মঙ্গলবার, ০৯ ফেব্রুয়ারী, ২০১৬, ১১:১০:৫০

দুই গ্রেট ক্রিকেটারের জন্মদিন আজ, তাদের কালজয়ী রেকর্ড ভাঙতে পারবেন কি?

দুই গ্রেট ক্রিকেটারের জন্মদিন আজ, তাদের কালজয়ী রেকর্ড ভাঙতে পারবেন কি?

স্পোর্টস ডেস্ক : ব্যাটসম্যানদের স্পিন বিষে নীল করতে চলেছেন লেকার। তার হাত থেকে বের হওয়া বলের সঙ্গে কখনো আগুনের গোলার তুলনা হতো না। সুইংয়ের বিষও থাকত না তার বলে। বরং একঘেয়ে এক পেসারই বলা যায় গ্লেন ম্যাকগ্রাকে। আর জিম লেকার, তিনি অফ স্পিনার। দর্শকের চোখে অনাকর্ষণীয় অফ স্পিনই করতেন (মুত্তিয়া মুরালিধরনকে হিসাবের বাইরে রাখুন)। একঘেয়ে এই দুই বোলারই কিন্তু ক্রিকেটের এমন দুই চূড়ায় বসে আছেন যেখানে ওঠা প্রায় অসম্ভব।

লম্বা দুই পা আর ছটফটানি দেখে সতীর্থরা নাম দিয়েছিলেন ‘পায়রা’। শান্তির দূত ডাক নাম নিয়েই ক্রিকেট মাঠকে রীতিমতো রণাঙ্গন বানিয়ে ফেলতেন ম্যাকগ্রা। ব্রেট লি কিংবা শোয়েব আখতারের মতো গতি ছিল না তার বলে, জেসন গিলেস্পির মতো আগ্রাসীও ছিলেন না আবার ওয়াসিম আকরামের মতো তূণে একগাদা তির নিয়েও নামতেন না মাঠে। তার ছিল একটাই শক্তি, একাগ্রতা। যন্ত্রমানবের মতো একটানা বল করে যেতেন অফস্টাম্পের বাইরের ‘অনিশ্চয়তার করিডরে’। যেখানে বল করলে বিশ্বের সেরা ব্যাটসম্যানকেও দুবার ভাবতে হতো বলটি নিয়ে। এই সরল সোজা বোলিং দর্শন দিয়েই টেস্ট ক্রিকেটে ৫৬৩ উইকেট পেয়েছেন এই অস্ট্রেলিয়ান।

পেস বোলারদের মধ্যে সর্বোচ্চ উইকেট তারই। এমন নয় যে টানা বল করে একগাদা রান দিয়ে সস্তা উইকেট পেয়েছেন তিনি। টেস্ট ক্রিকেটের শীর্ষ দশ বোলারের মাঝে তার ২১.৬৪ বোলিং গড়টাই সেরা। আর প্রতিটি উইকেট পেতে তাকে মাত্র ৫১.৯টি বল খরচ করতে হয়েছে। সেরা দশে থাকা বোলারদের মাঝে শুধু রিচার্ড হ্যাডলির আছে এর চেয়ে কম বল প্রতি উইকেট নেওয়ার রেকর্ড। বোলারদের জন্য টেস্ট ক্রিকেট কত কঠিন সেটি পরিসংখ্যানে চোখ রাখলেই বোঝা যায়। বর্তমান ক্রিকেটারদের মধ্যে সবচেয়ে এগিয়ে থাকা দুজন জেমস অ্যান্ডারসন(৪৩৩) ও ডেল স্টেইনই(৪০৬) চার শ উইকেটের মাইলফলক ছুঁয়েছেন। দুজনেরই বয়স মধ্য ত্রিশের কাছে, দুজনেই চোটের নিয়মিত শিকার। এ ছাড়া মাত্রাতিরিক্ত ক্রিকেট, টি-টোয়েন্টির আগ্রাসন মিলিয়ে ইদানীং তো ক্রিকেটাররা টেস্ট ক্রিকেট থেকে অবসর নিয়ে নিচ্ছেন খুব দ্রুত। সাদা পোশাকে পেস বোলারদের মধ্যে সর্বোচ্চ উইকেট শিকারির চূড়া থেকে ম্যাকগ্রাকে নামানোটা তাই কঠিনই হবে।

সেই পরিচিত অ্যাকশনে ম্যাকগ্রা। সংগৃহীত ছবিম্যাকগ্রার ক্ষেত্রে তবুও ‘হলেও হতে পারে’ বলে একটা কথা ঝুলিয়ে রাখা যাচ্ছে। কিন্তু ইংলিশ অফ স্পিনার লেকারের ক্ষেত্রে প্রায় কোনো রকম ভণিতা না করেই বলে দেওয়া যায়, এ রেকর্ড ভাঙা অসম্ভব! আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে ৪৬ টেস্টে ১৯৩ উইকেট। ইনিংসে ৫ উইকেট ৯ বার। না, খুব আহামরি কিছু তো নয়। টেস্টে ২০০ উইকেট পাওয়া বোলার অসংখ্য অনেক না হলেও খুব একটা কম নয়। বিশ্বের সেরা বোলারদের তালিকার সেরা দশেও কখনো তার নাম আসে না। সেরা অফ স্পিনারের কথা বললে হয়তো ঠেলেঠুলে সেরা পাঁচে জায়গা মেলে তার। ইংল্যান্ডের বাইরে খুব একটা সফল ছিলেন না তিনি। কিন্তু এসব তো শুধুই পরিসংখ্যান আর বিভিন্ন মাপকাঠিতে মাপা এক বোলারের কথা বলা হলো। লেকার যে এসবের বাইরে করেছেন অবিশ্বাস্য এক কাণ্ড। টেস্টের এক ম্যাচে প্রতিপক্ষের সব উইকেট নেওয়া কী কারও পক্ষে সম্ভব নাকি? লেকারের রেকর্ড ভাঙতে হলে যে এ কাজটিই করতে হবে।

আজ থেকে প্রায় ৬০ বছর আগে ওল্ড ট্রাফোর্ডে অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে দুই ইনিংস মিলিয়ে ১৯ উইকেট পেয়েছিলেন। অস্ট্রেলিয়ার প্রথম ইনিংসে তৃতীয় উইকেটটি পেয়েছিলেন সতীর্থ টনি লক। ব্যস, এরপর আর স্কোর কার্ডে অন্য কোনো বোলারের নাম বসাতে দেননি লেকার। প্রথম ইনিংসে ৯ উইকেটের সঙ্গে দ্বিতীয় ইনিংসে ১০ উইকেট।

এক ম্যাচে ১৯ উইকেট, টেস্ট ম্যাচ তো বটেই প্রথম শ্রেণির ক্রিকেটেও এই কাজ এখনো কেউ করে দেখাতে পারেনি। তার সবচেয়ে কাছে আছেন যিনি সেই সিডনি বার্নসের ১৭ উইকেটের ঘটনাও ১০২ বছরের পুরোনো। তাই মস্ত এক ঝুঁকি নিয়েই ভবিষ্যদ্বাণী করে রাখা যায়, লেকার কীর্তি ভাঙতে পারবেন না কেউ।
প্রশ্ন উঠতেই পারে, হঠাৎ এই দুই বোলারকে নিয়ে পড়া কেন? ঘটনাচক্রে ইতিহাসে নাম লেখানো দুই যুগের দুই কিংবদন্তির জন্ম আবার একই দিনে, ৯ ফেব্রুয়ারি! শুভ জন্মদিন, জিম লেকার ও গ্লেন ম্যাকগ্রা!-প্রথম আলো
৯ ফেব্রুয়ারি ২০১৬/এমটিনিউজ২৪/হাবিব/এইচআর

Follow করুন এমটিনিউজ২৪ গুগল নিউজ, টুইটার , ফেসবুক এবং সাবস্ক্রাইব করুন এমটিনিউজ২৪ ইউটিউব চ্যানেলে