মঙ্গলবার, ২৯ ডিসেম্বর, ২০১৫, ০৫:১৩:৫৬

৩৭ রকমের মন খারাপ আর সাড়ে ৭৩ রকমের ধান্দাবাজি

৩৭ রকমের মন খারাপ আর সাড়ে ৭৩ রকমের ধান্দাবাজি

স্পোর্টস ডেস্ক: কতরকম ভাবেই তো ঘুরে দাঁড়ায় মানুষ, যাকে বলে কামব্যাক৷ কাগজের রিপোর্টারও সেটা করতে চাইছে, কিন্তু রাস্তা খুঁজে পাচ্ছে না৷ পকেটে স্টোরি নেই, বাংলায় যেটা 'গোঁ' আর ইংরেজিতে যেটা 'গো', দুটোর কোনওটাই নেই৷ ভিতর থেকে পাঁজরে কেউ ধাক্কা দিচ্ছে না, নিজেকে ঠান্ডা চাউমিন মনে হচ্ছে৷ রেফারিদের ক্লাবের তাঁবু ছাড়িয়ে ময়দান মার্কেট ধরে যেতে যেতে মুড়িওয়ালার কাছ থেকে ঠোঙায় ভরে ছোলাভাজা কিনছে রিপোর্টার৷ শীতের সন্ধ্যায় শহরে কত রকমের সব রঙচঙে ছবি৷ দোকানে ঝুলছে বিভিন্ন সব ক্লাবের বাহারি জার্সি৷ কোনটা বার্সেলোনো, কোনওটা ম্যাঞ্চেস্টার ইউনাইটেড, কোনটা রিয়াল মাদ্রিদ৷ কোনটার পিছনে নম্বর সহ লেখা মেসি৷ কোনটার পিছনে নেইমার৷ কত লোক কিনছে, দরদাম করছে৷ অথচ রিপোর্টারকে তাড়া করছে মন খারাপ৷ আবার শক্তির কবিতা আসছে--'এত কালো মেখেছি দু'হাতে..... কখনও তোমার করে তোমাকে ভাবিনি৷' ফুটবল যে লোকগুলো চালায়, যে লোকগুলো ফিফার মাথায় বসে আছে, তাদের ফর্সা হাতগুলো সত্যিই কালোয় মাখামাখি৷ এতকাল ধরে কেউ ফুটবলের মতো করে ফুটবলকে ভাবেনি! লোকগুলো হাত ধোওয়ার চেষ্টা করছে, কিন্তু দাগ যাচ্ছে না৷ শেপ ব্লাটার আর মিশেল প্লাতিনি৷ বিশ্ব ফুটবলের দুই প্রবল ক্ষমতাধর মস্তিষ্ক৷ ব্লাটার বড় ফুটবলার না হতে পারেন, কিন্তু প্লাতিনি? বিরাশির বিশ্বকাপে তিনিই তো ফ্রান্সের হয়ে মাঠে আশ্চর্য সব ছবি এঁকেছিলেন, রাত জেগে জার্মানি-ফ্রান্স বিশ্বকাপ সেমিফাইনাল দেখেছিল রিপোর্টার৷ এই প্লাতিনিই তো ১৯৮৪ সালে জিতেছিলেন ইউরো৷ সেই লোকটা চোর? লক্ষ লক্ষ ডলারের বিনিময়ে খেলাটাকে নিয়ে ছিনিমিনি খেলেছেন? বিশ্বের জনপ্রিয়তম খেলা, তার সর্বময় কর্তারা আট বছরের জন্য নির্বাসনে! বড় বড় হেডলাইন, প্রথম পাতায়৷ ক্রিকেটেও তো সেই এক ছবি৷ যতক্ষণ না ঘাড়ধাক্কা দেওয়া হচ্ছে, ততক্ষণ পর্যন্ত সুপ্রিম কোর্টে লড়েই যাচ্ছেন ভারতের সিমেন্ট কোম্পানির মালিক তামিল ব্রাক্ষ্মণ শ্রীনিবাসন৷ জোর করে থেকে যাচ্ছেন আইসিসি চেয়ারম্যান, তৈরি করছেন আইসিসির লভ্যাংশ ভাগ করে দেওয়ার নতুন মডেল৷ কী সেই মডেল? বুক ফুলিয়ে ক্রিকেট দুনিয়ার সামনে ঘোষণা---আমার টাকা, আমার স্পনসর, তাই লাভের গুড়ও আমার বেশি৷ আমার সঙ্গে দুই শ্বেতাঙ্গ দেশ, ইংল্যান্ড আর অস্ট্রেলিয়া৷ বিগ থ্রি৷ বাকিরা দুধুভাতু৷ শ্রীনিবাসন গিয়ে শশাঙ্ক মনোহর বসলেন আইসিসি-র চেয়ারম্যান পদে, বলে দিলেন 'বিগ থ্রি'-ই লাভের ৬০ শতাংশ পাবে, নৈতিক ভাবে এটা সমর্থন করেন না৷ বললেন, স্বার্থের সংঘাত থাকলে সরতে হবে পদ থেকে৷ ২৫ লক্ষ টাকার বেশি লেনদেন হলে বোর্ডের ওয়েবসাইটে সব দেওয়া থাকবে৷ এক কথায় স্বচ্ছতার নীতি৷ কিন্ত্ত যে-ই এল টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ, ঝুলি থেকে বেরিয়ে পড়ল বেড়াল! তাঁর নাগপুর আর সচিব অনুরাগ ঠাকুরের ধর্মশালাই ভাগ করে নিয়েছে টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের সিংহভাগ ম্যাচ৷ এখানেও যে যায় লঙ্কায়, সে-ই হয় রাবণ৷ ক্রীড়াসূচিতে স্বচ্ছতা? ধুস, সে নিশ্চিন্তে আরামকেদারায় বসে দু'পা নাচাচ্ছে! কোথায় স্বচ্ছতা? রিপোর্টার দেখছে, বোর্ড প্রেসিডেন্টের কেন্দ্রেই বিশ্বের এক নম্বর টিমকে হারানোর জন্য তৈরি হচ্ছে 'খোঁয়াড়', আড়াই দিনে টেস্ট শেষ৷ আইসিসি-র ম্যাচ রেফারির বিরূপ রিপোর্ট৷ কিন্ত্ত সঙ্গে সঙ্গে আসছে ভারতীয় বোর্ডের দাদাগিরি৷ উইকেটের সব দোষ খালাস হয়ে যাচ্ছে, একটা সতর্কবার্তাতেই সব মিটে যাচ্ছে৷ তার পর দিল্লিতে সিরিজ জিতে উঠে ক্যাপ্টেন সিরিজ জয়ের কৃতিত্ব না দেওয়ার জন্য সব দোষ চাপিয়ে দিচ্ছে মিডিয়ার উপর৷ বলছে, 'যারা দেশের হয়ে খেলেনি, তাদের ক্রিকেটারদের নিয়ে লেখার কোনও অধিকার আছে বলে মনে হয় না৷' বাহ, অকাট্য যুক্তি, ভাবছে রিপোর্টার! আরও কালো? সুপ্রিম কোর্টের রায়ে অবজার্ভার ডেকে খোদ রাজধানীতে আয়োজিত হচ্ছে টেস্ট ম্যাচ! খেলার পাতা ছাপিয়ে প্রথম পাতায় শিরোনামে উঠে আসছে ডিডিসিএ, অভিযোগ করছেন তিরাশির বিশ্বকাপজয়ী টিমের এক সদস্য৷ আর যাঁর বিরুদ্ধে অভিযোগ, তিনি আবার দেশের অর্থমন্ত্রী৷ টুইটারে সহবাগ-বিরাট-গম্ভীররা সব তাঁর সমর্থনে বিবৃতি দিয়ে যাচ্ছেন আর রোজ খেলার পাতা ভরছে কারচুপি আর ভূইফোঁড় সংস্থাদের কীর্তিকলাপ দিয়ে৷ এ ভাবেই আরও একটা বছর পেরিয়ে যাচ্ছে রিপোর্টার আর পিছন ফিরে তাকালেই চোখ টানছে বাইশ রকমের হাহুতাশ, সাঁইত্রিশ রকমের মন খারাপ আর সাড়ে তিয়াত্তর রকমের ধান্দাবাজি৷ সঙ্গে পারস্পরিক 'মধুর' পিঠ চাপড়ানি৷ তুমি ভালো হলেই আমি ভালো৷ অমুককে চটানো যাবে না, তমুকের বিরুদ্ধে কোনও কথা নয়৷ তুমি আমাকে 'লাইক' দাও, আমিও তোমাকে 'লাইক' দেব৷ এসবের মধ্যেই ধর্মতলার রাস্তায় একা একা হাঁটতে হাঁটতে নতুন বছরের রেজোলিউশন খুঁজছে রিপোর্টার৷ মাথা ঝিমঝিম করছে তার৷ চোখের সামনে ঝাপসা হয়ে ভেসে থাকছে নানা রকমের সব মুখ ও মুখোশ৷ কোনওটাকে তার লিওনেল মেসি মনে হচ্ছে, কোনওটাকে বিরাট কোহলি! কিন্ত্ত কাউকে নিয়েই সে নিশ্চিত হতে পারছে৷ অফিসে ফেরার জন্য আর একটা অটো ছেড়ে দিচ্ছে রিপোর্টার৷ তারপর? হাঁটছে৷ ভাবছে৷ ভাবা প্র্যাক্টিস করছে৷ তাকে ডাকছে ইউরো, ডাকছে বিশ্বকাপ, ডাকছে অলিম্পিক৷ অটোর খোঁজ করছে সে৷ ভাবছে, ঘুরে দাঁড়ানোই ভালো!-এই সময় ২৯ ডিসেম্বর, ২০১৫/এমটিনিউজ২৪ডটকম/জুবায়ের রাসেল

Follow করুন এমটিনিউজ২৪ গুগল নিউজ, টুইটার , ফেসবুক এবং সাবস্ক্রাইব করুন এমটিনিউজ২৪ ইউটিউব চ্যানেলে