ইশতিয়াক পারভেজ : ১৪ বছর আগে ৬ ও ৭ই ফেব্রুয়ারিতে ফিরে গেলে মনে ভয় আর শঙ্কা জাগতে পারে। ২০০২ সালে নিউজিল্যান্ডে বৃষ্টি বিঘ্নিত ম্যাচে নেপালের মুখোমুখি হয়েছিল বাংলাদেশ অনূর্ধ্ব-১৯ দল। প্রথম ও একমাত্র দেখায় নাফিস ইকবালের নেতৃত্বে টাইগাররা নেপালের সঙ্গে হেরে গিয়েছিল ২৩ রানে।
কিন্তু সময় বদলেছে, আজ ৫ই ফেব্রুয়ারি নেপালের বিপক্ষে নয়া ইতিহাসের হাতছানি নিয়ে মাঠে নামবে বাংলাদেশ। মিরপুর শেরে বাংলা স্টেডিয়ামে কোয়ার্টার ফাইনালের ম্যাচে জিতলে প্রথমবার সেমিফাইনাল খেলবে বাংলাদেশ দল। যুব বিশ্বকাপে ১০ বার অংশ নিয়েছে বাংলাদেশ। কিন্তু কোনো বারই সেমিফাইনাল খেলা হয়নি।
নিউজিল্যান্ড ও আয়ারল্যান্ডকে হারিয়ে কোয়ার্টার ফাইনালে ওঠা নীরব ঘাতকের মতোই আতঙ্ক ছড়াচ্ছে নেপাল। তবে টানা তিন জয় নিয়ে গ্রুপ চ্যাম্পিয়ন টাইগারদের বোলিং-ব্যাটিং ও ফিল্ডিংয়ে দারুণ আশাবাদী দলের অধিনায়ক মেহেদি হাসান মিরাজ। তিনি বলেন, ‘আমাদের সামনে ভালো করে যাওয়ার সুযোগ রয়েছে। চেষ্টা করবো সুযোগটা কাজে লাগানোর। বিন্দু মাত্র ছাড় দেবো না।’
অন্যদিকে দল নিয়ে প্রধান কোচ মিজানুর রহমান বাবুল বেশ আত্মপ্রত্যয়ী। তিনি বলেন, ‘আসলে ওইভাবে কোনো কিছু নিয়ে আমরা চিন্তিত না। তাদের কি আছে না আছে এইসব আমরা ভাবছি না। আমরা আমাদের পরিকল্পনাগুলো নিয়ে ভাবছি কিভাবে সেগুলো মাঠে বাস্তবায়ন করা যায়। ওরা ছোট টিম কিংবা বড় টিম এইরকম কোনো চিন্তা আমরা করতে চাচ্ছি না। ছেলেরা খুব ভালো অবস্থায় আছে।’
সকাল ৯টায় নেপালের মুখোমুখি হবে বাংলাদেশ অনূর্ধ্ব-১৯ দল। নেপালকে সহজ প্রতিপক্ষ ভাবা হলেও বিশ্বকাপের ইতিহাসে এশিয়ার এই খর্বশক্তির দলটি বাংলাদেশের চেয়ে এগিয়ে আছে। একবারের দেখায় জিতেছিল নেপাল। তাই বলে একযুগ পরে দুই দলের মধ্যে শক্তির পার্থক্যটা বেড়েছে ক্রমেই। সেবার আশারাফুল, সৈয়দ রাসেল ও আফতাব আহমেদ না পারলেও মিরাজ বাহিনী তাদের সক্ষমতার প্রমাণ রেখেছে। গ্রুপ পর্বে শক্তিশালী দক্ষিণ আফ্রিকাকে ৪৩ রানে হারানোর পর স্কটল্যান্ডকেও হারায় ১১৪ রানের ব্যবধানে।
নেপালের মতই অঘটনের জন্ম দিয়ে কোয়ার্টার ফাইনালে ওঠা নামিবিয়ার বিপক্ষে শেষ ম্যাচে ছিল পচা শামুকে পা কাটার ভয়। কিন্তু মিরাজ বাহিনী নামিবিয়াকে ৬৫ রানে অল আউট করে ৮ উইকেটের ব্যবধানে বিশাল জয় তুলে নেয়। অবশ্য নামিবিয়ার কোচের মত বাতাসে ভাসছেন না নেপালের কোচের জগৎবাহাদুর টামাটা। তিনি পা মাটিতেই রেখেছেন। তবে বাংলাদেশকে উড়িয়ে না দিলেও সেমিফাইনাল খেলার প্রত্যয় ব্যক্ত করেছেন কোচ।
বাংলাদেশ নিয়ে তিনি বলেন, ‘বাংলাদেশ খুবই ভালো। তারা বিশ্বকাপের শুরু থেকেই ভালো খেলছে। তবে আমরাও এই ম্যাচ ভালো খেলার চেষ্টা করবো। আমাদেরও দলও ভালো। ছেলেরা গত কয়েক মাস ধরেই ভালো ক্রিকেট খেলছে। তার ফলাফল আমরা ইতিমধ্যে গ্রুপ পর্বেই পেয়েছি। আমাদের দলে ভালো স্পিন ও ব্যাটিং অ্যাটাক আছে। বাংলাদেশের স্পিন অ্যাটাক অসাধারণ। গ্রুপ পর্বের ম্যাচগুলোতেই তারা তাদের স্পিন ধার দেখিয়েছে। আর দলটির ব্যাটিং অর্ডারও উল্লেখ করার মতো। কোয়ার্টার ফাইনাল, তাই আমরা আমাদের সেরা খেলাটিই খেলতে চেষ্টা করবো।’
বাংলাদেশ দলের নেপাল নিয়ে খুব একটা ধারণা নেই। যতটুকু জানা আছে অধিনায়কের তাও ভাসা ভাসা। নেপালের শক্তি সম্পর্কে মিরাজ বলেন, ‘ওদের ব্যাটসম্যানরা শুরুতে শট খেলতে চায়। ওদের একটা-দুইটা ভালো বোলার থাকতে পারে। তবে আমাদের ভালো খেলার মানসিকতা থাকতে হবে।’
নিজ দলের মিডল অর্ডারের ব্যাটিংয়ে জয়রাজ শেখ ও নাজমুল হোসেন শান্তকে নিয়ে প্রহরীর ভূমিকাটা ভালোই পালন করেন মিরাজ। শুধু মাত্র এখন দলের দুশ্চিন্তাটা ওপেনিং নিয়ে। এ বিষয়ে কোচ বলেন, ‘জিততে থাকলে যে সমস্যা বোঝা যাবে না, বিষয়টি এমন নয়। ওপেনিং ব্যাটসম্যানদের দিক দিয়ে আমরা কিছুটা সমস্যায় পড়েছি। এটা নিয়ে আমরা কাজও করছি। আশা করি ইনশাআল্লাহ সামনের ম্যাচে এটা ওভারকাম করতে পারবো। ওপেনাররা পুনরায় তাদের ?পুরনো ছন্দে ফিরে আসবে।’
নেপালকে নিয়ে নিজের পরিকল্পনা সম্পর্কে বলেন, ‘ভারতের বিপক্ষে নেপালের শেষ ম্যাচটিতে আমরা এক ঘণ্টা খেলা দেখার সুযোগ পাই। এরপর আমাদের অনুশীলন শিডিউল ছিল। তবে ম্যাচের পুরো ভিডিও আমাদের কাছে আছে। আজকে আমরা পুরো ম্যাচটি দেখবো। দেখে যতটুকু ওদের সম্পর্কে ধারণা নেয়া যায়।’
এ ছাড়াও অতীতের সেই হারের কথাও ভাবতে চাইছেন না প্রধান কোচ মিজানুর রহমান বাবুল। তিনি বলেন, ‘অনেকে আসলে জানেই না বাংলাদেশ নেপালের সঙ্গে আগে হেরেছিল। ওই জিনিসগুলো আমরা ওদের সামনে উত্থাপন করতে চাই না। এটা ছোটদের টুর্নামেন্ট। এখানে ওই বিষয়গুলো ম্যাটার করে না। যে দল এখানে ভালো ক্রিকেট খেলবে তারাই জিতবে।’
তবে নেপাল মাঠে নামার আগে অধিনায়ক নিয়ে বিতর্কের কারণে অনেকটাই পিছিয়ে থাকবে মানসিক ভাবে। যদিও তা মানতে নারাজ তাদের কোচ। তিনি বলেন, ‘অধিনায়ক নিয়ে বিতর্ক ম্যাচে কোনো প্রভাব ফেলবে বলে মনে করি না।’
৫ ফেব্রুয়ারি, ২০১৬/এমটি নিউজ২৪/এসবি/এসএস