বলে আগুন ঝরালেন মর্নি মর্কেল!
অগ্নি পান্ডে, দিল্লি: ছোট্ট একটা থাম্বস আপ, ড্রেসিংরুমের দিকে। কোটলায় হাজার পঁচিশেক দর্শকের চিল–চিৎকারে কান পাতা দায়। ড্রেসিংরমের ঠিক উল্টোদিকে কোটলার স্ট্যান্ডে হাজার আটেক ছাত্রছাত্রী। তাদের দিকে একবার ব্যাট তোলা, ব্যস। এতেই যেন কোটলা শীতের দুপুরে খানিকটা উষ্ণতার ছোঁয়া পেয়ে গেল।
ঘরের মাঠে ভারত অধিনায়ক প্রথম ইনিংসে একটুর জন্য অর্ধ শতরান হাতছাড়া করে ছিলেন। দ্বিতীয় ইনিংসে যা সুদে–আসলে পুষিয়ে দিলেন। কোটলা দেখলো সংযমী ইনিংস কোহলিও পারেন খেলতে। দরকার নেই কোনও কায়দাবাজি করার, করেননি তাই। দ্বিতীয় ইনিংসে ভারতের ৫৭ রানে ৪ উইকেট চলে যাওয়ার পর ভারত–অধিনায়ক ঘরের মাঠে বুক চিতিয়ে লড়ে গেলেন। সঙ্গী প্রথম ইনিংসে শতরান পাওয়া অজিঙ্কা রাহানে। দিনের শেষে ভারত ৪ উইকেটে ১৯০। এগিয়ে ৪০৩ রানে। হাতে এখনও যে ৬টি উইকেট।
কোটলাকে স্বস্তি, আনন্দ দিয়ে এই দুই ভারতীয় ব্যাটসম্যানই দিনের শেষে অপরাজিত রইলেন। রবিবার কোটলা প্রবলভাবে দেখতে চায় ঘরের ছেলের অধিনায়ক হিসেবে শতরান। যিনি তৃতীয় দিনের শেষে ৮৩ রানে অপরাজিত। আরেকজন, ৫২ রানে। প্রাথমিক বিপর্যয়ের পর দলকে ভরসা দিলেন কোহলি–রাহানে জুটি।
গোটা সিরিজে রক্ষণশীল ক্রিকেটপ্রেমীরা বারবার আক্ষেপ করেছেন ‘আসল টেস্ট’ ক্রিকেট দেখতে না পাওয়ার জন্য। সত্যিকারের টেস্ট ক্রিকেট বলতে যা বোঝায় তা চোখে দেখিয়ে গেল কোটলার তৃতীয় দিন। চলতি সিরিজে এই প্রথম। যেমন, টেস্টের প্রথম ঘণ্টায় ফাস্ট বোলারদের দাপট ঠিক তেমনই ফাস্ট বোলিংকে সামলাতে মাথা নিচু করে ক্রিজ কামড়ে পড়ে থাকা ব্যাটসম্যান দেখাল কোটলা। এবং তার পর ব্যাটসম্যানদের ব্যাট ক্রমশ চওড়া হয়ে ওঠা। ভারত ফলোঅন করাবে না হাসিম আমলার দলকে, দ্বিতীয় দিনেই চূড়ান্ত হয়ে গেছিল। সেইমতো দুই ওপেনার মুরলী বিজয় ও শেখর ধাওয়ান শনি–সকালে ব্যাট করতে যান।
টেস্টের সকালে ফাস্ট বোলিং কেমন হওয়া উচিত তা দেখালেন বটে মর্নি মর্কেল। আগুন ঝরালেন কোটলার বাইশ গজে। দুই ভারতীয় ওপেনারকে নাচিয়ে ছেড়ে দিলেন। বল তুললেন বুকের ওপরে! কানের পাশ দিয়ে বার করে দিলেন। দুরন্ত ইয়র্কারে ছিটকে দিলেন স্টাম্প। মর্কেলকে সামলাতে না পেরে দ্রুত ড্রেসিংরুমে ফিরে গেলেন মুরলী বিজয়। তার পর যা দেখল কোটলা তা চোখে আর দেখা যায় না। দ্বিতীয় দিন ফিল্ডিংয়ের সময়ে হাতে চোট পেয়ে মাঠ ছেড়ে ছিলেন চেতেশ্বর পূজারা।
সেইজন্য তার জায়গায় তিন নম্বরে ব্যাট করতে নামলেন রোহিত শর্মা। মর্কেলের যে বলে বোল্ড হলেন তা ‘আনপ্লেয়েবল’। তবে রোহিতের মানসিকতা ভেঙেচুরে শেষ হয়ে গেছে বোঝাই যায়। দ্বিতীয় ইনিংসেও চূড়ান্ত ব্যর্থ রোহিত। বাদ পড়লেন বলে। এভাবে চলতে থাকলে টেস্টের দরজা খুলবে না। কে এল রাহুল শুধু ভারতীয় দলে পর্যটক হয়ে ঘুরবেন না নিশ্চয়ই। সামনে এখন টেস্ট নেই। সেজন্য রোহিত বেঁচে যাবেন। কম ওভারের ক্রিকেটে রান পেয়ে থাকার জন্য।
হল কী পূজারার? ইমরান তাহিরের যে বলে বোল্ড হলেন তা নিয়ে ক্রিকেটমহলে চর্চা হবেই। টেস্টে এই নিয়ে ১৪ বার বোল্ড হলেন! রীতিমতো ভাবার বিষয়। কোনও ব্যাটসম্যান এতবার শুধু বোল্ড হলে টেকনিক নিয়ে কথা উঠতে বাধ্য। যতই অপছন্দ হোক না কেন। পূজারা ফিরে যেতে দক্ষিণ আফ্রিকার উইকেট পাওয়ার রাস্তায় জ্যাম লাগিয়ে দিলেন দুই ভারতীয়। অধিনায়ক স্বয়ং। এবং রাহানে। মাথা ঠান্ডা রেখে।
কোটলার বাইশ গজ চেনে ঘরের ছেলেকে। ভালবাসে। খালি হাতে ফিরিয়ে দিতে চায় না কখনই। ঘাড়ের ওপরে চেপে বসা প্রোটিয়া বোলারদের ধীরে ধীরে ঘাড় থেকে নামালেন না বরঞ্চ নিজেই চড়ে বসলেন পাল্টা। ড্রাইভ, কাটে উজ্জ্বল বিরাট কোহলি। একবারই কোটলা ‘ইস্’ করে উঠে ছিল। ইমরান তাহিরের বলে কট বিহাইন্ড হওয়ায়। কিন্তু তাহিরের বোলিং ‘ন্যায্য’ ছিল না। ‘নো’ বল। বেঁচে যাওয়ার পর আর পেছনের দিকে তাকাতে হয়নি। পেরিয়ে গেলেন ৫০, ৬০, ৭০, ৮০–র কোটা। সাবলীল কোহলি। রাহানে দিলেন ভরসা। রাহানেও সেই ভরসায় চলতি টেস্টে দ্বিতীয়বার ৫০–এর গণ্ডি পেরোলেন।
রবিবারের কোটলা কী চায় সেটা বলে দিতে হবে না। কোটলা চায় প্রিয় ‘ছেলের’ অধিনায়ক হিসেবে ঘরের মাঠে প্রথম শতরান। যে ছন্দে শনিবার শেষ করলেন সেই ছন্দে রবিবার না থাকার কোনও কারণ নেই। তবে শনি–বিকেলে দ্বিতীয় নতুন বল নিয়েছেন আমলারা। রবি সকালে আবার শনি–সকালের মতো ‘লাল চেরি’ হাতে জ্বলে উঠবেন না তো দীর্ঘকায় পেসারটি? তিনি জ্বলে উঠলে আমাদের অধিনায়কও কম যান কিসে। এটাই তো টেস্টের আসল রূপ। সিট বেল্ট বেঁধে বসার জন্য তৈরি রবি–সকালের কোটলা।
০৬ ডিসেম্বর,২০১৫/এমটি নিউজ২৪/এসবি/এসএস