সবচেয়ে বেশি টস জিতে বসের কাতারে যারা!
স্পোর্টস ডেস্ক: দক্ষিণ আফ্রিকাকে নাকানিচুবানি খাওয়াচ্ছে ভারত দল। অলৌকিক কিছু না ঘটলে দিল্লি টেস্টেও হারতে বসেছে সফরকারীরা। বেঙ্গালুরু টেস্ট বৃষ্টিতে ভেসে যাওয়ায় প্রোটিয়ারা বেঁচে গিয়েছে ধবল ধোলাইয়ের হাত থেকে। দল না পারলেও বিরাট কোহলি পেরেছেন। টসের লড়াইয়ে হাশিম আমলাকে ৪-০ ব্যবধানেই হারিয়েছেন ভারত অধিনায়ক।
দ্বিতীয় ভারতীয় অধিনায়ক হিসেবে চার কিংবা তার বেশি টেস্টের সিরিজে সবগুলো টসেই জেতার রেকর্ড গড়লেন কোহলি। ভারতের হয়ে এর আগে এমন কীর্তি গড়েছিলেন মনসুর আলী খান পতৌদি। তাও অর্ধ শতাব্দীর আগের ঘটনা এটি। ১৯৬৪ সালে ইংল্যান্ডের বিপক্ষে নিজেদের মাটিতে পাঁচ টেস্টের সিরিজে প্রতিবারই টস জিতেছিলেন পতৌদি। এরপর অন্য কোনো ভারতীয় অধিনায়ক মুদ্রা নিক্ষেপের এই লটারি এভাবে জিততে পারেননি। ভাগ্যের খেলা টসে জেতার নিশ্চয়তা দেওয়া সম্ভব নয়, সেখানে টানা চার কিংবা পাঁচবারই বিজয়ীর হাসি নিয়ে মাঠ থেকে বের হওয়াটা কিছুটা ‘আধিভৌতিক’ই বটে।
টসের ভাগ্যের এমন জুয়াতে পতৌদি যে সব সময়ই এমন ভাগ্যবান ছিলেন তা কিন্তু নয়। ভারতের হয়ে ৪০ বার টস করতে নেমেছিলেন নবাব পরিবারের সন্তান। তাতে জয় পরাজয়ে সমানে সমান তিনি। ২০ বার জিতেছেন, হেরেছেনও ২০ বার। নিজের পূর্বসূরির চেয়ে একটু এগিয়ে আছেন কোহলি। এখনো পর্যন্ত ১০ বার টস করতে নেমে ৬ বার জয়ী হয়ে ফিরেছেন।
অবশ্য টসে সবচেয়ে বিজয়ীদের তালিকায় ঢুকতে সামনে দীর্ঘ পথ পাড়ি দিতে হবে কোহলিকে। টেস্টে সবচেয়ে বেশি ৬০ বার টস জিতেছেন দক্ষিণ আফ্রিকার গ্রায়েম স্মিথ, হেরেছেনও ৪৯ বার। দ্বিতীয় ও তৃতীয় স্থানে আছেন অ্যালান বোর্ডার ও স্টিফেন ফ্লেমিং। বোর্ডার ৪৬ বার টস জিতেছেন, আর ফ্লেমিং ৩৭ বার। তবে এ দুজন যতবার টস জিতেছেন তার চেয়েও বেশিবার হেরেছেন। বোর্ডার হেরেছেন ৪৭ বার আর ফ্লেমিংয়ের ক্ষেত্রে সংখ্যাটি ৪৩।
কোহলির পূর্বসূরি মহেন্দ্র সিং ধোনির টস-ভাগ্যটাও বেশ খারাপ। ৬০ টেস্টে মুদ্রা নিক্ষেপের পর কেবল ২৬ বার হাসতে পেরেছেন ধোনি।
অবশ্য টেস্টে টস হারায় ধোনির ‘সুখ্যাতি’ বেশ পুরোনোই। ধোনি টি-টোয়েন্টিতে এখন পর্যন্ত সবচেয়ে বেশিবার টস জেতার ‘রেকর্ড’ নিজের কাছে রেখে এই অপবাদ মোছার চেষ্টা করেছেন। ওয়ানডেতেও সবচেয়ে বেশিবার টসজয়ীর তালিকায় সেরা পাঁচে আছেন তিনি, যদিও হারার তালিকায় আছেন তিনে!
ওয়ানডেতে এই ভাগ্য পরীক্ষায় সবচেয়ে এগিয়ে রিকি পন্টিং। এই অস্ট্রেলিয়ান অধিনায়ক ১২৪ টসে জিতেছেন, হেরেছেনও অবশ্য ১০৬ বার। দ্বিতীয় স্থানে থাকা ফ্লেমিংয়ের ওয়ানডে ভাগ্যও বেশ খারাপ দেখা যাচ্ছে। ১০৬ বার ভাগ্য তাঁর পক্ষে ছিল, ১১২ বারই বিপক্ষে। তৃতীয়স্থানে রানাতুঙ্গা আছেন ১০৩টি জয় নিয়ে। ভাগ্যের খেলায় সবচেয়ে ভাগ্যবান দেখাচ্ছে ভারতের সাবেক অধিনায়ক মোহাম্মদ আজহারউদ্দিনকে। ৯৬ বার ভাগ্যকে পক্ষে পেয়েছেন তিনি, আর ৭৮ বার বিপক্ষে।
ওয়ানডেতে মাত্র তিনজন অধিনায়ক এক শর বেশিবার টস জিতেছেন। অবশ্য এটিও মনে রাখতে হবে, এঁরা নেতৃত্ব দেওয়ার সুযোগও পেয়েছেন অনেক ম্যাচে। ওই তিনজনের দুজন—পন্টিং আর ফ্লেমিং ওয়ানডেতে এক শর বেশি টস হারা ‘দুইমাত্র’ অধিনায়কও। আর দুবার হারলে ধোনিও টস হারার সেঞ্চুরি করে ফেলবেন।
বাংলাদেশের টসভাগ্যের প্রসঙ্গটাও এসে যাচ্ছে। এই ক্ষেত্রে বাংলাদেশের অধিনায়কেরা সবাই প্রায় এক কাতারে। টেস্টে সব অধিনায়কই ভাগ্যের খেলায় জয়ের চেয়ে হেরেছেন বেশি। এই তালিকার শীর্ষে মুশফিকুর রহিম—১৩টি টস হার দিয়ে। ওয়ানডেতে যে স্থান হাবিবুল বাশারের—৩৭ বার। টেস্টে সর্বোচ্চ ১১ বার টস জিতেছেন মুশফিক, ওয়ানডেতে ৩২ বার জিতেছেন হাবিবুল।
টেস্টে টসজয়ী সেরা পাঁচ অধিনায়ক
নাম অধিনায়ক হিসেবে ম্যাচ টস জয়
গ্রায়েম স্মিথ (দক্ষিণ আফ্রিকা) ১০৯ ৬০
অ্যালান বোর্ডার (অস্ট্রেলিয়া) ৯৩ ৪৬
স্টিভেন ফ্লেমিং (নিউজিল্যান্ড) ৮০ ৩৭
রিকি পন্টিং (অস্ট্রেলিয়া) ৭৭ ৩৭
ক্লাইভ লয়েড (ওয়েস্ট ইন্ডিজ) ৭৪ ৩৫
ওয়ানডেতে টসজয়ী সেরা পাঁচ অধিনায়ক
নাম অধিনায়ক হিসেবে ম্যাচ টস জয়
রিকি পন্টিং (অস্ট্রেলিয়া) ২৩০ ১২৪
স্টিভেন ফ্লেমিং (নিউজিল্যান্ড) ২১৮ ১০৬
অর্জুনা রানাতুঙ্গা (শ্রীলঙ্কা) ১৯৩ ১০৩
মোহাম্মদ আজহারউদ্দিন (ভারত) ১৭৪ ৯৬
মহেন্দ্র সিং ধোনি (ভারত) ১৮৬ ৮৮ সূত্র : প্রথম আলো