আমিরের প্রত্যাবর্তন নিয়ে দ্বিখণ্ডিত পাকিস্তান
শাহিদ হাশমি : পাকিস্তান ক্রিকেটে বিতর্কের নাম এখন মোহাম্মদ আমির! লর্ডসের ওই টেস্টে স্পট-ফিক্সিং কেলেঙ্কারির পর আন্তর্জাতিক ক্রিকেট থেকে ওর সাময়িক বিদায় জুড়ে কম বিতর্ক হয়নি। আর এ বার যে নির্বাসন কাটিয়ে আন্তর্জাতিক প্রত্যাবর্তনের দোরগোড়ায় দাঁড়িয়ে, এখনও বিতর্ক ওর পিছু ছাড়ছে না।
দেশের সর্বকালের সেরা দুই ক্রিকেট আইকন আমিরের পাশে দাঁড়াচ্ছেন। এ দিনই একটা টক শো-এ ইমরান খান আর ওয়াসিম আকরাম তাদের স্টান্স পরিষ্কার করে দিয়েছেন। ইমরানের মত, আমিরকে এখনই দলে ফিরিয়ে আনা উচিত। তার বরং দুঃখ হচ্ছে আমির-বিরোধী শিবিরের কথা ভেবে। আকরাম আবার বলেছেন, ‘‘এই মুহূর্তে আমিরই দেশের সেরা বোলার।’’
তাই বলে আমিরের সামনে রাস্তা যে গোলাপের পাপড়ি বেছানো, সেটা মোটেও নয়। জাতীয় দলের যে দু’জন ক্রিকেটার ওর বিরুদ্ধে সবচেয়ে সরব ছিল, সেই মোহাম্মদ হাফিজ বা আজহার আলি কিন্তু আমির নিয়ে এখনও সুর নরম করেননি। পাক বোর্ড প্লেয়ারদের দিয়ে একটা মুচলেকা সই করাতে চায় যে, আমিরের দলে ফেরা নিয়ে কারও আপত্তি নেই। তা আজহার বা হাফিজ কেউই ওটা সই করতে চাইছেন না।
এই দু’জনের মধ্যে বেশি সরব ওয়ান ডে অধিনায়ক আজহার আলি। মঙ্গলবার বোর্ড ও প্লেয়ারদের বৈঠক হওয়ার কথা। সূত্রের যা খবর, তাতে ওই বৈঠকে আজহার বোর্ডকে বলে দিতে পারেন, যে টিমে আমিরের মতো কলঙ্কিত ক্রিকেটার রয়েছে, সেই টিমকে আমি নেতৃত্ব দিতে পারব না। এ-ও শোনা যাচ্ছে যে, প্রতিবাদ হিসেবে ওয়ান ডে অধিনায়কত্ব ছেড়ে দিতে পারেন আজহার।
পাক বোর্ড এটা জানে বলে হয়তো শোয়েব মালিককে বিকল্প অধিনায়ক হিসেবে প্রায় তৈরি রেখেছে। এ দিনই বোর্ডের তরফে জানানো হয় যে, দলে আমিরের মেন্টর হবেন শোয়েব। দু’জনে পাকিস্তান সুপার লিগে একই টিমে (করাচি) খেলেন। শোয়েব প্রকাশ্যে বলেওছেন যে, আমির তার ছোট ভাইয়ের মতো।
একটা টিভি টক শো-এ যখন ইমরান আর ওয়াসিম তরুণ পেসারের সমর্থনে একমত, তখন আর একটা টক শো-তেই আমের-প্রসঙ্গে ধুন্ধুমার বেধে গেল অন্য দুই সাবেকের মধ্যে। রামিজ রাজা এবং মোহাম্মদ ইউসুফ, দুই সাবেক অধিনায়কের ঝগড়া ব্যক্তিগত আক্রমণের পর্যায়ে নেমে এলো!
রামিজ বরাবরই আমির-বিরোধী। ইউসুফ আবার আমিরের পক্ষে। তো এই প্রসঙ্গে আলোচনা চলতে চলতে ইউসুফ হঠাৎ বলে বসেন, ‘‘রামিজ কোনও ক্রিকেটারই নয়। ও তো জাতীয় দলে সুপারিশে ঢুকেছিল।’’ যা শুনে ক্ষিপ্ত রামিজ পাল্টা বলেন, ‘‘ইউসুফের মিথ্যায় পাক ক্রিকেটের অনেক ক্ষতি হয়েছে।’’
এত কিছুর পরেও কিন্তু আমিরের প্রত্যাবর্তন স্রেফ সময়ের অপেক্ষা। নতুন বছরে টিম যে নিউজিল্যান্ড যাচ্ছে, সেখানে ও না থাকলেই অবাক হব। কারণ আর কিছুই নয়। পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী এবং পাক বোর্ডের অন্যতম পেট্রন নওয়াজ শরিফ স্বয়ং আমিরকে ফেরানোর পক্ষে। বিদেশের ভিসা নিয়ে আমির সমস্যায় পড়তে পারেন, এমন একটা গুজব ঘুরপাক খাচ্ছিল। কিন্তু সে সব কিছুই হয়নি। নিউজিল্যান্ড অভিবাসন দফতর বলে দিয়েছে, আমিরকে ভিসা দিতে ওদের কোনও আপত্তি নেই।
আর একটা কথা পাকিস্তানের বেশির ভাগ মানুষ কিন্তু মনপ্রাণ দিয়ে আমিরের প্রত্যাবর্তন চায়। উনিশের আমির যে ভুল করেছিল, সেটা তারা মনে রাখতে চায় না। বরং মনে রেখেছে ওর প্রতিভা। যা ক্রিকেট মাঠে নতুন করে দেখতে মুখিয়ে আছে।
২৯ ডিসেম্বর,২০১৫/এমটি নিউজ২৪/এসবি/এসএস