শনিবার, ০৬ ফেব্রুয়ারী, ২০১৬, ০৪:৪৯:১১

আট দেশ মিশে গেল এক স্রোতে

আট দেশ মিশে গেল এক স্রোতে

শাহজাহান কবির : দক্ষিণ এশীয় গেমসের উদ্বোধন উপলক্ষ তবে আসামে নরেন্দ্র মোদির আগমন রাজনৈতিকভাবেও বড় ঘটনা। তার প্রমাণ গুয়াহাটির পথে-ঘাটে। ‘আহিছে সপোনব সদাগর... গগন ফলা ভাষণেবে প্রতিশ্রুতি দিবলৈ, টেঙা আম পুনব বেচিবলৈ?’ আসামি বাংলায় লেখা বিলবোর্ডের শব্দগুলো পুরোটা বুঝতে না পারলেও খোঁচাটা বুঝতে অসুবিধা হয় না।

বিজেপি প্রধান মোদিকে কংগ্রেস নেতৃত্বাধীন আসামে অভ্যর্থনাটা এমনই। মিষ্টি কথায় তারা আর ভুলতে চায় না, দাম দিয়ে কিনতে চায় না টক আম। প্রধানমন্ত্রী নির্বাচিত হওয়ার পর উত্তর-পূর্ব ভারতে মোদির প্রথম সফরও এটি। আগের দিনই রাজ্যসভায় তার শাপ-শাপান্ত হয়েছে আসামকে অর্থনৈতিকভাবে বঞ্চিত করার জন্য। পরের দিনের পত্রিকাগুলোতেও সেই খবর। এমন একটা বিরুদ্ধ পরিবেশে ইন্দিরা গান্ধী স্টেডিয়ামের মঞ্চে দাঁড়িয়ে ভারতীয় প্রধানমন্ত্রী শান্তি আর ঐক্যের বাণীই শুনিয়ে গেলেন দক্ষিণ এশীয় গেমসের উদাহরণ টেনে।

উদ্বোধনী অনুষ্ঠানের শুরুতেই ছিল মার্চ পাস্ট। পতাকাবাহকের ঠিক পেছনেই স্বেচ্ছাসেবীদের একজন। তার হাতে পানিভরা পাত্র। আফগানিস্তান দল শুরুতে ঢুকতেই ধারাভাষ্যে বলা হলো কাবুল নদীর পানি এই পাত্রে। এর পরই বাংলাদেশ, বলা হলো তাতে পদ্মার পানি। এমনি আটটি দেশের আটটি নদীর পানি সেই পাত্রগুলোতে। মার্চ পাস্টের পর সব এক পাত্রে ঢালা হলো।

দক্ষিণ এশিয়া ঐক্যের প্রতীকী পরিবেশনা সেটি। মোদি তার ভাষণেও বললেন, ‘এমন ঐক্যেই বিশ্বাসী আমি। দক্ষিণ এশিয়ায় যেমন তেমনি ভারতে। সাবকা সাথ সাবকা বিকাশ।’ তবে এবারের গর্বিত আয়োজক তো উত্তর-পূর্ব ভারত। তারা তাদের স্বকীয়তা তুলে ধরতে পিছপা হবে কেন। গুয়াহাটির উদ্বোধনী অনুষ্ঠানজুড়ে থাকল তেমনি পরিবেশনা। গান, সুর, আলোর মূর্ছনায় তারা মাতিয়ে রাখল।

বারবারই বাজল ভূপেন হাজারিকার ‘এই পৃথিবী এক ক্রীড়াঙ্গন... শান্তির প্রাঙ্গণ’ গানটির সুর। গেমসের থিম সংও তা। মাসকট হলো টিখর—গণ্ডার শাবক। যে কিনা দারুণ চঞ্চল, প্রাণশক্তিতে ভরপুর। গেমসে আসা ক্রীড়াবিদদের প্রতিনিধিই যেন সে। উদ্বোধনী অনুষ্ঠানের আগের দিন সংবাদ সম্মেলনেও রহস্যটা রেখে দেওয়া হলো কে জ্বালছেন এবারের গেমসের মশাল। মার্চ পাস্ট আর মোদির ভাষণের পরপরই সেই আনুষ্ঠানিকতা।

মাঠ প্রদক্ষিণের শুরুটা হলো শ্যুটার গগন নারাংকে দিয়ে, তার হাত থেকে অর্জুনা পদক জেতা টেবিল টেনিস খেলোয়াড় মোনালিসা পারমিতা, তার হাত থেকে সাবেক অ্যাথলেট ভবেশ কুমার, ষাটের দশকে এশিয়ান গেমস থেকে ভারতকে যিনি পদক এনে দিয়েছেন, এরপর ভারতের বর্তমান নারী হকি দলের অধিনায়ক, তাঁর হাত থেকে পদ্মশ্রী খেতাব জেতা ডিসকাস থ্রোয়ার কৃষ্ণা পুনিয়া, বিশ্ব চ্যাম্পিয়নশিপে ভারতকে পদক এনে দেওয়া লং জাম্পার মশাল হাতে নিলেন শেষের জনের আগের জন হিসেবে।

শেষে স্টেডিয়ামের নিকষ কালো অন্ধকারের মধ্যে যার ওপর আলো পড়ল তিনি আর কেউ নন—বাইচুং ভুটিয়া, মাইকে তখন ঘোষিত হচ্ছে ‘দীর্ঘদিন ভারতীয় ফুটবলের মশাল উঁচিয়ে রেখেছেন তিনি আন্তর্জাতিক অঙ্গনে।’ সিকিমের সেই বাইচুং ভুটিয়াই দক্ষিণ এশীয় গেমসের মূল আলো জ্বেলে দিলেন।

এই ইন্দিরা গান্ধী স্টেডিয়ামেই আজ থেকে শুরু হচ্ছে দক্ষিণ এশীয় গেমসে ছেলেদের ফুটবল লড়াই। বাংলাদেশ আবার এই ডিসিপ্লিনের বর্তমান চ্যাম্পিয়ন। কাল শিলংয়ে মেয়েদের শুরুটা হয়েছে খুব বাজেভাবে। নেপালের কাছে ৩-০ গোলে হেরেছে তারা। মার্চ পাস্টে যে তিনটি বড় কন্টিনজেন্ট দেখা গেল তার একটি বাংলাদেশ। লড়াইয়ে সেরা তিনে থাকা কিন্তু কঠিন।

গত দক্ষিণ এশীয় গেমসে সোনা জেতা ভারোত্তোলক হামিদুল ইসলামের পতাকা বহনের কথা মার্চ পাস্টে। কিন্তু তাঁর ইভেন্ট শুরু আজ থেকেই। লম্বা সময় পতাকা হাতে রাখার ধকল থেকে মুক্তি দিতে আরেক সোনাজয়ী সাঁতারু রুবেল রানার কাছে থাকল সেই দায়িত্ব। শিলংয়ে আজ আসরের দ্বিতীয় উদ্বোধন। সেখানে থাকা আট ডিসিপ্লিনের অ্যাথলেটরাই অংশ নেবেন মার্চ পাস্টে। বক্সার আব্দুর রহিমের হাতে থাকবে বাংলাদেশের পতাকা।- কালেরকণ্ঠ

৬ ফেব্রুয়ারি, ২০১৬/এমটি নিউজ২৪/এসবি/এসএস

Follow করুন এমটিনিউজ২৪ গুগল নিউজ, টুইটার , ফেসবুক এবং সাবস্ক্রাইব করুন এমটিনিউজ২৪ ইউটিউব চ্যানেলে