শনিবার, ০৬ ফেব্রুয়ারী, ২০১৬, ০৫:০৭:০৭

ইতিহাস বদলে বিশ্ব জয়ের পথে টাইগাররা

ইতিহাস বদলে বিশ্ব জয়ের পথে টাইগাররা

মাসুদ পারভেজ : রান করতে ভুলে যাওয়া একজন বড় মঞ্চের জন্যই ছন্দে ফেরার ইনিংসটি জমিয়ে রেখেছিলেন। কোয়ার্টার ফাইনালে যখন ঝটপট কিছু উইকেট হারিয়ে দলের জয়ের সম্ভাবনা ঝুলে যাওয়ার পথে, তখনই রানে ফিরে আসা জাকির হাসানের। আর তার সঙ্গে যুক্ত হয়ে যান একজন ‘সকল কাজের কাজি’ও।

অলরাউন্ডার বলে মেহেদি হাসান মিরাজকে ঠেকায় সাধ্য কার! কোনো না কোনো ক্ষেত্রে উল্লেখযোগ্য অবদান তিনি রাখবেনই। জাকিরের রানে ফেরার দিনে তাই ব্যাট হাতে দারুণ কার্যকারিতার প্রমাণ আরেকবার দিলেন রানে থাকা মিরাজও। দুয়ে মিলে অনূর্ধ্ব-১৯ বিশ্বকাপে নেপালের স্বপ্নযাত্রার সমাপ্তি, একই সঙ্গে স্বপ্নের সিঁড়ি বেয়ে আরো ওপরে বাংলাদেশও।

যুব বিশ্বকাপের কোয়ার্টার ফাইনাল এত দিন যাদের জন্য দুঃস্বপ্নের প্রতিশব্দই হয়ে থেকেছে শুধু। সেই ২০০৬ সালে মুশফিকুর রহিম, সাকিব আল হাসান ও তামিম ইকবালরা প্রথমবার বাংলাদেশকে শেষ আটের সিঁড়িতে নিয়েও পা ফসকে পড়ে গিয়েছিলেন। পরে আরো দুইবার (২০০৮ এবং ২০১২) একই বেদনায় নীল হওয়ার দুঃসহ অভিজ্ঞতা এবার বোধ হয় ভুলেই যাওয়া যায়। মিরাজের দল যে প্রথমবারের মতো যুব বিশ্বকাপের সেমিফাইনালে যাওয়ার তৃষ্ণা মেটাল বাংলাদেশের!

নেপালের ২১১ রান তাড়া করতে নামার পর যদিও একটা সময়ে বিয়োগান্ত ফলের কু ডাকই শোনা যাচ্ছিল। কিন্তু জাকির (৭৫*) ও মিরাজের (৫৫*) জোড়া ফিফটিতে বেজে ওঠে বিজয়ের আবাহনী সুর। তাতে সুললিত বাংলাদেশ শেষ পর্যন্ত ১০ বল বাকি থাকতেই দেখা পায় ৬ উইকেটের অনায়াস জয়ের। যে জয়ে এখন ১১ ফেব্রুয়ারির সেমিফাইনালে পাকিস্তান নয়তো ওয়েস্ট ইন্ডিজের অপেক্ষায় স্বাগতিকরা।

কোয়ার্টার ফাইনালে অবশ্য নেপালের করুণ পরিণতিই প্রত্যাশিত ছিল। কিন্তু সবার প্রত্যাশা ছাপিয়ে এত দূর উঠে আসা নেপাল কেন আরো বড় অর্জনের পিছু ধাওয়া করতে চাইবে না! তবে টেস্ট খেলুড়ে দেশের বিপক্ষে বিশ্বকাপের মতো আসরের কোয়ার্টার ফাইনালে অঘটন ঘটিয়ে দিতে অনুপ্রেরণাদায়ী উদাহরণও থাকা চাই।

অন্যদের সামনে সেই উদাহরণই যেন হয়ে উঠলেন নেপাল অধিনায়ক রাজু রিজাল, যিনি বয়স বিতর্কে জর্জরিত হয়েই খেলতে নেমেছিলেন এই ম্যাচ। কিন্তু তাতে আক্রান্ত হওয়ার কোনো প্রমাণ অন্তত তার ব্যাটে ছিল না। এক প্রান্ত আগলে রাখা ব্যাটিংয়ে সহজে হার না মানার মানসিকতারও জানান কম দিচ্ছিলেন না রাজু।

১৯ রানে ২ উইকেট হারানোর পর নেমে ওপেনার সুনীল ধামালাকে (২৫) নিয়ে বিপর্যয় সামাল দেওয়া রাজু চতুর্থ উইকেটে আরিফ শেখের (২১) সঙ্গে ৫১ রানের জুটিতে স্বাগতিক শিবিরে উদ্বেগও কম ছড়াচ্ছিলেন না। মাত্র ৫৮ বলে ফিফটিতে পৌঁছে যাওয়া নেপালি অধিনায়ক যখন ক্রমেই দুশ্চিন্তা বাড়িয়ে চলেছেন বাংলাদেশের, তখন অন্য ভূমিকায় দলকে নির্ভার করেছেন মিরাজের ডেপুটি নাজমুল হোসেনও।

নিজ দলের ব্যাটিংয়ের প্রাণভোমরা গতকাল মাত্র ৮ রান করে আউট হয়েছেন; কিন্তু দিনের শেষে তাঁকে নিষপ্রভ বলে চালিয়ে দেওয়ারও যে কোনো উপায় নেই। কারণ সুনীল আর ৮০ বলে ৮ বাউন্ডারি ও এক ছক্কায় ৭২ রানের ইনিংসে স্বাগতিকদের নাভিশ্বাস উঠিয়ে ছাড়া রাজু রিজাল তো রানআউট হয়েছেন নাজমুলের থ্রোতেই।

রাজুর বিদায়ের পর তাই আর খুব বেশি গতি পায় না নেপালের ইনিংস। অফস্পিনার মিরাজের শিকার দীপেন্দ্র আইরির (২২) মতো কারো কারো চেষ্টায় তবু ২০০ পেরোয় তারা; কিন্তু তাদের ২১১ পেরিয়ে যাওয়া বাংলাদেশের পক্ষে খুব কঠিন হওয়ার কথা ছিল না।

কিন্তু ওপেনার সাইফ হাসানের (৫) আরেকটি ব্যর্থতার পর পিনাক ঘোষ-জয়রাজ শেখ করে বসেন দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে টুর্নামেন্টে নিজেদের প্রথম ম্যাচের ভুলের পুনরাবৃত্তিই। ভুল বোঝাবুঝিতে দুজনই উইকেটের এক প্রান্তে গিয়ে দাঁড়িয়ে পড়েন, ক্রিজে ব্যাট একটু পরে রাখায় রানআউট হয়ে যেতে হয় পিনাককে (৩২)। এরপর সুনীলের অফস্পিনে লেগ বিফোরের ফাদে পড়ে জয়রাজের (৩৮) সম্ভাবনাময় ইনিংসটিও শেষ হতেই চড়ে বসার সুযোগ পেয়ে যায় নেপালও।

লেগস্পিনার সন্দীপ লামিচানেকে রিটার্ন ক্যাচ দিয়ে নাজমুল ফিরতেই মূলত দুর্ভাবনায় পড়ে যায় বাংলাদেশ। কারণ তখন যে উইকেটে ব্যাটিং অর্ডারে একটু পিছিয়ে ছয় নম্বরে নামা মিরাজের সঙ্গী ম্যাচের পর ম্যাচ রানে না থাকা জাকির। এ কারণেই বাঁহাতি এই ব্যাটসম্যানকে নিয়ে অনাস্থা ছিল। কিন্তু দল আস্থা রেখেছিল বলেই তো ম্যাচের পর ম্যাচ সুযোগ পেয়ে গেছেন এ উইকেটরক্ষক-ব্যাটসম্যান।

দল ৯৮ রানে ৪ উইকেট খুইয়ে বসার পর সেই আস্থার প্রতিদানই দিতে শুরু করলেন জাকির, সঙ্গে চেনা ছন্দে দেখা দিল মিরাজের ব্যাটও। পঞ্চম উইকেটে ১১৭ রানের অবিচ্ছিন্ন পার্টনারশিপ তাঁদের। টুর্নামেন্টে নিজের দ্বিতীয় ফিফটি করার পথে ২৫ রানে থাকা মিরাজকে সন্দীপের বলে স্টাম্পিংয়ের সুযোগ নষ্ট করে স্বাগিতকদের জয়ের পথ প্রশস্ত করায় অবশ্য ভূমিকা আছে নেপাল অধিনায়ক রাজু রিজালেরও!

ওভাবে বেঁচে যাওয়া মিরাজ দিনের শেষে আরো বেশি উজ্জ্বলও হয়েছেন। বাংলাদেশকে প্রথমবারের মতো যুব বিশ্বকাপের সেমিফাইনালে তুলে নেওয়া অধিনায়কের আনন্দ দ্বিগুণই হয়েছে বল হাতেও ৫১ রানে ১ উইকেট নেওয়ায়। ম্যাচসেরার পুরস্কারটি যে হাতে উঠেছে তাতেই। আর টানা ব্যর্থতার পরও তার ওপর আস্থা রেখে যাওয়ার পুরস্কারও দলকে দিয়েছেন জাকির! দুয়ে মিলে দেশের মাটিতে বিশ্ব জয়ের পথে আরেক পা বাড়াল বাংলাদেশও। -কালেরকণ্ঠ

নেপাল : ৫০ ওভারে ২১১/৯

বাংলাদেশ : ৪৮.২ ওভারে ২১৫/৪

ফল : বাংলাদেশ ৬ উইকেটে জয়ী

৬ ফেব্রুয়ারি, ২০১৬/এমটি নিউজ২৪/এসবি/এসএস

Follow করুন এমটিনিউজ২৪ গুগল নিউজ, টুইটার , ফেসবুক এবং সাবস্ক্রাইব করুন এমটিনিউজ২৪ ইউটিউব চ্যানেলে