মঙ্গলবার, ০৮ ডিসেম্বর, ২০১৫, ০৫:৩৬:০৮

১২ বলেই অপ্রতিরোধ্য দূর্গ হুড়মুড়িয়ে ভেঙে পড়লো

১২ বলেই অপ্রতিরোধ্য দূর্গ হুড়মুড়িয়ে ভেঙে পড়লো

অগ্নি পান্ডে, দিল্লি থেকে : টেস্ট সিরিজে শেষ উইকেটটাও পড়ল সোজা বলে! দেখার মতো। ভারতে খেলতে আসার আগে প্রোটিয়া দল ভেবেছিল, ভারতে বল শুধু ঘুরবে। ঘূর্ণি মাথায় থেকে গেছিল বোধহয়। নইলে গোটা টেস্ট সিরিজে বল ঘোরার কথা ভেবেই কি সোজা সোজা বলে উইকেট দিয়ে ফেরে হাসিম আমলার দল? কোটলায় সিরিজের ময়নাতদন্ত করতে বসে সেইরকমই মনে হচ্ছে। কোটলাতেও হেরে গেল দক্ষিণ আফ্রিকা। বড় ব‍্যবধানে। ৩৩৭ রানে। ৪৮১ রানের লক্ষ‍্য মাথায় রেখে টেস্ট বাঁচানোর যে অসম্ভব লড়াই করছিলেন দক্ষিণ আফ্রিকার ব‍্যাটসম‍্যানরা তা সোমবার ঘন কুয়াশা ঢাকা কোটলায় থেমে গেল বিকেলের কিছুক্ষণ আগে। না, মাথা নিচু করে ঘণ্টার পর ঘণ্টা, ওভারের পর ওভার লড়ার ক্ষমতা একটা সময় যে ফুরিয়ে গেল বিশ্বের এক নম্বর টেস্ট দলের। অসাধ‍্যসাধন করতে চেষ্টা করছিলেন দক্ষিণ আফ্রিকার অধিনায়ক হাসিম আমলা ও এ বি ডি’ভিলিয়ার্স। শেষ টেস্ট হেরে সিরিজ ৩–০–তে হেরে গেলেও যেভাবে কোটলায় দ্বিতীয় ইনিংসে এই দুই ব‍্যাটসম‍্যান সম্মান বাঁচানোর নিদর্শন রেখে গেলেন তা বিশ্ব ক্রিকেটে সমাদৃত হোক আর না হোক আলোচিত হবেই, যতদিন টেস্ট ক্রিকেট বেঁচে থাকবে। কিছু করার নেই। ভারতও দেখিয়ে দিল মাথা নিচু করে শুধু ব্লক করে গেলেই যে টেস্ট বাঁচানো যায় তা কিন্তু নয়। সব মিলিয়ে উপভোগ‍্য টেস্ট উপহার দিল বিরাট কোহলির ঘরের মাঠ কোটলা। শেষ দিন প্রোটিয়া উইকেট তুলতে ভারত অধিনায়ক বিরাট কোহলি মোট আট বোলারকে ব‍্যবহার করলেন! নিজেও হাত ঘোরালেন! তবে লাঞ্চের আগে সেই জাদেজার অসাধারণ ডেলিভারিতে প্রোটিয়া অধিনায়ক যখন ফিরে গেলেন তখন আমলার মুখে হাসি উধাও। ২৮৯ মিনিট কাটিয়ে ২৪৪ বল খেলে ২৫ রান টেস্টের রসায়নাগারে উঠে গেল সেই মুহূর্তেই। ভাবা গেছিল এবার বুঝি কোহলি দলবল নিয়ে আরও চাপ বাড়িয়ে দেবেন প্রতিপক্ষের ওপর। লাঞ্চের পর বেশিক্ষণ খেলা গড়াবে না। বাকি টেস্টগুলো যা নমুনা রেখে গেছে স্মৃতিতে। উল্টো হল। আমলার পর ফাফ ডুপ্লেসিস নোঙর করলেন কোটলার বুকে। তার সতীর্থদের দেখে তিনি নিজেও বোধহয় নিজেকে বোঝালেন। পড়ে থাকলেই চলবে। আলোর অবস্থা ভাল নয়। কোনওরকমে সাড়ে তিনটে অবধি কাটিয়ে দিতে পারলেই কেল্লা ফতে। সম্মান বাঁচিয়ে দেশে ফেরা যাবে। সেই কারণেই বোধহয় ৫৩টি বল খেলার পর নিজেকে নিয়ে গেলেন শূন‍্য থেকে ১–এ! লাঞ্চের পর যখন এবিডি–ফাফ জুটি নিজেদের ধৈর্যকে নিজেরাই বারবার চ‍্যালেঞ্জ করছেন তখনই আবার সেই জাদেজার হাত থেকে বেরিয়ে এল বিষাক্ত ডেলিভারি। এ‍ল বি ডব্লু ডু’প্লেসিস। নড়েচড়ে বসল সোমবার অপেক্ষাকৃত কম ভিড় হওয়া কোটলার গ‍্যালারি। চা–বিরতির আগে ফিরে গেলেন ডুমিনিও। অশ্বিনকে কে আর এই সিরিজে ভাল করে খেলতে পেরেছেন? পারলেন না ডুমিনিও। এ বি ডি’ভিলিয়ার্সের শিকড় তখন কোটলায় বাইশ গজে গভীর থেকে আরও গভীরে প্রবেশ করেছে। চা–বিরতিই কি গন্ডগোল করে দিল মনঃসংযোগে? সেটাই মনে হচ্ছে। উইকেটকিপার ভিলাসকে নিয়ে ডি’ভিলিয়ার্স খেলে যাচ্ছিলেন। চা–বিরতির পর ঘণ্টাখানেক কাটিয়ে দিতে পারলেই ম‍্যাচ বাঁচিয়ে ফেলা যাবে যখন ভাবছিলেন সম্পূর্ণ নয়া রূপী ডি’ভিলিয়ার্স তখনই চায়ের পর প্রথম ওভারেই রিভার্স স্যুইংয়ে কুপোকাত ভিলাস। উমেশের বলটাই বুঝতে পারলেন না। ঠিক তার পরের ওভারেই জ্বলে উঠলেন অশ্বিন। ঠিক কথা, আর কতদিন পরিবার ছেড়ে বাইরে থাকবেন? চেন্নাইয়ের অবস্থা নিয়ে এমনিতেই উদ্বিগ্ন। স্পিনের ছোবলে ফিরিয়ে দিলেন ভারতের জয় ও ড্রয়ের মাঝখানে দাঁড়িয়ে থাকা ডি’ভিলিয়ার্সকে। চায়ের পেয়ালায় কি মনঃসংযোগে চিড় ধরল? চোখ বোলান এইমুহূর্তে বিশ্বের সবচেয়ে ধ্বংসাত্মক ব‍্যাটসম‍্যানের স্কোর কার্ডে। ৩৫৪ মিনিট ব‍্যাট করেছেন। খেলেছেন ২৯৭ বল। ৩টি চারের সাহায্যে করে গেলেন ৪৩। না উঠে দাঁড়িয়ে থাকতে পারেনি কোটলা। পারেনি ভারতীয় ড্রেসিংরুমের ব‍্যালকনিও। এবি নিশ্চয় ভাবতে ভাবতে ফিরে যাবেন, ইস্‌, ওই ডেলিভারিটাই লাফাল! শেষ মুহূর্তে কেন যে ব‍্যাটটা সরাতে গিয়েও পারলেন না? না, এ বি ডি ফিরে যাওয়ার দু’ওভারের মধ্যেই গুটিয়ে গেল আমলার দল। উমেশ ও অশ্বিনের দাপটে। ঋদ্ধিমান দারুণ প্রশংসিত হলেন পেটের ক‍্যাচ নিয়ে। চা–বিরতির পর হুড়মুড়িয়ে ভেঙে গেল যাবতীয় প্রতিরোধ। না, জল কামানের দরকার হয়নি। কাজে দিয়েছে নিজের বোলারদের প্রতি অগাধ বিশ্বাস কোহলির। সেই বিশ্বাসে ভর করেই ভারত উঠে এল টেস্ট র‍্যাঙ্কিংয়ে দ্বিতীয় স্থানে। অস্ট্রেলিয়া, পাকিস্তানকে টপকে। যাবতীয় ধন‍্যবাদ প্রাপ্য শাস্ত্রী–কোহলি জুটির। কোনও কথা হবে না। ০৮ ডিসেম্বর,২০১৫/এমটি নিউজ২৪/এসবি/এসএস

Follow করুন এমটিনিউজ২৪ গুগল নিউজ, টুইটার , ফেসবুক এবং সাবস্ক্রাইব করুন এমটিনিউজ২৪ ইউটিউব চ্যানেলে