রবিবার, ২৭ ডিসেম্বর, ২০২০, ০৮:৫৮:৫০

বাবা বাসচালক, মা আচার বিক্রেতা হয়ে সংসার চালাতেন, ছেলে জাতীয় ক্রিকেট দলে...

বাবা বাসচালক, মা আচার বিক্রেতা হয়ে সংসার চালাতেন, ছেলে জাতীয় ক্রিকেট দলে...

স্পোর্টস ডেস্ক : বাসচালক আব্দুল খাদেরের ইচ্ছে ছিল, তার চার ছেলের এক জন অন্তত জাতীয় ক্রিকেট দলে খেলবে। বাবার স্বপ্ন পূর্ণ করেছিলেন ওয়াসিম জাফর। তবে আন্তর্জাতিক ময়দানের তুলনায় তার কৃতিত্ব অনেক বেশি ঘরোয়া ক্রিকেটে।

১৯৭৮ সালের ১৬ ফেব্রুয়ারি জন্ম হয় জাফরের। তার দাদা ছিলেন সম্ভাবনাময় ক্রিকেটার। কিন্তু আর্থিক অনটনের কারণে তার ক্যারিয়ার থেমে যায় অকালেই। দাদার ক্রিকেট খেলা বন্ধ হয়ে গেলেও জাফর যাতে নিজেকে চালিয়ে নিয়ে যেতে পারেন, সে দিকে নজর ছিল তার পরিবারের। সকলের আত্মত্যাগ ও স্বপ্নের ফলশ্রুতি ছিল জাতীয় দলে জাফরের সুযোগ পাওয়া।

নিম্নবিত্ত পরিবার থেকে জাতীয় দলের দরজা পর্যন্ত পৌঁছানোর রাস্তা খুব একটা মসৃণ ছিল না। জাফরের ক্রিকেট প্রশিক্ষণ ধরে রাখতে বিভিন্ন পেশায় দেখা গিয়েছে তার পরিবারের সদস্যদের। তার বাবা ছিলেন সংসারের একমাত্র উপার্জনক্ষম। কিন্তু তার উপার্জনে সংসারে অভাব দূর হচ্ছিল না। তাই বাধ্য হয়ে জাফরের মা আচার তৈরি করতে শুরু করেন।

স‌ংসারের যাবতীয় কাজ করে সারা দিন ধরে তিনি ৭-৮ রকমের আচার বানাতেন। তার পর জাফরের এক ভাই ঘুরে ঘুরে সেই আচার বিক্রি করতেন। তার ক্যারিয়ারের জন্য পরিবারের এই স্বার্থত্যাগকে প্রতি পদে কুর্নিশ করেছেন জাফর। জাফর নিজেও পরিশ্রম কম করেননি। প্রতিদিন ভোর ৬টার লোকাল ট্রেন ধরে তিনি ক্রিকেট অনুশীলনে যেতে। অনুশীলন সেরে স্কুল। আবার স্কুলের পরে ক্রিকেট। এটাই ছিল তার সারা দিনের রুটিন।

১৮ বছর বয়সে প্রথম রঞ্জি খেলেন জাফর। প্রথম থেকেই ঘরোয়া ক্রিকেটে তার পারফরম্যান্স চোখ ধাঁধানো। বর্তমানে তিনিই রঞ্জি ক্রিকেটে সর্বোচ্চ রান সংগ্রহকারী ব্যাটসম্যান। তার আগে এই রেকর্ড ছিল অমল মুজুমদারের। ২০১৮ সালের নভেম্বরে প্রথম ব্যাটসম্যান হিসেবে তিনি রঞ্জি ক্রিকেটে ১১ হাজার রানের মালিক হন।

রঞ্জি টুর্নামেন্টে সবথেকে বেশি ম্যাচ খেলার রেকর্ডও তার। মোট ১৪৬টি ম্যাচে তিনি দলের প্রতিনিধিত্ব করেছেন। তার পরেই এই জায়গা মধ্যপ্রদেশের দেবেন্দ্র বুন্দেলার। তিনি খেলেছেন ১৪৫ ম্যাচে। রঞ্জিতে মুম্বইয়ের পাশাপাশি জাফর খেলেছেন বিদর্ভের হয়েও। ২০১৮ সালে তার বাউন্ডারিতেই দিল্লিকে হারিয়ে ট্রফি জিতে বিদর্ভ।

মোট ১০ বার রঞ্জিজয়ী দলের সদস্য ছিলেন তিনি। ৮ বার মুম্বইয়ের হয়ে এবং ২ বার বিদর্ভের হয়ে। রঞ্জিতে সর্বোচ্চ শতরানের কৃতিত্বও তার। জাফর ৪০টি শতরান করেছেন এই টুর্নামেন্টে। 

কব্জির মোচড়ে তার ব্যাটিংয়ের ধরণের সঙ্গে অনেকেই আজহারউদ্দিনের মিল খুঁজে পান। আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে তার অভিষেক ২০০০ সালে। প্রতিপক্ষ ছিল দক্ষিণ আফ্রিকা। দেশের মাটিতে দক্ষিণ আফ্রিকার বিরুদ্ধে তার সিরিজ খুব একটা সুখকর ছিল না। ক্যারিয়ারের সেরা ফর্মে থাকা শন পোলক এবং অ্যালান ডোনাল্ডের কাছে নাস্তানাবুদ হতে হয়েছিল তাকে। প্রথম ইনিংসে আউট হয়েছিলেন ০ রানে। সিরিজে ৪ ইনিংসে করতে পেরেছিলেন মাত্র ৪৬ রান।

৫ বছর পরে ২০০৬ সালে দক্ষিণ আফ্রিকার বিরুদ্ধেই ওয়ান ডে ম্যাচে অভিষেক হয় তার। তবে সীমিত ওভারের ম্যাচে তার ফর্ম কোনও দিনই ভাল ছিল না। খেলতেন টেস্ট দলেই। তাও অনিয়মিত। ক্যারিয়ারের ৩১ টেস্টে তিনি মোট ১৯৪৪ রান করেছেন। গড় ৩৪.১০। সর্বোচ্চ ২১২। ওয়ানডে ম্যাচ খেলেছেন মাত্র ২টি। মোট রান করেছেন ১০। ২০০৮ এবং ২০০৯ আইপিএল এ তিনি খেলেছেন রয়্যাল চ্যালেঞ্জার্স বেঙ্গালুরুর হয়ে।

আইপিএল এর প্রথম ম্যাচে কেকেআর এর বিরুদ্ধে ১৬ বলে ৬ রান করেছিলেন। সেই ম্যাচ আইপিএল ইতিহাসে বিখ্যাত হয়ে আছে ম্যাকালামের ৭৩ বলে অপরাজিত ১৫৮ রানের সুবাদে। ২০০৯ সালের পরে তাকে আর আইপিএল খেলতে দেখা যায়নি।

চলতি বছরের মার্চে তিনি সব ধরনের ক্রিকেট থেকে অবসর গ্রহণ করেন। ইতোমধ্যেই তিনি বাংলাদেশের জাতীয় দলের এবং কিংস ইলেভেন পঞ্জাবের ব্যাটিং কোচ হয়ে প্রশিক্ষণ দিয়েছেন। এ বছরের জুনে উত্তরাখণ্ড দলের প্রধান কোচ হিসেবে নিযুক্ত হয়েছেন।

Follow করুন এমটিনিউজ২৪ গুগল নিউজ, টুইটার , ফেসবুক এবং সাবস্ক্রাইব করুন এমটিনিউজ২৪ ইউটিউব চ্যানেলে