স্পোর্টস ডেস্ক : ওই একটা বলই বদলে দিল মুস্তাফিজের জীবন। সেই বলের গল্পটা বেশ নাটকীয়।
মুস্তাফিজের বয়স তখন ১৪ কি ১৫ বছর। তেঁতুলিয়া গ্রামের মাঠে মাঠে খুব জনপ্রিয় টেনিস বলের ক্রিকেট। বড় ভাই মাহফুজুর রহমান গ্রামীণফোনে চাকরি পেয়ে খুলনায় আসার পর আর না খেললেও মুস্তাফিজসহ বাকি তিন ভাই ছিলেন সেসব টুর্নামেন্টের নিয়মিত মুখ।
তাঁদের দলের নাম ছিল রাজাপুর আরপি সংঘ। তো এক ম্যাচে প্রতিপক্ষের এক ব্যাটসম্যানের হাতে তুলোধোনা হচ্ছিল তাঁদের সব বোলার। তাঁকে ফেরানোর শেষ চেষ্টা হিসেবে অধিনায়ক পল্টু মুস্তাফিজের হাতে বল তুলে দেন। মেজো ভাই জাকির হোসেনের অস্বস্তি হচ্ছিল। অতটুকু ছেলে কি পারবে ঠিকভাবে বল করতে! মুস্তাফিজ পারলেন। প্রতিযোগিতামূলক ম্যাচে প্রথম বল হাতে নিয়েই দেখালেন জাদু।
পল্টু বলছিলেন, ‘উইকেটকিপারকে সরিয়ে আমি নিজে কিপিংয়ে গিয়ে মুস্তাফিজকে বল দিই। প্রথম দুই বলেই পরাস্ত ব্যাটসম্যান। তৃতীয় বলে বোল্ড এবং ওটা কাটারই ছিল। বলটা ব্যাটসম্যানের পায়ের পেছন দিক দিয়ে ঘুরে এসে স্টাম্পে লাগে। অবশ্য টেনিস বল তো, কাটার এমনিতেই হয়ে যায়।’
ওই একটা বলই বদলে দেয় মুস্তাফিজের জীবন। তাঁকে দিয়ে নিয়মিত বল করানো শুরু হয় তেঁতুলিয়ার টুর্নামেন্টে। দলগুলো অনেক সময় তেঁতুলিয়ার বাইরে থেকেও ভাড়ায় খেলোয়াড় আনত। একজন খেলোয়াড়কে প্রতি ম্যাচ দিতে হতো চার-পাঁচ শ টাকা। ভাইয়েরা চিন্তা করলেন, টাকা দিয়ে বাইরে থেকে খেলোয়াড় না এনে মুস্তাফিজকেই গড়েপিটে নেবেন। কয়েকটি ম্যাচ খেলার পর ছোট ভাইয়ের প্রতিভা আরও স্পষ্টভাবে ধরা দিল তাঁদের কাছে। পারিবারিকভাবে সিদ্ধান্ত হলো, মুস্তাফিজকে ক্রিকেট বলে অনুশীলন করার সুযোগ করে দিতে হবে।
যেই ভাবা সেই কাজ। গণমুখী সংঘের হয়ে ফুটবল খেলার সুবাদে ওই ক্লাবের ক্রিকেট কোচ আলতাফ হোসেনের সঙ্গে পরিচয় ছিল পল্টুর। তাঁর কাছে মুস্তাফিজকে নিয়ে যেতেই একটা শর্ত দিয়ে দিলেন কোচ-ভালো খেলোয়াড় হতে হলে টেনিস বলের খেলা ছাড়তে হবে। খেলতে হবে শুধু ক্রিকেট বলে। এরপর থেকে মুস্তাফিজ আর টেনিস বলে বল করেননি। তেঁতুলিয়ায় ক্রিকেট বলে অনুশীলন করার জায়গা না থাকায় বাড়ির পেছনেই ম্যাট বিছিয়ে ক্রিকেট বলের উইকেট বানিয়ে দেন ভাইয়েরা।
১৭ জানুয়ারি ২০১৬/এমটি নিউজ২৪ডটকম/এসএম/ডিআরএ