রবিবার, ০৬ ডিসেম্বর, ২০১৫, ০৩:৪০:৫০

চিত্রটিই বলে দিচ্ছে ম্যাচের ফলাফল!

চিত্রটিই বলে দিচ্ছে ম্যাচের ফলাফল!

স্পোর্টস ডেস্ক : পৃথিবীতে একটা ক্রিকেট মাঠের যত রকম অপবাদ থাকতে পারে, কোটলার মোটামুটি সব আছে। ক্রিকেট ব্যাটিং ছাড়া। শনিবার অবশ্য সকাল থেকেই মিডিয়া চত্বরে একটা নিষ্পাপ ব্যাটিং চালু ছিল যে, ভারত কখন ডিক্লেয়ার করবে? বাজির দর খুব একটা উঠল না যেহেতু সংখ্যাধিক্য একমত হয়ে যান, ওটা ঘটবে টি-র কাছাকাছি সময়ে। দক্ষিণ আফ্রিকা নেমে আজই তিন-চার উইকেট হারাবে। তার পর কাল দিল্লিতে মাঝদুপুর নামার আগেই ম্যাচ আর সিরিজ শেষ। অথচ দিনের শেষে ভারত ৪০৩ প্লাস। অধিনায়ক স্বয়ং ক্রিজে এবং ডিক্লারেশনের নামগন্ধ দেখা যাচ্ছে না। গত কালই অবশ্য পরিষ্কার হয়ে গিয়েছে চূড়ান্ত ডিক্লেয়ারেশনের সিদ্ধান্ত কোহলির থেকে এলেও ওটা আসলে নেবেন রবি শাস্ত্রী! আধুনিক টিম ইন্ডিয়ার মাস্টার স্ট্র্যাটেজিস্ট তিনিই। শুক্রবার যেমন দক্ষিণ আফ্রিকা ইনিংস শেষ হওয়ামাত্র প্লেয়ার্স ব্যালকনি থেকে শাস্ত্রী টিমকে ইশারা করছিলেন, ব্যাট করো আবার। ফলো অন করিয়ে স্টিভ ওয়াহদের সেই ইডেন বিপর্যয় পনেরো বছর পরেও এমন কাঁপুনিতে আচ্ছন্ন রেখেছে যে, কোনও টিম তার অটোপাইলট মোডে ফলো অন সেভ করে রাখে না। কিন্তু শাস্ত্রীয় প্রেসক্রিপশন তো শুধু তা নয়। এটা হল পুরনো বম্বে মডেল। ব্যাটাচ্ছেলেদের যত পারো মাঠে রাখো। আরও ক্লান্ত করো। তোমার হাতে গোটা দু’দিন এবং সেটা ওদের দশ উইকেট ফেলার জন্য অঢেল সময়। সঞ্জয় মঞ্জরেকরকে জি়জ্ঞেস করছিলাম তিনিও বম্বে মডেলের রেজিস্টার্ড বলে। তাঁর কি নিখুঁত বুঝতে সুবিধে হচ্ছে ডিক্লারেশনটা কখন আসবে? তা সঞ্জয়ের মনোভাব দেখে মনে হল ভারত রোববার লাঞ্চে দান ছাড়লেও তিনি আশ্চর্য হবেন না। ‘‘অনেক সময় আছে। পিষে পিষে জেতো,’’ বলছিলেন তিনি। বললাম না সাবেকি বোম্বাই দর্শন! কিন্তু নিয়ত ব্যর্থতার পরেও রোহিত শর্মাকে খেলিয়ে যাওয়াটা কোন দর্শন? এ দিন হঠাৎ তিন নম্বরে তাঁকে নামিয়ে দেওয়া হল। আসলে হঠাৎ নয়। এটাও শাস্ত্রীয় প্রেসক্রিপশন হবে যে, প্লেয়ারটা রান না পেয়ে নড়বড়ে আছে তো? এই সময় সবচেয়ে সহজ পরিস্থিতিতে নামাও। এমন সময় যখন মাঠে মাত্র একটা টিমই জেতার জন্য খেলছে। স্পেশ্যাল বর্ষশেষের নানান অফার থাকে না? রাজধানীর পিচে তেমনই অফার। ডিসকাউন্টে মাল পাওয়া যাচ্ছে। রানটা করে আয়। রোহিত সেই সেলের পরিস্থিতিও বিসর্জন দিলেন প্রথম বলে বোল্ড হয়ে। প্রথম ইনিংসে ১ রান বেশি করেছিলেন। আর এ জিনিস চলছে সেই শ্রীলঙ্কা সিরিজের আগে থেকে। কিছু বললেই বলা হয়, দ্রুত একটা বিশেষ দিন আসবে যে দিন থেকে টেস্ট ব্যাটসম্যান রোহিত শর্মা আর ফিরে তাকাবে না। রোহিত সম্পর্কে ভারতের বিভিন্ন আমলের টিম ম্যানেজমেন্ট যেমন গদগদ, শাহজাহানের সঙ্গে মুমতাজেরও তত প্রেম ছিল কি না সন্দেহ! শুধু রোহিতকে বোল্ড করাই নয়। সকাল-সকাল মর্নি মর্কেল আচমকা আগুন ঝরাতে শুরু করেন। দ্রুত তিন উইকেট তিনি তুলে নেওয়া মাত্র তীব্র শিরশিরানি শুরু হয়— টেস্ট ম্যাচটা ভারতের জন্য অ্যান্টিক্লাইম্যাক্স হয়ে যাবে না তো? চাপের মুখে এই সময় ইমরান তাহিরকে টানা আক্রমণে রাখতে শুরু করেন আমলা। এমনিতে গোটা সিরিজে মাত্র ৬৯ ওভার বল করিয়েছেন তাঁর টিমের পয়লা নম্বর স্পিনারকে। যা আরও ২০/২৫ ওভার বেশি হওয়া উচিত ছিল। সিরিজে বেশির ভাগ সময় তাহিরকে মনে হচ্ছে যেন বিবাহবিচ্ছিন্না স্ত্রী। যার সঙ্গে পারতপক্ষে কোনও সম্পর্কই রাখতে চান না দলের অধিনায়ক। তা সেই তাহির বোল্ড করে দিলেন পূজারাকে। টিম ইন্ডিয়া চার উইকেটে ৫৭ এবং টেস্ট যে কোনও দিকে মোচড় মারতে পারে। দিল্লিতে এখন সকালের দিকে বেশ ঠান্ডা। খুব সাহসীরাই একমাত্র হাফস্লিভে ম্যানেজ করতে চাইবে। কিন্তু যে সময়ের কথা লিখছি, তখন ম্যাচের উত্তাপ বাইরের শীতকে কন্ট্রোলে রাখার পক্ষে যথেষ্ট হয়ে দেখা দিচ্ছে। মনে হচ্ছে সিরিজের সেরা ক্রিকেটীয় অংশ এই বুঝি তার ঐশ্বর্যের ঝাঁপ খুলল। শহর দিল্লির ডিসেম্বরে যা আনুষঙ্গিক ঐশ্বর্যের ব্যাপার থাকে, তা তো কোটলার বাইরে পুরো মাত্রায়। বিনোদনই বিনোদন! পর্যটকে ভরা শহর। আর রোজই কিছু না কিছু চলছে। তিন-চার দিনের মধ্যে ফেডেরার-নাদালদের নিয়ে টেনিসের মেলা। তারই মধ্যে বহু দিন বাদে ইমরান খান আসছেন। অরুণ জেটলির বাংলোর বাইরে বিশাল ম্যারাপ আর আলো। মেয়ের বিয়ের ‘সঙ্গীত’ চলছে। পরশু গেয়েছেন বাবুল সুপ্রিয়। আজ মিকা সিংহ। রাতে আবার ডিএলএফ ক্লাবে হাজির টাবু, রাজু হিরানি, ইমতিয়াজ আলিরা। আর তারও আগে আরও কেন্দ্রস্থলে হলিউড-খ্যাত নিকোল কিডম্যান। কিন্তু কোটলার ক্রিকেট মোটেও তাঁর অস্কার নমিনেশন পাওয়া ছবি ‘মুলাঁ রুজ’-এর মতো হচ্ছে না। বরং এমনই বিবর্ণ যেন চেন্নাইয়ের শোকে পীড়িত হয়ে রয়েছে। সারা দিনে কোহলির ভারত তুলল মাত্র ১৯০ রান! ৮১ ওভার ব্যাট করে। গড়ে আড়াই রানেরও কম। জওহরলাল নেহরু বেঁচে থাকার সময় টেস্টে এক দিনে এত কম রান হত। ইন্টারনেট যুগে ভুলেও হয় না। কিন্তু কোটলার ভারত যে প্রাক্ নেহরু দর্শন আঁকড়েছে। সাবেকি বম্বে! ঝুঁকি নেবে না। যত পারবে ওদের খাটান দেবে। পিষে পিষে বিপক্ষকে ম্যাচে ফেরার রাস্তা থেকে নিশ্চিহ্ন করে দেবে। এই প্রেসক্রিপশন চললে ঘরের মাঠে কোহলির সেঞ্চুরির সুযোগ আসবে প্রথম। ডে’ভিলিয়ার্সের উইকেট ফেলাটা তার পরে। না কি ভারত বিপক্ষকে নিয়ে একটু খেলছে? খুব পিচ নিয়ে যারা চেঁচিয়েছিলি, হেডেন, মাইকেল ভন দ্যাখ, তোদের পেয়ারের টিমকে ফাস্ট ফরোয়ার্ড মোশনে আগের টেস্টগুলোয় হারিয়েছি। তিন দিনে খেলা শেষ হয়ে গেছে। এ বার স্লো মোশনেও যা-তা করে হারাব। যা, সাধ্য থাকলে আবার মুখ খোল। বলা যায় না। শাস্ত্রীয় প্রেসক্রিপশনে কিন্তু সবই সম্ভব!-আনন্দবাজার ৬ ডিসেম্বর ২০১৫/এমটিনিউজ২৪/হাবিব/এইচআর

Follow করুন এমটিনিউজ২৪ গুগল নিউজ, টুইটার , ফেসবুক এবং সাবস্ক্রাইব করুন এমটিনিউজ২৪ ইউটিউব চ্যানেলে