দেবের কাছে হেরে গেলেন প্রসেনজিৎ
অগ্নি পান্ডে: খোকাবাবুর কাছে হেরে গেলেন বুম্বাদা। বেঙ্গল সেলিব্রিটি লিগের প্রথম ম্যাচেই হারতে হারতে শেষ পর্যন্ত ম্যাচ বের করে নিয়ে গেলেন দেব। উল্টোদিকে প্রসেনজিৎ–যিশুর হাতের মুঠোয় থাকা ম্যাচ বেরিয়ে গেল। ‘সিরিয়াস’ ক্রিকেটই বটে। বিনোদন দুনিয়ার মানুষদের লিগ হলেও সেখানে দেখা গেল কপিবুক কভার ড্রাইভ, স্কোয়্যার ড্রাইভ, স্লোয়ার ডেলিভারি, নিখুঁত বাউন্সার।
কিশোর ভারতী স্টেডিয়ামে দুপুর থেকেই সাজ সাজ রব। সেলিব্রিটি ক্রিকেট লিগ বলে কথা। উদ্যোক্তারা এই টুর্নামেন্টের উদ্বোধন জমানোর চেষ্টার কোনও কসুর করেননি। কে নেই মঞ্চে? স্বয়ং দাদাই হাজির। সঙ্গে কলকাতা শহরের মেয়র শোভন চ্যাটার্জি, রাজ্যের ক্রীড়ামন্ত্রী অরূপ বিশ্বাস, অভিনেতা বিশ্বজিৎ, প্রসেনজিৎ, দেব, যিশু, পরিচালক সুজিত সরকার, আজকাল–চেয়ারম্যান সত্যম রায়চৌধুরি, সাংবাদিক গৌতম ভট্টাচার্য, কৌস্তভ রায়, স্থানীয় পৌর মেয়র অনন্যা ব্যানার্জি। আসার কথা থাকলেও আসতে পারেননি সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায়। সঞ্চালকের ভূমিকায় মির ও কাঞ্চন।
সবাই উদগ্রীব সেলিবিট্রি ক্রিকেট লিগ নিয়ে কী বলেন অর্থাৎ সৌরভ গাঙ্গুলি? প্রদীপ প্রজ্বলনের পর সৌরভ সাধুবাদ দিলেন বেঙ্গল সেলিব্রিটি লিগকে। ‘যিশুর মুখে প্রথম যখন শুনেছিলাম তখন বেশ লেগেছিল। সত্যি, খেলার কোনও বিকল্প নেই। যারা এই প্রতিযোগিতায় খেলবেন, তারা ভাল খেলুন, এটাই চাই। এখানে ভাল খেলতে পারলে সর্বভারতীয় যে সেলিব্রিটি ক্রিকেট লিগ হয় সেখানে বাংলার হয়ে প্রতিনিধিত্ব করার সুযোগ পাওয়া যাবে। না খেললে তো নিজেকে তৈরি করা যায় না। এখানে খেলার সুযোগ আশা করি খেলোয়াড়রা কাজে লাগাবেন। আমার সবরকমের শুভেচ্ছা রইল। সি এ বি যতটা পারে সাহায্য করবে।’ হাততালিতে মুখরিত কিশোর ভারতী স্টেডিয়াম। এই কথাই তো শুনতে চেয়েছিলেন সবাই সি এ বি সভাপতির থেকে। শুধু কথা বলাই নয়, সৌরভ প্রথম ম্যাচে যিশু–দেবের টসেও থাকলেন বাইশ গজে।
কলকাতার মহানাগরের মেয়র শোভন চ্যাটার্জির বক্তব্য হল, ‘মুখ্যমন্ত্রীর ইচ্ছায় এই সেলিব্রিটি লিগ যেন প্রতি বছর হয় সেজন্য কলকাতা পুরসভা কিশোর ভারতী স্টেডিয়ামে সবরকম সাহায্য করবে। এ ধরনের খেলাধুলোর পাশে থাকবে কলকাতা পুরসভা।’ ক্রীড়ামন্ত্রী অরূপ বিশ্বাস বলছেন, ‘সরকার সবরকমের সাহায্য করবে। সৌরভের পরামর্শ নেওয়া হবে। এখানে ভাল করে খেললে সর্বভারতীয় সেলিব্রিটি লিগের জন্য ভাল ক্রিকেটার পাওয়া যাবে। তখন বাইরে গিয়ে অন্য রাজ্যের সেলিব্রিটিদের কাছে হারতে হবে না।’ সবাই সাধুবাদ দিলেন যাদের মস্তিষ্কপ্রসূত এই প্রতিযোগিতা সেই দম্পতি যিশু–নীলাঞ্জনাকে।
এবার আসা যাক রুদ্ধশ্বাস প্রথম ম্যাচে। পুরুলিয়া প্যান্থার্স বনাম মেদিনীপুর মাইটিসের ম্যাচ। প্রসেনজিৎ বনাম দেবের ম্যাচ। বুম্বাদা নিজে মাঠে নামেননি। কিন্তু ডাগআউটে পুরুলিয়া প্যান্থার্সের অন্যতম অংশীদার ‘বন্ধু’ সত্যম রায়চৌধুরিকে নিয়ে দাঁড়িয়ে থেকে সমানে উৎসাহ দিয়ে গেলেন তাঁর সহযোদ্ধাদের। পুরুলিয়া প্যান্থার্সের অন্যতম পৃষ্ঠপোষক আই এফ এ সচিব উৎপল গাঙ্গুলি ছিলেন প্রধান গ্যালারিতে।
টসে জিতে প্রথমে ব্যাট করার সিদ্ধান্ত নেন পুরুলিয়া প্যান্থার্সের অধিনায়ক যিশু সেনগুপ্ত। সঠিক সিদ্ধান্ত অবশ্য ম্যাচের ফল বলছে না। কারণ, যিশুর মাথায় ছিল না ডিসেম্বরের তাড়াতাড়ি হওয়া সন্ধ্যায় শিশির ‘ফ্যাক্টর’ হতে পারে। দ্বিতীয়ার্ধে তার দলের বোলারদের গ্রিপে সমস্যাই হয়েছে। যা খুব স্বাভাবিক। প্রথমে ব্যাট করে নির্ধারিত ২০ ওভারে ১৬৯/৭ তোলে যিশুর দল। উল্লেখযোগ্য রান করলেন জিতু পাল (৫৯) এবং যিশু নিজেই (৩৯)।
দেবের মেদিনীপুর মাইটিসের অভিজিৎ রায় ৩১ রানে ৪টি উইকেট নেন। ১৭০ রানের লক্ষ্য নিয়ে ব্যাট করতে গিয়ে প্রথম ১২ ওভারে রীতিমতো কোণঠাসা ছিল দেবের দল। ১২ ওভারে মাত্র ৫৩ রান ওঠে। সেখান থেকে অবিশ্বাস্য ব্যাটিং করে ম্যাচ জিতিয়ে নিয়ে গেলেন সঞ্জীব মুখার্জি (৫৪ বলে ৮৭) ও অরিন্দম দত্ত (২০ বলে অপরাজিত ৪৮)। পুরুলিয়া প্যান্থার্সের বিবেক ত্রিবেদী ১৬ রানে ৩টি উইকেট পেয়েছেন। পরপর তিনটি ক্যাচ ফেলে যে ম্যাচ জেতা যায় না তা বুঝে গেল যিশুর দল। দেবের দল ম্যাচ জিতল ৫ উইকেটে (১৭১/৫)।
ম্যাচ জিতে শিশুর মতো লাফাতে লাগলেন দেব। ‘উফ্, কী ম্যাচ জিতলাম। বেঙ্গল সেলিব্রিটি লিগের প্রথম ম্যাচ জিতে আমরা এই প্রতিযোগিতার ইতিহাসে চলে গেলাম। তবে একটা সময় মনে হচ্ছিল ম্যাচ বের করতে পারব না বোধহয়। দুরন্ত ব্যাটিং করল আমাদের ছেলেরা।’ বাকরুদ্ধ প্রসেনজিৎ। ‘জেতা ম্যাচ হেরে গেলাম ভাবতেই পারছি না! তিনটি ক্যাচ মিসই ম্যাচ হারিয়ে দিল। সত্যি, ম্যাচে বিপক্ষ কোনওভাবেই ছিল না। কোথা থেকে জিতে গেল!’
পুরুলিয়া প্যান্থার্সের আরেক কর্ণধার সত্যম রায়চৌধুরি হতাশ, ‘জেতা ম্যাচ হেরে গেলাম। ক্যাচ পড়ল কয়েকটা। ওখানেই ম্যাচ থেকে ছিটকে গেলাম।’ অধিনায়ক যিশু সেনগুপ্ত যেন কথা বলার মতো অবস্থায় নেই। ‘কোথা থেকে কী হয়ে গেল! এত ক্যাচ পড়লে ম্যাচ জেতা যায় না। এবার পরপর দুটো ম্যাচ না জিতলে সেমিফাইনালে ওঠা যাবে না।’ সত্যি, দেব জিতলেও কেমন যেন মনখারাপ কিশোর ভারতীর। বুম্বাদার দলের হয়েই যে বেশিরভাগ সমর্থক গলা ফাটাচ্ছিলেন।
২৭ ডিসেম্বর,২০১৫/এমটি নিউজ২৪/এসবি/এসএস