বৃহস্পতিবার, ০৫ মে, ২০২২, ১০:৫৯:৩৭

দেশ-বিদেশের বড় বড় তারকার সাথে কে এই বাংলাদেশি!

দেশ-বিদেশের বড় বড় তারকার সাথে কে এই বাংলাদেশি!

স্পোর্টস ডেস্ক: দীর্ঘাকায় একজন মানুষ, মুখে চাপ দাড়ি, চুল-দাড়িতে পাঁক ধরেছে। ঠোটে স্মিত হাসি। দেখলে মনে হয়, কোথায় যেনো লোকটাকে দেখেছি। একটু পর মনে পড়ে, ওই যে টিভি বিজ্ঞাপনে দেখেছি। কিংবা ছোট্ট একটা নাটকেও চোখে পড়ে।

সাকিব আল হাসান নিউইয়র্ক যাচ্ছেন। ক্রিস গেইল ঢাকায় এলেন। ব্রায়ান লারা শপিংয়ে যাচ্ছেন। কিংবা জ্যাকুলিন ফার্নান্দেজ বা সালমান খান মঞ্চে উঠবেন। এই সময়ে পাশেই দেখা যায় তাকে। তিনি কি ক্রিকেট বোর্ডের কেউ? তিনি কী খেলোয়াড়? নাকি অভিনেতা? 

অভিনেতা হলে খেলোয়াড়দের কাছে কেনো? আবার ক্রিকেটের লোক হলে টিভি পর্দায় কেন? সবমিলিয়ে তিনি যেনো এক রহস্যমানব। হঠাৎ হঠাৎ তার দেখা মেলে। কিন্তু পরিচয় মেলে না। হাজারো প্রশ্ন এবং ভুল উত্তর ভেসে বেড়ায় ফেসবুকে।

সবাই জানতে চান, দেশ-বিদেশের বড় বড় তারকার সাথে কে এই বাংলাদেশি? লোকটা বাংলাদেশের ক্রিকেটের অতি আপন জন। আশির দশক থেকে বাংলাদেশের ঘরোয়া ক্রিকেটের, আর্ন্তজাতিক ক্রিকেটের এক নীরব স্বাক্ষী। লোকটা বাংলাদেশের ক্রিকেটের এক চলন্ত ইতিহাস। 

লোকটা শত শত ক্রিকেট ও বিনোদন তারকার নিভৃত সঙ্গী। লোকটা একজন শখের অভিনেতা। এই লোকটা ওয়াসিম খান। মোহামেডানের ওয়াসিম খান এবং বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ডের (বিসিবি) ওয়াসিম খান। ওয়াসিম খানের আদি বাড়ি সিলেট। তবে তার জন্ম ও বড় হয়ে ওঠা ঢাকায়। 

পড়াশোনা করেছেন বিএএফ শাহীন স্কুলে। এখানে পড়াশোনা করার সুবাদে দেশের ক্রীড়াঙ্গনের অনেক রথীমহারথীর সাথে বেড়ে উঠেছেন। এই স্কুলের পরিবেশও ক্রীড়ামুখী থাকায় একাধারে বাস্কেটবল, ফুটবল ও ক্রিকেট খেলার মধ্যে বড় হয়ে উঠেছেন।

নটরডেম কলেজে আসার পর ক্রিকেটে আগ্রহটা বেড়ে যায়। সেটা আশির দশকের শুরুর কথা। দেশজুড়ে একটা ট্রায়াল হলো তরুন ক্রিকেটারদের নিয়ে। সেখানে অংশ নিয়ে সেরা বিশ জনে চলে এসেছিলেন ওয়াসিম খান; ফাস্ট বোলার। কিন্তু জাতীয় দলের কাছে যেতে পারেননি। 

তবে এই সময় তিনি চোখে পড়ে গেলেন মোহামেডান কর্মকর্তাদের। মোহামেডানের নেটে এসে বল করতেন। নিজেই বলেন, লাইন লেন্থ ভালো ছিলো না বলে এবং দলে অনেক বড় বড় পেসার ছিলেন বলে ম্যাচ তেমন খেলা হতো না। মৌসুমের শেষ দিকে গিয়ে দু একটা ছোট দলের বিপক্ষে ম্যাচ পেতেন। 

এভাবে যে চলবে না, এটা বুঝে ফেলেছিলেন। কিন্তু খেলার পাশাপাশি ওয়াসিম খানের একটা বড় গুন ছিলো-ম্যান ম্যানেজমেন্ট। এই গুনের জন্যই ১৯৮৪ সালে, বয়স বিশ পার হওয়ার কিছুদিন পরই মোহামেডানের ম্যানেজার হয়ে গেলেন।

এরকমই মাত্রই কৈশোর পার হয়ে আবাহনীর ম্যানেজার হয়েছিলেন আহমেদ সাজ্জাদুল আলম ববি। ফলে আবাহনী-মোহামেডান, দু জায়গাতেই তরুণ ম্যানেজারের যুগ। এর মধ্যে একটা ঘটনা ঘটলো। বাংলাদেশ সফরে এলো পশ্চিম বাংলা দল। এই দল থেকে কয়েক জন খেলোয়াড়কে মোহামেডানে ভিড়িয়ে ফেললেন ওয়াসিম খান।

শুরু হলো তার বিদেশি খেলোয়াড় সংগ্রহ। ১৯৮৮ সালে ঢাকায় বসলো এশিয়া কাপের আসর। বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ডের (বিসিবি) খেলোয়াড়দের আপ্যায়ন ও বিমানবন্দরে অভ্যর্থনা জানানোর কমিটিতে জায়গা হলো ওয়াসিম খানের। সেই শুরু থেকে গত ৩৩ বছর ধরে এই স্ট্যান্ডিং কমিটির সদস্য হয়ে আছেন ওয়াসিম খান।

ওয়াসিম খান বলছিলেন, ‘আমি বিসিবিকে আন্তরিক ভাবে ধন্যবাদ জানাতে চাই এতোগুলো বছর ধরে আমার ওপর আস্থা রাখার জন্য। সংশ্লিষ্ট সকলকে আমার কৃতজ্ঞতা।’ এ ছাড়া ক্রিকেট বিশ্বের প্রতিটি দেশের সাথে কখনো না কখনো স্থানীয় লিয়াঁজো কর্মকর্তা হিসেবে কাজ করেছেন ওয়াসিম খান।

ফলে বাংলাদেশে যত বিদেশি দল খেলতে আসে, বিপিএল উপলক্ষে যত বড় বড় তারকা আসেন; সবারই আসলে দেশে রিসিভ করার কাজটা করেন ওয়াসিম খান। আর এই গুনের কারণে ওয়াসিম খান বিভিন্ন সময় বিভিন্ন এজেন্সির সাথেও কাজ করেছেন। 

ফলে ইরফান খান, সালমান খান, জ্যাকুলিন ফার্নান্দেজ, সুস্মিতা সেন থেকে শুরু করে এআর রহমানেরও তিনি ঘনিষ্ঠ মানুষ হয়ে ওঠেন। বাংলাদেশ নারী দলের সাথে শুরু থেকে ছিলেন তিনি। নারী দলের ম্যানেজার হিসেবেও কাজ করেছেন। দীর্ঘদিন ধরে কাজ করছেন মোহামেডান নারী দলের ম্যানেজার হিসেবেও।

বিপিএলে কাজ শুরু করেছিলেন সিলেট দলের সাথে; টিম ম্যানেজার হিসেবে। এরপর চিটাগং ও রংপুরে ছিলেন লজিস্টিক ম্যানেজার। সর্বশেষ ঢাকার প্রধাণ প্রটোকল অফিসার হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন।

ব্যক্তিগত জীবনে অকৃতদার এই মানুষটি থাকেন উত্তরায়। ফলে অনেক অভিনেতা ও পরিচালকের সাথেও তার ঘনিষ্ঠতা তৈরী হয়েছে। অভিনয় ব্যাপারটা সম্পর্কে তার ধারণা ছিলো, এটা যে কেউ পারে। সেই ধারণা থেকে কয়েকটা বিজ্ঞাপনে অভিনয় করে ফেললেন। কিন্তু বড় চরিত্রে অভিনয় করা হচ্ছিলো না।

অভিনয়, ক্রিকেট থেকে পেয়েছেন অনেক কিছু। রানাতুঙ্গা, শেবাগের সাথে বন্ধুত্ব হয়েছে। সুস্মিতার সাথে তিনি বাংলা ভাষায় আড্ডা দেন। টেন্ডুলকার শততম সেঞ্চুরি করে তাকে ধন্যবাদ জানান। ভারতে তার ঘনিষ্ঠদের মধ্যে আছেন সৌরভ গাঙ্গুলি থেকে গৌতম গম্ভীররা।

পাকিস্তানের এখনকার প্রধাণমন্ত্রী ইমরান খানকেও রিসিভ করেছেন তিনি। জাভেদ মিয়াদাদ থেকে শুরু করে শহীদ আফ্রিদি, বাবর আজমরা তার ঘনিষ্ঠ। দারুন ঘনিষ্ঠতা ওয়াসিম আকরাম ও ওয়াকার ইউনুসের সাথে। শ্রীলঙ্কায় সেই রানাতুঙ্গা থেকে থারাঙ্গা বা দিলশান। 

আফগানিস্তানের মোহাম্মদ নবী বা রশীদ খান তার ঘনিষ্ঠ মানুষ। অস্ট্রেলিয়ার ব্রেট লির সাথে দারুন সম্পর্ক তার। অনেক অনেক প্রাপ্তি। তবে সেরা স্মৃতিটা ক্রিকেট মাঠেই। বাংলাদেশ হ্যান্ডবল যুব ও সিনিয়র দলের ম্যানেজার হিসেবে কাজ করেছেন। ছিলেন এই ফেডারেশনের কর্মকর্তাও। সে জন্য আজীবন সম্মাননাও পেয়েছেন।

Follow করুন এমটিনিউজ২৪ গুগল নিউজ, টুইটার , ফেসবুক এবং সাবস্ক্রাইব করুন এমটিনিউজ২৪ ইউটিউব চ্যানেলে