শুক্রবার, ১৫ জানুয়ারী, ২০১৬, ০৬:১৮:১৯

জয় দিয়ে টাইগারদের বছর শুরু

জয় দিয়ে টাইগারদের বছর শুরু

স্পোর্টস ডেস্ক: জয় দিয়েই বছর  শুরু করল বাংলাদেশ। চার ম্যাচ সিরিজের প্রথমটিতে জিম্বাবুয়েকে ৪ উইকেটে হারিয়েছে মাশরাফি বিন মুর্তজার দল। শুক্রবার খুলনার শেখ আবু নাসের স্টেডিয়ামে হ্যামিল্টন মাসাকাদজার ফিফটিতে নির্ধারিত ২০ ওভারে ৭ উইকেটে ১৬৩ রান করে জিম্বাবুয়ে। জবাবে সাব্বিরের ৪৬, মুশফিকের ২৬ ও সাকিবের অপরাজিত ২০ রানের সুবাদে ৪ উইকেট ও ৮ বল হাতে রেখেই লক্ষ্যে পৌঁছে যায় বাংলাদেশ।

 

টি-টোয়েন্টিতে এটা বাংলাদেশের দ্বিতীয় সর্বোচ্চ রান তাড়া করে জয়ের রেকর্ড। এর আগে জোহানেসবার্গে ২০০৭ বিশ্বকাপে ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে ১৬৫ রান তাড়া করে জিতেছিল টাইগাররা।  

 

খুলনায় জিম্বাবুয়ের দেওয়া ১৬৪ রানের লক্ষ্যে খেলতে নেমে শুরুটা ভালোই হয় বাংলাদেশের। তামিম ইকবাল ও সৌম্য সরকার মিলে উদ্বোধনী জুটিতে ৩ ওভারে ২৬ রান তোলেন। তবে পরের ওভারে ভুল বোঝাবুঝির কারণে রানআউটে কাটা পড়েন সৌম্য। লুক জংউইয়ের বল শর্ট ফাইন লেগে শট খেলেছিলেন তামিম। তবে দুর্দান্ত ফিল্ডিংয়ে বলটি থামিয়ে দেন ওয়েলিংটন মাসাকাদজা।

 

ওদিকে তামিম প্রথমে ‘কল’ করেও সৌম্যকে থামিয়ে দিয়েছিলেন, কিন্তু অন স্ট্রাইকিং প্রান্তে থাকা সৌম্য চলে আসেন স্ট্রাইকিং প্রান্তে। একই প্রান্ত দুই ব্যাটসম্যান! মাসাকাদজার থ্রো থেকে নন স্ট্রাইকিং প্রান্তের স্টাম্প ভেঙে দিতে কোনো ভুল করেননি বোলার জংউই। সৌম্যর ব্যাট থেকে আসে ৭ রান।

 

সৌম্য বিদায় নিলেও সাব্বির রহমানের সঙ্গে জুটি বেঁধে দলকে ভালোই এগিয়ে নিচ্ছিলেন তামিম। কিন্তু জিম্বাবুইয়ান স্পিনার গ্রায়েম ক্রেমারের একটি বল উড়িয়ে মারতে গিয়ে লং অফ থেকে দৌড়ে আসা সিবান্দার হাতে ধরা পড়েন তামিম। ২৪ বলে ৩টি চার ও একটি ছক্কায় ২৯ রান করেন এই বাঁহাতি। সাব্বিরের সঙ্গে তার দ্বিতীয় উইকেট জুটিতে আসে ২৭ রান।

 

টি-টোয়েন্টি অভিষিক্ত শুভাগত হোম মোটেই ভালো করতে পারেননি। ৬ রান করেই শন উইলিয়ামসের বলে বোল্ড হন এই ডানহাতি।শুভাগত ফিরলেও চতুর্থ উইকেটে সাব্বির রহমান ও মুশফিকুর রহিম মিলে দলকে এগিয়ে নিতে থাকেন। চোখ জুড়ানো কয়েকটি চার মারেন দুজন।

 

ইনিংসের ১৫তম ওভারে ক্রেমারের বলে কাউ কর্নারের ওপর দিয়ে বিশাল এক ছক্কাও মারেন সাব্বির। কিন্তু পরের বল আবারও ছক্কা হাঁকাতে গিয়ে ডিপ মিড উইকেটে ওয়ালারের হাতে ধরে পড়েন। ৩৬ বলে ৪টি চার ও এক ছক্কায় ৪৬ রানের ইনিংস খেলেন সাব্বির। মুশফিকের সঙ্গে তার জুটিতে আসে ৪৪ রান।

 

সাব্বিরের বিদায়ের পরের ওভারে অবশ্য মুশফিকও সাজঘরে ফেরেন। স্পিনার ওয়েলিংটন মাসাকাদজার বলে ডিপ মিড উইকেটে সিকান্দার ক্যাচে পরিণত হন মুশফিক। ১৯ বলে ৩টি চারের সাহায্যে মুশফিক করেন ২৬ রান। কিন্তু পর পর দুই ওভারে উইকেটে থিতু হওয়া দুই ব্যাটসম্যানকে হারিয়ে ভীষণ চাপে পড়ে যায় বাংলাদেশ।

 

এরপর মাহমুদউল্লাহ ক্রিজে এসে জংউইয়ের একটি বলে কভারের ওপর দিয়ে বিশাল এক ছক্কা হাঁকালেও পরের বলেই বোল্ড হয়ে যান। ফলে চাপটা আরো বেড়ে যায় স্বাগতিকদের। তবে আরেক অভিষিক্ত নুরুল হাসানকে নিয়ে ২৪ রানের অবিচ্ছিন্ন জুটিতে ৮ বল আগেই দলকে দারুণ এক জয় উপহার দেন সাকিব আল হাসান।

 

জয়ের পথে জং উইয়ের পর পর দুই বলে দুটি চার মারেন বিশ্বসেরা এই অলরাউন্ডার। ১৩ বলে দুটি চারে অপরাজিত ২০ রান করেন সাকিব। ৫ বলে একটি চারে ৭ রানে অপরাজিত থাকেন অভিষিক্ত নুরুল।  

 

এর আগে টস জিতে ব্যাট করার সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন জিম্বাবুয়ের অধিনায়ক এল্টন চিগুম্বুরা। অধিনায়কের সিদ্ধান্তের সঠিক জবাবও দেন দুই উদ্বোধনী ব্যাটসম্যান হ্যামিল্টন মাসাকাদজা ও ভুসি সিবান্দা। উদ্বোধনী জুটিতে দুজন মিলে ৭২ বলে ১০১ রানের বড় জুটি গড়েন।

 

সিবান্দাকে (৪৬) ফিরিয়ে উদ্বোধনী জুটি ভাঙেন সাকিব আল হাসান। সাকিবের মিডল স্টাম্পের বল উড়িয়ে মারতে গিয়ে তামিম ইকবালের চমৎকার ক্যাচে পরিণত হন সিবান্দা। তবে ম্যালকম ওয়ালারের সঙ্গে জুটি বেঁধে ক্যারিয়ারের নবম টি-টোয়েন্টি ফিফটি তুলে নেন মাসাকাদজা।

 

অবশ্য খানিক বাদে ওয়ালার রানআউটে কাটা পড়লে ২৬ রানের এ জুটিও ভেঙে যায়। সাব্বির রহমানের থ্রো থেকে ম্যালকম ওয়ালারকে রানআউট করেন অভিষিক্ত উইকেটরক্ষক নুরুল হাসান সোহান।

 

ওয়ালার ফিরলেও ফিফটি করা মাসাকাদজা আরো বিধ্বংসী হয়ে ওঠেন। তবে ব্যক্তিগত ৭৯ রানে তাকে সরাসরি থ্রোয়ে রানআউট করেন অভিষিক্ত উইকেটরক্ষক নুরুল হাসান সোহান। ৫৩ বলে ৯টি চার ও দুটি ছক্কার সাহায্যে ৭৯ রানের চমৎকার এক ইনিংস খেলেন মাসাকাদজা।

পরের ওভারে জাদু দেখান পেসার মুস্তাফিজুর রহমান। পর পর দুই বলে দুটি বোল্ড করেন বাংলাদেশের এই তরুণ তুর্কি। প্রথমে জিম্বাবুইয়ান অধিনায়ক এল্টন চিগুম্বুরা তারপর লুক জংউইয়ের স্টাম্প ভেঙে দেন মুস্তাফিজ।

 

এরপর ইনিংসের শেষ ওভারে আরেক পেসার আল-আমিন হোসেনও ২ উইকেট নেন। ফলে জিম্বাবুয়েকে ১৬৩ রানেই বেঁধে ফেলতে সক্ষম হয় স্বাগতিকরা। নির্ধারিত ২০ ওভারে ৭ উইকেটে এ রান করে সফরকারীরা।

 

জিম্বাবুয়ের ওপরের তিন ব্যাটসম্যান ছাড়া আর কেউই দুই অঙ্ক ছুঁতে পারেননি! বাংলাদেশের হয়ে মুস্তাফিজ ১৮ রানে ২টি ও আল-আমিন ২৪ রানে ২ উইকেট নেন। সাকিবের ঝুলিতে জমা পড়ে একটি উইকেট।

 

বাংলাদেশ দলে অভিষেক হয়েছে অলরাউন্ডার শুভাগত হোম ও উইকেটরক্ষক ব্যাটসম্যান নুরুল হাসান সোহানের। শুভাগতর ৭টি টেস্ট ও ৪টি ওয়ানডে খেলার অভিজ্ঞতা থাকলেও সোহানের এটিই প্রথম আন্তর্জাতিক ম্যাচ। বাংলাদেশের একাদশের বাইরে আছেন ইমরুল কায়েস, আরাফাত সানী ও আবু হায়দার রনি।

১৫ জানুয়ারি.২০১৬/এমটিনিউজ২৪/আরিফুর রাজু/এআর

Follow করুন এমটিনিউজ২৪ গুগল নিউজ, টুইটার , ফেসবুক এবং সাবস্ক্রাইব করুন এমটিনিউজ২৪ ইউটিউব চ্যানেলে