মঙ্গলবার, ২৯ ডিসেম্বর, ২০১৫, ০২:২৯:৫৬

৪২ বছরে এত গোল হজম করেনি বাংলাদেশ!

৪২ বছরে এত গোল হজম করেনি বাংলাদেশ!

স্পোর্টস ডেস্ক: আন্তর্জাতিক ম্যাচ খেলার জন্য বেশ অনুরোধ শোনা যেত বাংলাদেশ ফুটবলারদের। আন্তর্জাতিক ম্যাচ খেলার সেই হাহাকার আর দুঃখটা দূর হলো এই বছরই। কিন্তু আন্তর্জাতিক ফুটবল যুদ্ধ যে কতটা বন্ধুর তা হাড়ে হাড়ে টের পেল মামুনুলরা। স্বাধীনতার পর ২০১৫ সালেই বাংলাদেশ সবচেয়ে বেশি সংখ্যক আন্তর্জাতিক ম্যাচ খেলার সুযোগ পেয়েছে। এটি অত্যান্ত সুখের খবর হলেও দুঃখের বিষয় হচ্ছে বছরটিতেআন্তর্জাতিক অঙ্গনে সবচেয়ে বেশি গোল হজমের রেকর্ড গড়েছে বাংলাদেশ। বঙ্গবন্ধু গোল্ডকাপ আন্তর্জাতিক ফুটবল টুর্নামেন্ট মধ্যদিয়ে বছরের শুরুটা করেছিল বাংলাদেশ ফুটবল দল । বাহরাইন, থাইল্যান্ড, মালয়েশিয়া, শ্রীলঙ্কা, সিঙ্গাপুর ও বাংলাদেশকে নিয়ে এই টুর্নামেন্ট আয়োজিত হলেও এতে বাংলাদেশ আর শ্রীলঙ্কা ছাড়া কেউই জাতীয় দল পাঠায়নি। সে কারণেই প্রতিযোগিতায় কেবল বাংলাদেশ-শ্রীলঙ্কা ম্যাচটিই ফিফা অনুমোদিত আন্তর্জাতিক ম্যাচ হিসেবে স্বীকৃত ছিল। শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে ম্যাচ দিয়ে শুরু; এর পাশাপাশি মালয়েশিয়া, সিঙ্গাপুর, আফগানিস্তান ও নেপালের বিপক্ষে চারটি প্রীতি ম্যাচসহ এ বছর বিশ্বকাপ ও এশিয়ান কাপ বাছাইপর্বে অস্ট্রেলিয়া, কিরগিজস্তান, তাজিকিস্তান ও জর্ডানের বিপক্ষে ৭টি ম্যাচে মাঠে নেমেছে বাংলাদেশ। বছরের শেষে সাফ চ্যাম্পিয়নশিপে আফগানিস্তান, মালদ্বীপ ও ভুটানের বিপক্ষে ম্যাচ মিলিয়ে ২০১৫ সালে বাংলাদেশের আন্তর্জাতিক ম্যাচের সংখ্যা-১৫। ২০১৫ বছরটিতে ১৫টি আন্তর্জাতিক ম্যাচ খেলে ৩৪টি গোল হজম করতে হয়েছে বাংলাদেশকে।সুতারং ম্যাচ প্রতি গোলের হার—২.২৬। ১৯৭৩ সালে প্রথম আন্তর্জাতিক ম্যাচে মাঠে নামা বাংলাদেশ এক বছরে এরচেয়ে বেশি গোল আর কখনোই হজম করেনি। ১৯৭৫ সালে ৭ ম্যাচে ৩১ আর ১৯৯৩ সালে ১১ ম্যাচে ৩০ গোল হজমের রেকর্ড দুটো এবার অতিক্রমই করে গেছেন মামুনুল-জামাল ভূঁইয়ারা। তবে একটি বিষয়ে মামুনুল-বাহিনী স্বস্তি পেতে পারেন। গোল খাওয়ার সংখ্যাটা সবচেয়ে বেশি হলেও ম্যাচ প্রতি গোলের হিসাবে এ বছর বেশ কয়েকটি বছরের তুলনায় পিছিয়ে আছে। এই হিসাবে সবার ওপরে আছে ১৯৭৫। সে বছর ৭ ম্যাচে ৪.৪ হারে বাংলাদেশ হজম করেছিল ৩১ টি। ম্যাচ প্রতি গোল হজমের দিক দিয়ে ১৯৭৯ সালের অবস্থান কিন্তু ১৯৭৫ সালের পরপরই। সে বছর ৮টি আন্তর্জাতিক ম্যাচে বাংলাদেশ গোল খেয়েছিল ২৬ টি। ম্যাচ প্রতি ৩.২৫। ১৯৭৯ সালেই দক্ষিণ কোরিয়ার বিপক্ষে এশিয়ান কাপ ফুটবলে ৯-০ গোলে হারের সেই দুঃস্বপ্নের ইতিহাসটা এখনো পিছু তাড়া করছে বাংলাদেশকে। ওটাই আন্তর্জাতিক ফুটবলে বাংলাদেশের সর্বোচ্চ ব্যবধানে হারের রেকর্ড। ম্যাচ প্রতি গোলের হিসাবে ২.৭ অংকটি বাংলাদেশের বেশ ‘প্রিয়’। ২.৭ হারে গোল খাওয়ার ইতিহাস রয়েছে বাংলাদেশের বেশ কয়েকটি বছরই। ১৯৯২ সালে মাত্র ২টি আন্তর্জাতিক ম্যাচ খেলে ৭ গোল খেয়েছিল বাংলাদেশ। ম্যাচ প্রতি গোল খাওয়ার হিসাবে (২.৭) বিরানব্বই সালকে ওপরের দিকেই রাখতে হচ্ছে। ১৯৯৩ সালে ১১ ম্যাচে ৩০ গোল হজম করেছিল বাংলাদেশ, ২. ৭ হারেই। এই তালিকায় আছে ১৯৮২ সালও। বিরাশিতে ম্যাচ প্রতি বাংলাদেশের গোল খাওয়ার হার ছিল ২.৭। ৭ ম্যাচে ১৯ গোল। নিকট অতীতে, ২০০৬ সালে ১০টি আন্তর্জাতিক ম্যাচে বাংলাদেশের জালে বল গিয়েছিল ২৭ টি। ২.৭ হারে গোল খাওয়ার সেই হিসাবের তুলনায় ২০১৫ সালে ১৫ ম্যাচে ২.২৬ হারে গোল খাওয়াকে বাংলাদেশের ফুটবলের মান-বিচারে অনেকের মতেই ‘ঠিকই আছে।’ বেশি সংখ্যক আন্তর্জাতিক ম্যাচে খেলার হিসাব ধর্তব্যে নিলে এখনো পর্যন্ত ১৯৮৫ ও ১৯৮৯ সাল হচ্ছে এদেশের ফুটবল ইতিহাসের দুটি শ্রেষ্ঠতম বছর। ১৯৮৫ সালে ১২ ম্যাচে বাংলাদেশের জালে গিয়েছিল ১৬ গোল, ম্যাচ প্রতি ১.৩; আর ১৯৮৯ সালে ৯ ম্যাচে বাংলাদেশের বিপক্ষে গোল হয়েছিল মাত্র ৮ টি, গড়—১.১২। এই হিসাবে ১৯৯৯ আর ২০১১ সালও মন্দ নয়। ১৯৯৯ সালে ১২ ম্যাচে বাংলাদেশের গোলরক্ষক ১৭ বার পরাভূত হয়েছেন, ১. ৪১ গড়ে। ২০১১ সালে ১০ ম্যাচে বাংলাদেশ ১৫ গোল হজম করে ১.২৫ গড়ে। দেশের গোল খাওয়ার ইতিহাস পড়তে কারওরই ভালো লাগার কথা নয়। কিন্তু আমরা সবাই নিরুপায়। ফুটবলের বিজয়গাথা লেখার সুযোগ বাংলাদেশের ফুটবলার ও ফুটবল-সংশ্লিষ্টরা দিচ্ছেন কই! সূত্র : প্রথম আলো ২৯ ডিসেম্বর,২০১৫/এমটিনিউজ২৪/আরিফুর রাজু/এআর

Follow করুন এমটিনিউজ২৪ গুগল নিউজ, টুইটার , ফেসবুক এবং সাবস্ক্রাইব করুন এমটিনিউজ২৪ ইউটিউব চ্যানেলে