স্পোর্টস ডেস্ক: বিপিএলে শেষে শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে ঘরের মাঠে তিন ম্যাচের টি-টোয়েন্টি সিরিজ দিয়েই আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে ফিরেছে বাংলাদেশ জাতীয় ক্রিকেট দল।
তবে লঙ্কানদের বিপক্ষে প্রথম ম্যাচেই হেরে পিছিয়ে পড়ে লাল-সবুজের দল। এরপর সিরিজে সমতায় ফেরার লক্ষ্যে সিলেট আন্তর্জাতিক ক্রিকেট স্টেডিয়ামে আজ সফরকারীদের বিপক্ষে টসে জিতে বোলিংয়ের সিদ্ধান্ত নেন টাইগারদের অধিনায়ক নাজমুল শান্ত।
আগে ব্যাট করতে নেমে কুশল মেন্ডিস ও কামিন্দু মেন্ডিসের ৬৬ রানের জুটির পর ষষ্ঠ উইকেট জুটিতে অ্যাঞ্জেলো ম্যাথিউস এবং দাসুন শানাকার করা ৫৩ রানের সুবাদে নির্ধারিত ২০ ওভারে ৫ উইকেট হারিয়ে ১৬৫ রান সংগ্রহ পায় শ্রীলঙ্কা।
জবাবে ব্যাট করতে নেমে দুই ওপেনারের দুর্দান্ত সূচনার পর তৃতীয় উইকেটে শান্ত-হৃদয়ের ৮৭ রানের জুটিতে ১১ বল হাতে রেখেই ৮ উইকেটের দারুণ এক জয় পেয়েছে বাংলাদেশ। এই জয়ে তিন ম্যাচে সিরিজে ১-১ সমতায় ফিরেছে টাইগাররা। ফলে শেষ ম্যাচ এখন হয়ে দাঁড়িয়েছে শিরোপা নির্ধারণী।
লঙ্কানদের দেয়া ১৬৬ রানের লক্ষ্যে ব্যাট করতে নেমে দুর্দান্ত সূচনা পেয়েছে বাংলাদেশ। দুই ওপেনার লিটন দাস ও সৌম্য সরকার মিলে প্রথম তিন ওভারেই স্কোরবোর্ডে তুলেছিলেন ২৮ রান। এদিকে চতুর্থ ওভারের প্রথম বলের পর মাঠে কিছুক্ষণ চলে সৌম্যর নট আউট বিতর্ক।
তবে বিতর্কের পরও ছন্দ ধরে রেখেছিলেন এ দুজন। দুই ওপেনার মিলে উদ্বোধনী জুটিতেই স্কোরবোর্ডে তুলেছিলেন ৬৮ রান। তবে রিভিউ নিয়ে টিভি আম্পায়ারের দেয়া বিতর্কিত সিদ্ধান্তে বেঁচে গিয়েই পরে আর নিজের ইনিংস বড় করতে পারেননি সৌম্য। সপ্তম ওভারে মাথিশা পাথিরানার বলে অন্যঞ্জেলো মাথিউসের মুঠোবন্দী হয়ে সাজঘরেন তিনি। আউট হওয়ার আগে ২২ বলে ৫ চারে করেন ২৬ রান।
সৌম্য ফেরার পর আরেক ওপেনার লিটনও ফিরেছেন দলীয় ৮৩ রানেই। ২৪ বলে ৩৬ রান করে পাথিরানার দ্বিতীয় শিকার হয়ে হয়ে সাজঘরে ফিরেন তিনি। দুই ওপেনার সাজঘরে ফেরার পর দলের হাল ধরেন অধিনায়ক শান্ত এবং তাওহীদ হৃদয়। লঙ্কান বোলারদের দেখেশুনে খেলে দুজন মিলে সচল রাখেন রানের চাকা।
তৃতীয় উইকেটে শান্ত-হৃদয় মিলে স্কোরবোর্ডে তুলেছেন ৫৫ বলে ৮৭ রান। এ দুজনের ব্যাটেই জয়ের বন্দরে ভিড়ে টাইগাররা। দলকে জেতানোর পথে ৪ চার আর ২ছয়ে ৩৮ বলে ৫৩ রানের অপরাজিত ইনিংস খেলেছেন অধিনায়ক শান্ত। আর হৃদয় অপরাজিত ছিলেন ২৫ বলে ৩২ রান করে।
এর আগে টসে জিতে অধিনায়ক শান্ত বোলিংয়ের সিদ্ধান্ত নেয়ার পর বল হাতে বাংলাদেশের দুর্দান্ত সূচনা এনে দেন শরিফুল ইসলাম। টাইগার এই পেসারের করা প্রথম ওভারে কোনো রানই নিতে পারেনি শ্রীলঙ্কা। শরিফুলের তুলে দেয়া সুরই দ্বিতীয় ওভারে ধরে রাখেন তাসকিন। এরই ধারাবাহিকতায় ইনিংসে নিজের করা চতুর্থ বলেই সাফল্যের দেখা পান তিনি।
টাইগার স্পিডস্টারের করা চতুর্থ বল আকাশে ভাসিয়ে মারেন লঙ্কান ওপেনার আভিষ্কা ফার্নান্দো। তবে উড়িয়ে মারতে গিয়ে তাসকিনের হাতেই ক্যাচে পরিণত হন তিনি। এদিকে দ্বিতীয় ওভারেই এক ওপেনার ফিরলেও আরেক ওপেনার কুশল মেন্ডিস এবং তিনে নামা কামিন্দু মেন্ডিসের ব্যাটে ঘুরে দাঁড়িয়েছে লঙ্কানরা। এ দুজন মিলে তৃতীয় উইকেট জুটিতে ৫২ রানের জুটি।
তাসকিনের করা দ্বিতীয় এবং ম্যাচের চতুর্থ ওভারেই ১৭ রান নেন দুই লঙ্কান ব্যাটার। এরপর ষষ্ঠ ওভারে মুস্তাফিজের করা বলেও হাত খুলেই খেলেছেন এ দুজন। দ্বিতীয় উইকেট জুটিতে দুজন মিলে স্কোরবোর্ডে তুলেছেন ৪২ বলে ৬৬ রান। তবে নবম ওভারে টাইগারদের কাঙ্খিত ব্রেক্তহ্রু এনে দিয়েছেন সৌম্য সরকার। তাঁর করা ওভারের চতুর্থ বলে কট বিহাইন্ড হয়ে সাজঘরে ফিরেছেন কুশল মেন্ডিস। আউট হওয়ার আগে ২১ বলে ৩ ছয় আর ২ চারে ৩৬ রান করেছেন তিনি।
এদিকে কুশল মেন্ডিস ফেরার পরের ওভারেই ফিরেছেন কামিন্দু মেন্ডিসও। দশম ওভারের চতুর্থ বলে দৌড়ে রান নিতে গিয়ে শেখ মাহেদীর করা থ্রোতে আউট হন কামিন্দু। সাজঘরে ফেরার আগে ২৭ বলে ৩৭ রান করেছেন তিনি। এরপর মাঠে নামেন আগের ম্যাচে লঙ্কানদের দলীয় সংগ্রহ ২০০ করার কারিগর সাদুরা সামারাবিক্রমা। তবে লঙ্কান এই ব্যাটার আজ নিজের ইনিংস বড় করতে পারেননি। ১১ বলে ৭ রান করে মুস্তাফিজুর রহমানে বলে আউট হয়ে সাজঘরে ফিরেন তিনি।
এদিকে সামারাবিক্রমা ফেরার পর অধিনায়ক চারিথ আসালাঙ্কাও ফিরেছেন দ্রুতই। তবে সাজঘরে ফেরার আগে ৩ ছয় এবং ১ চারে ১৪ বলে ২৮ রানের ক্যামিও ইনিংস খেলেছেন তিনি। দলীয় ১১২ রানে লঙ্কান অধিনায়ক ফেরার পর হাল ধরেছিলেন অ্যাঞ্জেলো ম্যাথিউস এবং দাসুন শানাকা। ষষ্ঠ উইকেট জুটিতে এ দুজন করেছেন ৩৭ বলে ৫৩ রান। এ দুজনের জুটিতেই ২০ ওভারে ১৬৫ রানের সংগ্রহ পায় লঙ্কানরা। টাইগারদের হয়ে বল হাতে একটি করে উইকেট পেয়েছেন তাসকিন, মুস্তাফিজ, মেহেদী এবং সৌম্য।