শনিবার, ২৩ অক্টোবর, ২০২১, ১২:২১:৫৩

কী ব্যাট, কী বোলিং, তার হাতে যে যাদু ছিল!

কী ব্যাট, কী বোলিং, তার হাতে যে যাদু ছিল!

যে নামটি শুনলে সেই সুখকর অতীত স্মৃতিময় ক্রিকেটের দিনগুলির ছবি চোখের সামনে ভেসে উঠে। এক কিংবদন্তিতুল্য ক্রিকেটার যার অবদান বাংলাদেশের ক্রিকেটে ভুলে যাওয়ার মতো নয়। কী ব্যাট, কী বোলিং, তার হাতে যে যাদু ছিল! বাংলাদেশ ক্রিকেটের অনেক ‘প্রথমের’ সাক্ষী ও অর্জনকারী এই ক্রিকেটার। 

১৯৭০ সালে ৫ সেপ্টেম্বর, ঢাকায় জন্মগ্রহণ করা মোহাম্মদ রফিক ব্যাট ও বল হাতে উভয় বিভাগেই একজন দুর্দান্ত ক্রিকেটার ছিলেন। যুদ্ধের দামামার মধ্যে বড় হওয়া সেই রফিক বাংলাদেশ ক্রিকেটকে দিয়েছেন অনেক কিছু। রফিকের সময়টা বাংলাদেশ দলের অবস্থান ভালো পর্যায়ে ছিল না। বাংলাদেশ ম্যাচও খুব বেশি খেলতো না; সেই পর্যায়ে থেকেই দুর্দান্ত একটি ক্যারিয়ার গড়েছিলেন তিনি। রফিকের ক্যারিয়ারের সেরা ও স্মরণীয় কিছু মুহূর্ত দেখে নেওয়া যাক :

মিডিয়াম পেসার থেকে স্পিনার হওয়া : রফিক ছিলেন একজন মিতব্যয়ী স্পিনার। বাঁহাতি স্পিন ও আক্রমণাত্মক ব্যাটিংয়ের জন্যই তিনি পরিচিত। তবে শুরুতেই কিন্তু তিনি স্পিনার ছিলেন না। রফিক ক্রিকেট ক্যারিয়ারের শুরুতে মিডিয়াম পেস বোলিং করতেন। পেসার থেকে স্পিনার হয়ে যাওয়ার ক্ষেত্রে অবদান হলো সাবেক পাকিস্তানি ক্রিকেটার ওয়াসিম হায়দারের। তিনিই রফিককে স্পিন বল করার পরামর্শ দিয়েছিলেন। তারপর তো বাঁহাতি স্পিনেই ইতিহাস গড়লেন রফিক। প্রথম বাংলাদেশি বোলার হিসাবে টেস্ট ক্রিকেটে ১০০টি উইকেট শিকারের রেকর্ড গড়েন তিনি। প্রথম বাংলাদেশি অলরাউন্ডার হিসাবে টেস্ট ও ওয়ানডে ক্রিকেটে ১০০ উইকেট শিকার ও ১ হাজার রান রেকর্ডও রফিকের।

আইসিসি চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফির নায়ক : ১৯৯৭ সালে বাংলাদেশ আইসিসি চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফি জয় করতে না পারলে হয়তো অনেক যদি কিন্তু দিয়ে বাংলাদেশের ক্রিকেটকে হিসাব করতে হতো। বাংলাদেশ ক্রিকেটের সেই স্মরণীয় টুর্নামেন্টের অন্যতম নায়ক হলেন রফিক। সেই চ্যাপম্পিয়ন্স ট্রফিতে মাত্র ১০.৬৮ গড়ে ১৯টি উইকেট শিকার করেছিলেন এই বাঁহাতি স্পিনার। ব্যাট হাতেও অবদান রেখেছিলেন তিনি। ফাইনাল ম্যাচ জয়ের দিনে ১৫ বলে ২৬ রানের মহাগুরুত্বপূর্ণ ইনিংস এসেছিল তার ব্যাট থেকে।

বাংলাদেশের প্রথম ওয়ানডে জয়ে অলরাউন্ড ভূমিকা : ১৯৯৮ সালে কেনিয়ার বিপক্ষে ম্যাচ জিতে প্রথম ওডিআই জয়ের স্বাদ পায় বাংলাদেশ দল। সেই ম্যাচে অলরাউন্ড পারফরম্যান্স করেন রফিক। ইনিংস উদ্বোধন করতে নেমেছিলেন তিনি। ৮৭ বলে ৭৭ রানের এক দুর্দান্ত ইনিংস খেলে মাঠ ছাড়েন। ২৩৭ রানের লক্ষ্যে ব্যাটিং করতে নেমে আতহার আলি খানের সাথে উদ্বোধনী জুটিতে যোগ করেছিলেন ১৩৬ রান। বল হাতেও ভূমিকা ছিল তার। শিকার করেছিলেন দুইটি উইকেট।

২০০৭ বিশ্বকাপে ভারতের বিপক্ষে দুর্দান্ত বোলিং : ভারতের বিপক্ষে বাংলাদেশি ক্রিকেটারদের একটু বেশিই যেন উজ্জীবিত দেখা যায়। ২০০৭ সালের বিশ্বকাপে বাংলাদেশের কাছে হার ভারতীয় দলে সবচেয়ে বড় ক্ষতের একটি। এই ম্যাচেও দারুণ বোলিং করেছিলেন রফিক। ১০ ওভারে ৩৫ রানের বিনিময়ে শিকার করেছিলেন তিনটি উইকেট। সৌরভ গাঙ্গুলী, রাহুল দ্রাবিড় ও মহেন্দ্র সিং ধোনি- ভারতের অন্যতম সেরা তিন ব্যাটসম্যানকে সেদিন সাজঘরে পাঠিয়েছিলেন রফিক। বাংলাদেশের কাছে হেরে সেইবার টুর্নামেন্ট থেকেই ছিটকে গিয়েছিল ভারত।

ওয়ানডে ক্রিকেটে রফিক : রঙিন পোশাকে ১২৫টি ম্যাচ খেলেছেন রফিক। বল হাতে শিকার করেছেন ১২৫টি উইকেট। ব্যাট হাতে আছে ১১৯১ রান। প্রথম বাংলাদেশি ক্রিকেটার হিসাবে ওয়ানডে ম্যাচে এক হাজার রানের সাথে ১০০টি উইকেট শিকারের রেকর্ড তার দখলেই।

 টেস্ট ক্রিকেটে রফিক : রফিকের টেস্ট পরিসংখ্যানের দিকে তাকালে দেখা যায় ৩৩ ম্যাচে ১০০ উইকেট ও ১০৫৯ রান। শুধু পরিসংখ্যান দিয়ে বিচার করে অবদান বের করা যাবে না। ওডিআইয়ের মতো বাংলাদেশের প্রথম টেস্ট জয়েও অলরাউন্ড পারফর্ম এসেছিল রফিকের কাছে থেকে। ব্যাট ৬৯ রান ও বল হাতে পাঁচটি উইকেট শিকার করেছিলেন তিনি। ৩৩ ম্যাচের টেস্ট ক্যারিয়ারে মোট সাতবার ইনিংসে পাঁচ উইকেট শিকার করেছেন রফিক।

২০০৬ সালে অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে টেস্ট ম্যাচে অল্পের জন্য ১০ উইকেট পাওয়া হয়নি রফিকের। প্রথম পাঁচ উইকেট শিকারের পরে দ্বিতীয় ইনিংসে চারটি উইকেট শিকার করেন এই বাঁহাতি স্পিনার। অবসরের আগে প্রথম বাংলাদেশি ক্রিকেটার হিসাবে টেস্ট ক্রিকেটে ১০০টি উইকেট শিকারের রেকর্ড গড়ে যান তিনি। সেই সাথে ব্যাট হাতেও এক হাজার রান আছে তার নামের পাশে।

২০০৮ সালের ৭ ফেব্রুয়ারি আন্তর্জাতিক ক্রিকেট থেকে অবসর গ্রহণ করেন রফিক। তারপরেও দীর্ঘদিন প্রথম শ্রেণি ও লিস্ট এ ক্রিকেট খেলে গিয়েছেন তিনি। বাংলাদেশ ক্রিকেটকে রফিক অনেক কিছুই দিয়েছেন। আরও অনেক কিছুই হয়তো তার দেওয়ার ছিল এই লাল সবুজের ক্রিকেটকে। নানান প্রতিবন্ধকতায় তা সম্ভব হয়নি। সেইজন্য আফসোসও প্রকাশ করেছেন তিনি। তবে ঘরোয়া ক্রিকেটে বিভিন্ন সময়ে কোচের ভূমিকা পালন করেছেন রফিক। এছাড়া জাতীয় দলের উত্তরসূরিদের ব্যক্তিগতভাবে পরামর্শ ও কৌশল শিখিয়েও সহায়তা করতে দেখা গিয়েছে তাকে।

সর্বশেষ বাংলাদেশের রফিক, ষোল কোটি মানুষের রফিক, ভাল থাকুন আপনি, দীর্ঘ জীবন লাভ করুন এমন প্রত্যাশায় এমটিনিউজ২৪.কম পরিবার।

Follow করুন এমটিনিউজ২৪ গুগল নিউজ, টুইটার , ফেসবুক এবং সাবস্ক্রাইব করুন এমটিনিউজ২৪ ইউটিউব চ্যানেলে