সোমবার, ১৮ জানুয়ারী, ২০১৬, ০৫:০১:০৩

হামাগুড়ি দিতে গিয়ে সিরিজ খোয়ালো ভারত

হামাগুড়ি দিতে গিয়ে সিরিজ খোয়ালো ভারত

দেবাশিস দত্ত, মেলবোর্ন থেকে :জিততে পারে, জিততেই পারে, এমনকি ৪০ ওভারের শেষেও ছিল ১–২ করার সম্ভাবনা। কিন্তু, পার্থ, ব্রিসবেনের পর মেলবোর্নেও টিম ইন্ডিয়াকে হারতে হল। পরিষ্কার ৩–০। অঙ্কের হিসেবে সিরিজ জিতে নিল অস্ট্রেলিয়া রোববারই।

বুঝি না, এমন শোকের আবহে কোহলিরা সান্তনা পেতে পারেন টেস্ট ক্রিকেটে আইসিসি ক্রমপর্যায় তালিকায় ভারত এক নম্বর হওয়ার কারনে। চলতি সিরিজ যারা জিতছে, সেই অস্ট্রেলিয়া নেমে গেল ২ নম্বরে!

তর্কবাগিশরা লতায়–পাতায় সম্পর্কের মতো দুনিয়ার কোনও এক প্রান্তে কোনও দলের জেতা বা হারের কারণে ভারত অপ্রত্যাশিতভাবে টেস্টে এক নম্বরে উঠে এলো। নিজের নাক কেটে এ যাত্রায় অন্যের যাত্রাভঙ্গের মতো ব্যাপার নয়। ভারত হারছে, তবু অন্য দলের দাক্ষিণ্যে শীর্ষে পৌঁছে যাওয়ার মধ্যে কোনও কি কৃতিত্ব খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে?

পার্থে ৩০৯, ব্রিসবেনে ৩০৮ করেও হারতে হয়েছিল ধোনির ভারতকে। এদিন ২৯৫–এর জবাবে ৭ বল বাকি থাকতে অস্ট্রেলিয়া জিতে নিল মেলবোর্নের ম্যাচটাও। টলমল করছিল বটে অস্ট্রেলিয়া মধ্যবর্তী সময়ে, কিন্তু গ্লেন ম্যাক্সওয়েল নামের এক চ্যাম্পিয়ন ক্রিকেটার ভারতের মুখের সামনে থেকে ম্যাচ নিয়ে চলে গেল। জীবনের সর্বোচ্চ স্কোর। পেলেন ম্যান অফ দ্য ম্যাচের পুরস্কার।

এই কারণে বিরাট কোহলির একদিনের ক্রিকেটে ২৪তম সেঞ্চুরির কোনও দাম থাকলো না। যেমন থাকেনি আগের দুটি ম্যাচে রোহিত শর্মার ঝলমলে দুটি তিন অঙ্কের রানের ইনিংস। ম্যাচের কথায় আসছি পরে। বিরাটের কথা যখন উঠলই, তখন বলে নিই, এদিন ১১৭ বলে ১১৭ রান করার পথে তিনি দ্রুততম ৭ হাজার রানের ক্লাবের সদস্য হয়ে গেলেন। লেগেছে ১৬১ ইনিংস। গড় (৫১.১০) দেখে বোঝা যায়, কী দ্রুততার সঙ্গে বিরাট একদিনের ক্রিকেটে রান করে চলেছেন।

২৪তম সেঞ্চুরি করার ক্ষেত্রেও থাকল দ্রুততমর গতি (এদিন অবশ্য কোহলির সঙ্গে ফকনারের কথা কাটাকাটির দৃশ্যটা ভাল লাগেনি) । ২৪ সেঞ্চুরি করতে শচিন টেন্ডুলকারের লেগেছিল ২১৯ ইনিংস। আর সেখানে বিরাটের লাগল মাত্র ১৬১ ইনিংস।

বস্তুত, ভারতীয় ক্রিকেটপ্রেমীরা বরাবরই ব্যক্তিগত রেকর্ড নিয়ে মাথা ঘামিয়ে এসেছেন। সে সুনীল গাভাস্কারই হোন বা শচিন, ভারতের হারের সময়ও এমন ব্যক্তিগত ঔজ্জ্বল্য নিয়ে আমরা নাচানাচি করে এসেছি। সেই ট্র্যাডিশন সমানে চলেছে।

ওয়াসিম আকরাম বললেন, ‘রোববারের মেলবোর্নের উইকেট ছিল উপমহাদেশীয় উইকেট।’ অর্থাৎ বল থমকে আসবে। এলও তাই। ততটা গতি থাকল না। ঘিয়ে রঙের ফ্যাটফ্যাটে উইকেট। মাঝের ২২ গজে ঘাসের ‘ঘ’ও ছিল না। আর কী চাই ভারতীয় শিবিরের? অল্প হলেও ইশান্তরা যখন বল করলেন, স্যুইং হল। এমনকি অল্পস্বল্প রিভার্স স্যুইং হল। অল্প হলেও বল ঘোরালেন রবীন্দ্র জাদেজা।

এমনকি ৩৫.১ ওভারে শীর্ষস্থানীয় ৫ ব্যাটসম্যানকে ফিরিয়ে দেওয়ার পর যখন ম্যাচ জেতার সম্ভাবনা ক্রমশ বড় হচ্ছে, তখন ম্যাক্সওয়েল–ফকনারের দাপটে অস্ট্রেলিয়া ৭ বল বাকি থাকতেই ম্যাচ নিয়ে চলে গেল। একেবারে গোয়িং গোয়িং গনের মতো। আবার কোহলিরা ড্যাব ড্যাব করে দেখলেন, ম্যাক্সওয়েল মাহাত্ম্য। ঠান্ডা মাথায় ম্যাক্সওয়েল যে মহিমা দেখিয়ে গেলেন ৮৩ বলে, তা ধোনিদের মনে রাখতে হবে বহুদিন।

এদিন তিনি ২১৫ রানে ৬ উইকেট হারিয়ে যাওয়ার পরও হতোদ্যম না হয়ে, টেনশনে আক্রান্ত না হয়ে অস্ট্রেলিয়াকে ৩–০–র মঞ্চে নিয়ে গেলেন। ভারতের মিডল অর্ডারকে যখন অপলকা দেখাচ্ছে, সেখানে অস্ট্রেলিয়ার মিডল অর্ডার ঠাস বুন্টো। ওরা জানেন, প্রতিদিন জর্জ বেইলি বা স্মিথরা বড় রান পাবেন না। তাই তখন অন্যদের ঘাড়ে দায়িত্ব নিয়ে দলকে টেনে নিয়ে যেতে হবে।

ওয়ার্নারের অনুপস্থিতিতে শুরুতে শন মার্শ (৬২) করে গেলেন। বড় রান না পেলেও অধিনায়ক স্মিথ ৪৩ বলে ৪১ করে যাওয়ার সময় যেন বলে গেলেন, তোরা যা পারিস তা কর, আমার ৩–০ চাই। অধিনায়কের চাহিদা মিটিয়ে দিলেন সতীর্থরা। যখনই সুযোগ পেয়েছেন, ভারতকে আঁচড়ে দিয়েছেন জর্জ বেইলি।

এদিন জাদেজার বলে স্টাম্প আউট হওয়ার আগে করে গেলেন ২২ বলে ২৩। সময় নষ্টের গল্পে নেই ওরা। সেখানে প্রথম দু’ম্যাচে রান না পাওয়া শেখর ধাওয়ান এদিন ৯১ বলে ৬৮ রান করে যখন সেট হয়ে গেছেন, তখন বিনা প্ররোচনায় নিজের উইকেট খোয়ালেন। এমন কাণ্ড বহুবার ঘটিয়েছেন। আবার ঘটালেন।

এই ৬৮ রানের ইনিংস ভাঙিয়ে পরের দুটি ম্যাচও খেলে যাবেন। এই ভারতীয় শিবিরে, ডাক্তারদের চেম্বারের মতো ‘ইন’ বা ‘আউট’ নেই। এখানে টিম ম্যানেজমেন্টের প্রশ্রয়ে প্রস্থান ব্যাপারটাই নেই। এমনকি কৈফিয়তও দিতে হবে না এমন কাণ্ডজ্ঞানহীনতার জন্য। তৃতীয় দিনের মুজরিম খুঁজতে চাইলে, আসামির কাঠগড়ায় বোলারদেরও আগে শেখর ধাওয়ানকেই রাখতে হবে।

পুনশ্চ: ভারত অবশ্য এদিন একটি কড়া সিদ্ধান্ত নিয়েছে। দুনিয়ার সেরা অফ স্পিনার হিসেবে যাকে তুলে ধরা হয়েছি‍ল‍, সেই রবিচন্দ্রন অশ্বিনকে রাখা হয়েছিল প্রথম এগারোর বাইরে। সুযোগ দেওয়া হল নবাগত ঋষি ধাওয়ানকে। এবং গুরকিরাত সিং। দু’জনকেই অস্ট্রেলিয়ায় পাঠানো হয়েছিল অলরাউন্ডারের কোটায়।

মাফ করবেন, প্রথম ম্যাচের শেষে, এই দু’জন সম্পর্কে ভাল বা খারাপ কিছুই বলতে পারছি না। ভারতীয় বোর্ড সচিব অনুরাগ ঠাকুরের হিমাচল প্রদেশের ক্রিকেটার হওয়ায়, তড়িঘড়ি, বোধহয় ঋষিকে প্রথম এগারোয় রাখা হল। আলেকজান্ডার যেন কী বলেছিলেন সেলুকাসকে…? ওটা মনে মনে, প্লিজ আউড়ে নিন।

১৮ জানুয়ারি,২০১৬/এমটিনিউজ/এসএস/এসবি

Follow করুন এমটিনিউজ২৪ গুগল নিউজ, টুইটার , ফেসবুক এবং সাবস্ক্রাইব করুন এমটিনিউজ২৪ ইউটিউব চ্যানেলে