মঙ্গলবার, ১৫ ডিসেম্বর, ২০১৫, ০৯:৫৫:৪৫

ক্রিকেটে আমব্রিনরা কী খুব জরুরি?

ক্রিকেটে আমব্রিনরা কী খুব জরুরি?

দেবব্রত মুখোপাধ্যায়: অত্যন্ত দুঃখের সাথে খবর পড়লাম, আমব্রিন নামে যে ভদ্রমহিলা বিপিএলে নানারকম ব্যাপার স্যাপার উপস্থাপন করছিলেন, তাকে গভর্নিং কাউন্সিল ‘বহিষ্কার’ করেছে। আমার এই দুঃখটা এতোটুকু মেকী নয়। আমি একজন চাকরিজীবি মানুষ। তাই যে কারো চাকরি যাওয়ার মতো খবরগুলো আমাকে পীঢ়া দেয়। মনে হয়, আর কিছু না হোক, তার জীবিকায় আঘাত হলো। আমি জানি না, পেশাগত জীবনে এই ভদ্রমহিলা কী করেন। অনুমান করি, নিশ্চয়ই ভালো কোনো জীবিকা আছে। ফলে প্রার্থনা করি, এই বহিষ্কার তার জন্য বড় কোনো আঘাত হবে না। তার জন্য শুভ কামনা করছি। কিন্তু আমার প্রশ্নটা বিপিএল কমিটিকে। আসলে আমব্রিন বা এরকম যারা উপস্থাপনা করেন, বিপিএলে এদের ভূমিকাটা কী? ক্রিকেটে কেন তারা অপরিহার্য হয়ে উঠলেন? আমি এ বছর বিপিএল শুরু হলে সবচেয়ে আনন্দ পেয়েছিলাম ‘চিয়ার লিডার’ নামে ব্যাপারটা না থাকায়। ফর্মুলা ওয়ানের নকলে আইপিএল, তথা টি-টোয়েন্টিতে এই এক আজব পেশার মানুষদের দেখা যায়-চিয়ার লিডার। আমার অত্যন্ত বেদনা লাগে এই মেয়েদের দেখলে। পোডিয়ামের পেছনে চুপ করে বসে আছে; নিজেরা কথা বলছে। হয়তো ক্রিকেটটা খেয়ালও করছে না। যেই না জোরে শব্দ হলো; ছক্কা বা আউট। লাফ দিয়ে মেয়েগুলোকে পোডিয়ামে উঠে খানিকটা লাফালাফি করতে হবে। আহা রে! কী নিঃসঙ্গ-বেদনাদায়ক একটা কাজ। মেয়ে বলে কারো প্রতি আমার কোনো বিদ্বেষ নেই। কিন্তু মেয়ে বলেই তাদের ডেকে এনে কিছু পয়সার বিনিময়ে এভাবে অপমান করাটা অবশ্যই অন্যায়। বিপিএলকে ধন্যবাদ এবার তারা এই নোংরামির পথে হাটেনি। চিয়ার লিডার ক্রিকেটে কোনো দরকার নেই। কিছুদিন আগে সালাউদ্দিন ভাই বলছিলেন, ‘ফুটবল নিজে এতো বড় বিনোদন যে, শত বছর ধরে যে বাড়তি কোনো অনুসঙ্গ ছাড়া একাই কোটি কোটি কোটি মানুষকে বিনোদিত করে যাচ্ছে।’ ক্রিকেটও কী কথাটা বলতে পারে না? ভিভ রিচার্ডসের পিটুনি দেখার পর যার চিয়ার লিডার লাগবে আনন্দ পেতে; সে অসুস্থ মানুষ। ভিভের কথা বাদ দিন। এই আমাদের রনির একটা উল্লাস, রুম্মনের একটা ছক্কার পর কী আর আমব্রিনদের উপস্থিতি জরুরী? তাদের দিয়ে আলাদা করে কী ‘আবেদন’ তৈরী করতে চাই আমরা? হ্যা, একজন উপস্থাপক, সে ছেলে বা মেয়ে তো টিভি দর্শকদের জন্য থাকতেই পারে। সে যদি ক্রিকেটের কেউ হয়, তাহলে তো ক্ষতি নেই। এই তো আমাদের জাতীয় দলের একটি মেয়েকে রোজ দেখছি ধারাভাষ্য দিতে আসছে। সে ক্রিকেট নিয়ে কথা বলে, মার্জিত আচরণ করে; মোট কথা তাকে ‘বিশেষ আবেদন’ তৈরী করে জায়গা পেতে হচ্ছে না। বাংলাদেশে ক্রিকেট বোঝা মেয়েদেরও নিশ্চয়ই অভাব পড়েনি। আমি এই ফেসবুকেই অনেক মেয়েকে দেখেছি, আমাকে ক্রিকেট-ফুটবল গুলিয়ে খাইয়ে দিতে পারে। দর্শক গ্যালারিতে এরকম একটা মেয়ে গিয়ে যদি প্রশ্নোত্তর করে, খুব অন্যায় হয়? একটা ছেলেও কী ক্যারিশমা দেখাতে পারে না ওখানে গিয়ে? আমি বুঝতে পারি না এই মনস্তত্বের কারণ কী! কেন আমাদের এরকম মেয়েদেরই এখানে এনে বিব্রত করতে হবে, যারা ক্রিকেটের দূর দূরের কোনো খবরও রাখে না? কেন তাদেরকে ‘মুস্তাফিজের ব্যাটিং, নাকি বোলিং ভালো’ টাইপের প্রশ্ন করে সবার হাসির খোরাক হতে হবে? এতে ক্রিকেটের অপমান হয়। মেয়েটার অপমান হয়। আমাদের সংষ্কৃতিরও অপমান হয়। লোকেরা ভাবে, বাংলাদেশীরা এমনই; এরাও বুঝি শরীরের কাঙ্গাল। নইলে ভাবুন, এই আমব্রিনের সম্পর্কে দেখলাম, তিনি কোন একটি ওয়েসবসাইটের মতে সবচেয়ে ‘আবেদনময়ী ক্রিকেট উপস্থাপক’ হয়েছেন। ক্রিকেটকে এই জায়গায় টেনে নামানো কী খুব জরুরী? আমি জানি না, ওনার বিপক্ষে কর্মকর্তাদের অভিযোগ কী। যাই অভিযোগ হোক, আমি চাই, সে ভুল বোঝাবুঝি প্রমাণিত হোক। আমব্রিন সসম্মানে তার পেশাগত, ব্যক্তিগত জীবন অতিবাহিত করুন। ব্যক্তিগতভাবে তাকে নিয়ে কোনোরকম কাঁদাছোড়াছুড়ি না হয়, সেই কামনা করি। সাথে সাথে বিপিএল কর্মকর্তারাও শিক্ষা নিন, সবকিছুর পাশে ‘বিনোদন’ টানতে হয় না। আমি জোর গলায় একটা কথা বলতে পারি, বাংলাদেশের দর্শক যেটুকু ক্রিকেট দেখে ছক্কা-চার-উইকেট-শট-বোলিংয়ের টানেই দেখে। চ্যালেঞ্জ ছুড়ে দিয়ে বলছি, একটা ছেলে-মেয়েকে খুঁজে পাবেন না, যারা এসব বাড়তি বিনোদনের আশায় বিপিএল দেখেছে। তাহলে দেউলিয়া হওয়ার দরকারটা কী।-প্রিয় নিউজ ১৫ ডিসেম্বর, ২০১৫/এমটিনিউজ২৪ডটকম/জুবায়ের রাসেল

Follow করুন এমটিনিউজ২৪ গুগল নিউজ, টুইটার , ফেসবুক এবং সাবস্ক্রাইব করুন এমটিনিউজ২৪ ইউটিউব চ্যানেলে