স্পোর্টস ডেস্ক : টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে (সঙ্গে তার ঠিক আগে এশিয়া কাপেও) ভারতের পনেরো জনের দলে মোহাম্মদ সামিকে ফিরিয়ে আনা হল আজ। যে সামি দেশের নীল জার্সি গায়ে শেষ ম্যাচ খেলেছেন ৩১৬ দিন আগে। ২০১৫ বিশ্বকাপ (৫০ ওভার) সেমিফাইনালে অস্ট্রেলিয়ার বিরুদ্ধে সিডনিতে।
ওই টুর্নামেন্টে তিনি দলের পক্ষে দ্বিতীয় সর্বোচ্চ এবং সব দেশ মিলিয়ে যুগ্ম তৃতীয় সর্বাধিক উইকেটশিকারি থাকলেও তার পরেই হাঁটুতে অস্ত্রোপচার করাতে হয়েছিল শামিকে। বেশ কয়েক মাস পরে বাংলার হয়ে প্রতিযোগিতামূলক ক্রিকেটে ফেরেন বিজয় হাজারে ট্রফিতে (জাতীয় ওয়ান ডে টুর্নামেন্ট)। ধোনির দলের সঙ্গে অস্ট্রেলিয়াতেও গিয়েছিলেন ওয়ান ডে সিরিজে।
কিন্তু শুরুতেই নেটে বল করতে গিয়ে হ্যামস্ট্রিংয়ে চোট পেয়ে দেশে ফিরে আসতে বাধ্য হন। সামির বদলি জসপ্রীত বুমরাহ তার পর অস্ট্রেলিয়ার মাটিতে অধিনায়কের কথাতেই ‘ভারতের আবিষ্কার’ হয়ে উঠলেও দেখা গেল, বিশ্বকাপের মতো সর্বোচ্চ মঞ্চে সেই ধোনিই তার পুরনো পেস-যোদ্ধার উপর আস্থা হারাননি।
এ দিন রাজধানীতে সন্দীপ পাটিলদের নির্বাচনী বৈঠকে ভারতের সীমিত ওভারের অধিনায়ক ধোনি উপস্থিত হয়েছিলেন সেনাবাহিনীর জওয়ানদের জ্যাকেট গায়ে। কাজেও যেন সেনাপতির মননেই নিজের শিবিরের এক অভিজ্ঞ যোদ্ধার উপর আস্থা রাখেন তিনি। সামি ভারতের হয়ে শেষ টি-টোয়েন্টি খেলেছেন আরও আগে। ২০১৪-র সেপ্টেম্বরে ইংল্যান্ডের বিরুদ্ধে বার্মিংহামে।
পঁচিশ বছর ১৫৫ দিন বয়সি পেসার দেশের হয়ে টেস্ট, ওয়ান ডে, টি-টোয়েন্টির মধ্যে সবচেয়ে কম খেলেছেন শেষেরটাই। চার ম্যাচে উইকেট সংখ্যা ৫। সব মিলিয়ে টি-টোয়েন্টি কেরিয়ারে ৪২ ম্যাচে ৫২ উইকেট সামির। তবু তার বিশাল আন্তর্জাতিক ক্রিকেট অভিজ্ঞতা খুব সম্ভবত সামির পক্ষে গিয়েছে।
সামি ঢোকায় ভুবনেশ্বর কুমারের উপর কোপ পড়ে। যেখানে এখনও দেশের হয়ে অভিষেক না ঘটা তরুণ বাঁ-হাতি স্পিনার পবন নেগি এশিয়া কাপ আর বিশ্বকাপের দলে থাকা সত্ত্বেও হরভজন সিংহও রয়েছেন টিমে। এবং উপমহাদেশের উইকেটে দু’টো টুর্নামেন্টের কথা ভেবে নির্বাচকেরা চার স্পিনার রেখেছেন পনেরো জনের জাতীয় টিমে।
সামির চূড়ান্ত ফিটনেস এখনও সরকারি ভাবে ঘোষিত না হলেও নির্বাচক কমিটি তার অপেক্ষায় থাকেনি। বরং বোর্ড সচিব অনুরাগ ঠাকুরের পাশে বসে সাংবাদিকদের নির্বাচক প্রধান সন্দীপ পাটিল এ দিন বললেন, ‘‘সামি এই মুহূর্তে সেরে উঠেছে। নেটে আবার বলও করছে। ওকে এখনই দলে রাখার সুবিধেটা হল, টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে ভারতের প্রথম ম্যাচের আগে ও এক মাস সময় পাবে। ফলে সামির চূড়ান্ত ফিটনেসের দিকে আমরা অনেক দিন ধরে নজর রাখার সময় পাব।’’
নেগিকে সামনের সপ্তাহে ঘরের মাঠে শুরু শ্রীলঙ্কার বিরুদ্ধে টি-টোয়েন্টি সিরিজে ভারতীয় দলে ডাকা দেখেই দীপ দাশগুপ্ত-সহ অনেক বিশেষজ্ঞের মনে হয়েছিল, নিশ্চয়ই এই স্পিনার-কাম-হার্ড হিটার ব্যাটসম্যানকে নিয়ে বিশ্বকাপে বিশেষ কোনও পরিকল্পনা আছে নির্বাচক এবং টিম ম্যানেজমেন্টের। সেটাই আজ সত্যি হল। পাশাপাশি সদ্য অস্ট্রেলিয়ায় দারুণ ব্যাট করা মণীশ পাণ্ডে কিংবা উপমহাদেশের (বাংলাদেশ) পিচে ২০১৪ টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে সফল লেগ স্পিনার অমিত মিশ্রর সুযোগ না পাওয়া নিয়ে প্রশ্ন উঠলে বোধহয় অবাকের নেই।
যা আন্দাজ করেই হয়তো চেয়ারম্যান সন্দীপ বললেন, ‘‘অস্ট্রেলিয়া সফরে আমরা পরীক্ষা-নিরীক্ষা করেছি। তার ভিত্তিতে আলোচনা করেছি বিকল্প হিসেবে কোন ক্রিকেটাররা ভাল। টি-টোয়েন্টিতে আপনি মাঠে বেশি সময় পাবেন না। আমরা সেটা মাথায় রেখে কয়েকটা নাম নিয়ে আলোচনা করেছি। অতীতে এই ফর্ম্যাটে ‘যখন যেমন, তখন তেমন’ পলিসি কাজ দিয়েছে। সবচেয়ে বড় কথা, নির্বাচনের ব্যাপারে আবেগী হয়ে পড়াটা কাজের কথা নয়।’’
পাটিলের দাবি, মণীশকে বাদ দেওয়া হয়নি। বরং তিনি নির্বাচকদের ভবিষ্যৎ পরিকল্পনায় আছেন রীতিমতো। ‘‘আমরা কেবল ১৫-১৬ ক্রিকেটারের পারফরম্যান্স নিয়েই আলোচনা করিনি। সমস্ত ঘরোয়া টুর্নামেন্টের পারফরম্যান্সকে মাথায় রেখেছি। তার পরে এই পনেরোটা নাম পছন্দ করেছি।’’
৬ ফেব্রুয়ারি, ২০১৬/এমটি নিউজ২৪/এসবি/এসএস