে ১০১ রান করে থাকেন অপরাজিত। সাত চার ও ছয় ছক্কার দুর্দান্ত ইনিংসের জন্য ম্যাচ সেরার পুরস্কারও পান তিনি। ৭। ৮০ হাজার টাকায় এক রান: বলাই বাহুল্য, বেশ ব্যয়বহুল রান। রানটি করেছিলেন চিটাগং ভাইকিংসের পাকিস্তানী খেলোয়াড় উমর আকমল। শারজাতে ইংল্যান্ডের বিরুদ্ধে টি২০ সিরিজ খেলেই ঢাকা চলে আসেন উমর। ম্যাচ ধরতে ঢাকা থেকে দ্রুত চট্টগ্রাম যান বিশেষ হেলিকপ্টারে। যাতে চিটাগং ভাইকিংসের খরচ হয় প্রায় ৮০ হাজার টাকা। কিন্তু ১ ডিসেম্বর রংপুরের বিরুদ্ধে ব্যাট হাতে ব্যর্থ উমর। টি২০ ভার্সনের ক্রিকেটে করেন মাত্র এক রান, তাও আবার ৮ বল খরচায়। বিষয়টি সেদিন বেশ আলোচনার খোরাক জুগিয়েছিল। ৮। দিলশানের ধাক্কায় কায়েস কুপোকাত: চট্টগ্রাম পর্বের শেষ ম্যাচে (৩ ডিসেম্বর) অযাচিত ধাক্কা কাণ্ডের নায়ক দিলশান। ম্যাচে মুখোমুখি হয়েছিল কুমিল্লা ও চিটাগং। কুমিল্লার ইনিংসের দ্বিতীয় ওভারের চতুর্থ বলে ঘটে ঘটনাটি। তাসকিন আহমেদের বল পয়েন্টের দিকে ঠেলে দিয়ে রান নিতে গিয়েছিলেন ইমরুল কায়েস। অপর প্রান্ত থেকে আহমেদ শেহজাদ ফিরিয়ে দেন তাকে। ততক্ষণে ফিল্ডিং করে দিলশান থ্রো করেছিলেন স্ট্যাম্পের দিকে। বল স্ট্যাম্পে না লেগে চলে যায় সীমানার দিকে। ওভার থ্রোয়ে রান নিতে ছোটেন দুই ব্যাটসম্যান। কিন্তু রান নিতে ছোটার সময় উইকেটের ওপর চলে আসা দিলশানের সঙ্গে ধাক্কা খেয়ে পড়ে যান ইমরুল। পরে টিভি রিপ্লেতে দেখা যায়, ইমরুল দৌড় শুরু করলে ইচ্ছে করেই সামনে পা বাড়িয়ে তাকে ফেলে দিয়েছিলেন দিলশান। ইমরুলকে রান আউট না দিয়ে তাই উল্টো ৫ রান পেনাল্টি দেওয়া হয় চিটাগংকে। আর বলটি ডেড বলে ঘোষণা করেন আম্পায়ার। যদিও পরে চট্টগ্রামের অধিনায়ক তামিম, এটা খেলার অংশ বলেই চালিয়ে দিয়েছেন। ৪ ডিসেম্বর, ২০১৫/এমটি নিউজ২৪/জুবায়ের/রাসেল

Follow করুন এমটিনিউজ২৪ গুগল নিউজ, টুইটার , ফেসবুক এবং সাবস্ক্রাইব করুন এমটিনিউজ২৪ ইউটিউব চ্যানেলে