স্পোর্টস ডেস্ক: সদ্যই অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে ৩-০ ব্যবধানে টি-টোয়েন্টি সিরিজ জিতে আসার পর ঘরের মাঠে শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে কালকের পারফরম্যান্সটা বেশ ‘বেসুরো’ই ঠেকছে ভারতের কাছে। অস্ট্রেলিয়ায় দারুণ খেলে আসা ভারতীয় ব্যাটসম্যানরা পুনের সবুজ উইকেটে লঙ্কান পেসারদের গতি আর মুভমেন্টের কাছে যেভাবে হার মানল, তাতে হতাশ অধিনায়ক মহেন্দ্র সিং ধোনি। হতাশার পাশাপাশি ম্যাচ শেষে পুনের উইকেটকে একহাত নিতে ছাড়েননি তিনি। বলেছেন, উইকেটটাকে তাঁর কাছে ভারতীয় উইকেট মনে হয়নি। মনে হয়েছে, এটা যেন ‘ইংলিশ উইকেট’।
গতকালকের উইকেটটি আসলেই চমকে দিয়েছে অনেককে। ভারতে এ ধরনের সবুজ উইকেট দেখতে পাওয়া সত্যিই বিরল। শেষ কবে ভারতীয় উইকেটে পেসাররা বোলিং করে এত আনন্দ পেয়েছে, এত উপভোগ করেছে, কে জানে। শুধু লঙ্কান পেসাররা নয়; ভারতীয় পেসাররাও দুর্দান্ত বোলিং করছিল। মাত্র ১০১ রানের পুঁজি নিয়েও দারুণ লড়াইয়ের ইঙ্গিত দিয়েছিলেন দুই উদ্বোধনী পেসার আশিস নেহরা আর জেসপ্রীত ভুমরা। বেশির ভাগ বল কোমর উচ্চতায় ধেয়ে আসছিল। সঙ্গে ছিল মুভমেন্ট। অসহায় দেখাচ্ছিল লঙ্কান ব্যাটসম্যানদেরও। প্রথম দুটি উইকেটও নেহরা তুলে নিয়েছেন বাউন্সারে। পুল করতে দিয়ে মিড অনে ক্যাচ। উইকেটের পেছনে ধোনিরও বেশ ঘাম ঝরছিল।
কিন্তু কালকের ম্যাচটি আবারও সেই প্রশ্ন তুলে দিল। উইকেট একটু কঠিন হলেই কেন এখনকার ব্যাটসম্যানরা কেন এত অসহায় হয়ে পড়েন? ভারতের তারকাখচিত ব্যাটিং লাইন আপ অস্ট্রেলিয়াকে মাত্রই কদিন আগে ৩-০তে হোয়াইটওয়াশ করে আসা যেন ভুলে গেল। ৭২ রান তুলতেই ৮ উইকেট নেই! এর মধ্যে ৬ জনের মিলিত রান ২৩!
একই উইকেটে শুরুতে ভুগলেও শেষে ১২ বল আর ৫ উইকেট হাতে রেখেই শ্রীলঙ্কা জিতেছে। তবু ধোনি ম্যাচ শেষে কাঠগড়ায় তুললেন পুনের উইকেটকেই, ‘গত এক মাসে (অস্ট্রেলিয়ায়) যে ধরনের উইকেটে খেলেছি, তার চেয়ে একেবারেই ভিন্ন ধরনের উইকেট ছিল এটি। এটা যেন ছিল ইংলিশ উইকেটের মতো। বল হঠাৎ হঠাৎ লাফিয়ে আসছিল, পেসেও কম-বেশি হচ্ছিল। উইকেট ঠিকমতো রোল করাও হয়নি। এই উইকেটে আমরা একটু বেশিই শট খেলে ফেলেছি, যেটা ঠিক হয়নি।’
ধোনি যা-ই বলুন, তরুণ লঙ্কান পেসারদের সামনে রীতিমতো অসহায় ছিলেন ভারতের ব্যাটসম্যানরা। উইকেটে সিম মুভমেন্ট এত বেশি হচ্ছিল, যে ভারতীয় তারকা ব্যাটসম্যানরা নিজেদের স্বাভাবিক খেলার খানিকটাও খেলতে পারেননি। সবুজ ঘাস থাকলেও ভারতের কোনো উইকেটে যে নিজেদের ব্যাটসম্যানদের এভাবে নাকাল হতে দেখবেন, সেটা বোধ হয় ভাবেননি খোদ ভারত অধিনায়কই। গতকালই প্রথম আন্তর্জাতিক ম্যাচ খেলতে নামা কাসুন রাজিথা তুলে নিয়েছেন ৩ উইকেট।
ধোনির তাই ব্যাটসম্যানদেরও সমালোচনা করতেই হলো। স্বীকার করলেন, ১৬০ রানের উইকেট না হলেও এখানে ১৩৫-১৪০ ওঠাই উচিত ছিল। ১০১ মেনে নেওয়া কঠিন। সেটিও হতো না, যদি নয়ে নেমে অশ্বিন ইনিংস সর্বোচ্চ ৩১ রান না করতেন। পরাজিত অধিনায়ককে এমন হারের মধ্যেও ইতিবাচক কিছু খুঁজে নিতে হয়। ধোনিও তা-ই করলেন। এত কম পুঁজি নিয়েও শুরুতেই তাঁর বোলাররা ম্যাচটি ছেড়ে দেয়নি, লড়াই করেছে। এটাই ধোনির একমাত্র পাওয়া।
তবে দিনে দিনে ক্রিকেটটা এত বেশি ব্যাটসম্যানদের খেলা হয়ে উঠছে, পেসাররা এখন এত বেশি সৎ ছেলের অনাদর পায়; নিরপেক্ষ ক্রিকেট সমর্থক হলে কালকের ম্যাচটি আপনাকে আনন্দই দেবে। এমন উইকেটই তো চাই, যেখানে ব্যাটে-বলের লড়াইটা হবে সমানে-সমান! -প্রথম আলো
১০ ফেব্রুয়ারি, ২০১৬/এমটিনিউজ২৪/আরিফুর রাজু/এআর