সোমবার, ০৮ ফেব্রুয়ারী, ২০১৬, ০৭:০৫:৩৯

ম্যাচ ফিক্সিং কাণ্ডে জড়িয়ে কলঙ্কিত ধোনি

ম্যাচ ফিক্সিং কাণ্ডে জড়িয়ে কলঙ্কিত ধোনি

স্পোর্টস ডেস্ক : ম্যাচ গড়াপেটা–কাণ্ড ভারতীয় ক্রিকেটে কোনও নতুন ব্যাপার নয়। মনোজ প্রভাকর, মোহাম্মদ আজহারউদ্দিন প্রমুখ বহু ক্রিকেটারের ম্যাচ গড়াপেটায় যুক্ত থাকার ঘটনা জনসমক্ষে এসেছে।

অতি সম্প্রতি, আইপিএলে চেন্নাই সুপার কিংস এবং রাজস্থান রয়্যালসকে বহিষ্কারের ঘটনা কিংবা তিন ক্রিকেটারের নির্বাসন, সবই এখনও টাটকা। কিন্তু রোববার যে ঘটনা ঘটল, তা সত্যি হলে, আগের সমস্ত ঘটনাকেই নিঃসন্দেহে ছাপিয়ে যেতে চলেছে। কেননা, এবার ম্যাচ গড়াপেটা–কাণ্ডে জড়িয়ে গেল খোদ মহেন্দ্র সিং ধোনির এবং ভারতীয় ক্রিকেট দলের নাম!

রোববার দিল্লির প্রেস ক্লাবে সাংবাদিকদের সামনে একটি হিন্দি দৈনিকের তরফে স্টিং অপারেশনের ভিডিও প্রকাশ করা হয়। সম্প্রতি দিল্লি অ্যান্ড ডিস্ট্রিক্ট ক্রিকেট অ্যাসোসিয়েশনের সম্পাদক এবং ভারতীয় দলের সাবেক ম্যানেজার সুনীল দেবকে স্টিং অপারেশন করে ওই হিন্দি দৈনিক। সেই ভিডিওই এদিন প্রকাশ করা হয়।

তাতে দেব যা বলেছেন, তা শুনে চক্ষু চড়কগাছ সাংবাদিকদের। দেব সরাসরি দাবি করেছেন, ২০১৪ সালে ম্যাঞ্চেস্টারে ইংল্যান্ড সফরের চতুর্থ টেস্ট গড়াপেটা করেছিল ধোনির দল। তার আরও দাবি, ধোনির প্রত্যক্ষ মদতও ছিল তাতে। ভিডিওতে দেবকে বলতে শোনা গেছে, ‘রাতভর বৃষ্টির পর পিচের অবস্থা দেখে, টিম মিটিংয়েই ঠিক করা হয়েছিল, টসে জিতলে প্রথমে ব্যাট করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে। কিন্তু আমরা অবাক হয়ে যাই, ধোনি টসে জিতে ব্যাটিংয়ের সিদ্ধান্ত নেওয়ায়।’

দেব এও জানান, সাবেক ইংল্যান্ড তারকা এবং কমেন্টেটর জিওফ্রে বয়কটও ধোনির সিদ্ধান্তে রীতিমতো অবাক হন এবং বিস্ময় প্রকাশ করেন। তার মতে, প্রথমে ব্যাট করা ছিল ধোনির একেবারেই নিজস্ব সিদ্ধান্ত এবং তিনি নিশ্চিত, অধিনায়ক ম্যাচ গড়াপেটা করেছেন। উল্লেখ্য, ম্যাঞ্চেস্টারের সেই ম্যাচে ভারত ব্যাট নিয়ে প্রথম ইনিংসে ১৫২ এবং দ্বিতীয় ইনিংসে ১৬১–তে অল আউট হয়ে যায়। ইংল্যান্ড ম্যাচটি জেতে এক ইনিংস এবং ৫৪ রানে।

দেব জানিয়েছেন, ফিরে আসার পর তিনি ব্যাপারটি বিসিসিআই–কে জানান। এমনকি তৎকালীন বোর্ড সভাপতি এন শ্রীনিবাসনের অফিসে বসেই তিনি তাকে ঘটনার ব্যাপারে জানিয়ে সেই চিঠি লেখেন। কারণ, তিনি চাননি ওই চিঠির কথা জনসমক্ষে আসুক। তবে, চিঠি পাঠালেও বোর্ডের তরফে কোনও ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি।

দেব জানিয়েছেন, তার কাজের জন্য শ্রীনিবাসন তারিফ করলেও, কোনও দিন যেচে এই চিঠির প্রেক্ষিতে ব্যবস্থা নিতে যাননি। এখানে ফের শ্রীনিবাসন–ধোনির যুগলবন্দীটা সামনে চলে এসেছে। কিন্তু এতবড় একটা ঘটনা প্রকাশ্যে আসা সত্ত্বেও সে–কথা এতদিন প্রকাশ করেননি কেন? তিনি কী ব্যাপারটা চন্দ্রচূড় কমিশনকে (গড়াপেটা সংক্রান্ত বোর্ডের নিজস্ব কমিটি) জানিয়েছিলেন? ‘না। কারণ, মানুষ আমার কথা বিশ্বাস করত না,’ পরিষ্কার বলে দিয়েছেন দেব। তিনি এও জানান, খেলোয়াড়দের নাম প্রকাশ্যে আনা হলে তার জীবনহানির আশঙ্কা ছিল। সেই ভয়ে গোপনেই যাবতীয় কাজ সারতে চেয়েছেন।

তবে শেষদিকে কিছুটা প্যাঁচেও ফেলে দিয়েছেন দেব। যে সাংবাদিক স্টিং অপারেশন চালিয়েছিলেন, তাকে স্পষ্ট বলে দিয়েছেন, যদি তাকে কোনওভাবে ফাঁদে ফেলার চেষ্টা করা হয়, তবে তিনি সম্পূর্ণ উল্টো অবস্থান নিতে বাধ্য হবেন। তার কথায়, ‘আমি ৪০ বছর ধরে বোর্ডের সঙ্গে যুক্ত রয়েছি। যদি আমাকে কোনওভাবে ফাঁদে ফেলার চেষ্টা করা হয়, তবে আমি সম্পূর্ণ উল্টো কথা বলব এবং বিসিসিআই যে বিশ্বের সেরা বোর্ড, তা বলতেও দ্বিধা করব না।’

আইপিএলে ম্যাচ গড়াপেটা–কাণ্ডের তদন্তে জড়িত বিচারপতি মুকুল মুদগালকে প্রশ্ন করা হলে, তিনি অবশ্য উড়িয়ে দিয়েছেন ম্যাচ গড়াপেটার কথা। তার সাফ কথা, এরকম ঘটনা সত্যিই হয়ে থাকলে, বোর্ডকে আরেকবার মেইল করে এই বিষয় সম্পর্কে জানতে চাওয়া যেত। ‘ম্যাচ গড়াপেটা ব্যাপারটাকে যত বড় করে দেখা হয়, আদৌ তা ততটা নয়। দু–একজন খেলোয়াড় সাধারণত যুক্ত থাকে,’ মন্তব্য মুদগালের।

উদাহরণ দিয়ে মুদগাল এও বলেছেন, পরে লিডসের মতো মাঠ, যার সঙ্গে ম্যাঞ্চেস্টারের খুব একটা তফাত নেই, সেখানেও একই পরিস্থিতিতে আগে ব্যাট করে জিতেছে ভারত। তাই এই বিষয়টিতে গুরুত্ব দেওয়ার মতো বিষয় নেই (উল্লেখ্য, ওই সফরে লিডসে একমাত্র পঞ্চম একদিনের ম্যাচটিই হয়েছিল। সেটাতে ভারত পরে ব্যাট করে জেতে)।

আইপিএলের ম্যাচ গড়াপেটাতেই হইচই পড়ে গিয়েছিল ক্রিকেট মহলে। যার জেরে দু’বছর নির্বাসিত চেন্নাই এবং রাজস্থান। বেশ কিছু ক্রিকেটারও আজীবন নির্বাসিত। কিন্তু এখানে ফের আরও একবার ভারতের সম্মান জড়িত। কোনও ব্যাবস্থা নেওয়া হবে? রাত পর্যন্ত কোনও সেরকম খবর নেই। সংবাদ সংস্থা

৮ ফেব্রুয়ারি, ২০১৬/এমটি নিউজ২৪/এসবি/এসএস

Follow করুন এমটিনিউজ২৪ গুগল নিউজ, টুইটার , ফেসবুক এবং সাবস্ক্রাইব করুন এমটিনিউজ২৪ ইউটিউব চ্যানেলে