স্পোর্টস ডেস্ক : টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের নবম আসর একেবারে চূড়ান্ত ধাপে এসে পৌঁছেছে। আর বাকি মাত্র তিনটি ম্যাচ। আগামীকাল (বৃহস্পতিবার) দুই সেমিফাইনালে যথাক্রমে মুখোমুখি হবে দক্ষিণ আফ্রিকা-আফগানিস্তান ও ভারত-ইংল্যান্ড।
আফগানরা প্রথমবারের মতো সেমিফাইনালে উঠেছে, প্রোটিয়ারা আগেও এই স্বাদ পেলেও ফাইনাল খেলতে পারেনি একবারও। ফলে উভয় দলের সামনেই ইতিহাস হাতছানি দিচ্ছে। অন্যদিকে, ভারত তৃতীয় এবং ইংলিশরা চতুর্থবারের মতো ফাইনালে ওঠার লক্ষ্যে নামবে।
বাংলাদেশ সময় ভোর সাড়ে ৬টায় প্রথম সেমিফাইনালে মুখোমুখি হবে দক্ষিণ আফ্রিকা ও আফগানিস্তা। ম্যাচটি হবে ত্রিনিদাদ অ্যান্ড টোব্যাগোর তারৌবা ক্রিকেট স্টেডিয়ামে। পরবর্তীতে রাত সাড়ে ৮টায় দ্বিতীয় সেমিতে ভারত ও ইংল্যান্ড মুখোমুখি হবে গায়ানার প্রভিডেন্স স্টেডিয়ামে।
জস বাটলারের ইংল্যান্ড ডিফেন্ডিং চ্যাম্পিয়ন, ফলে এবারও তাদের লক্ষ্য সেই শিরোপা নিজেদের দখলে রাখা। তাদের প্রতিপক্ষ ভারত ১১ বছর ধরে আইসিসি ইভেন্টে শিরোপাখরায় ভুগছে। সর্বশেষ নভেম্বরেও ঘরের মাঠে ওয়ানডে বিশ্বকাপের ফাইনালে খেলেছিলেন রোহিত শর্মারা। কিন্তু তাদের হতাশায় ডুবিয়ে চ্যাম্পিয়ন ট্রফি ঘরে তোলে অস্ট্রেলিয়া। দ্বিতীয় সেমিতে ভারত-ইংল্যান্ডের মাঝে বিজয়ী দলই হতে পারে এবারের বিশ্বকাপের বড় ভাগিদার।
আরেক ম্যাচে থাকা প্রোটিয়াদের গায়ে লেগে আছে ‘চোকার্স’ তকমা। তারা কিছুতেই সেমিফাইনালের অভিশাপ কাটিয়ে উঠতে পারছে না। ১৯৯২, ১৯৯৯, ২০০৯, ২০১৫, ২০১৪, ২০২৩– ওয়ানডে ও টি-টোয়েন্টি ফরম্যাটে একের পর এক সেমিফাইনাল থেকে বিদায় নিয়েছে আফ্রিকানরা। এবার অন্তত তারা সেই বৃত্ত ভাঙতে চায়। তাদের প্রতিপক্ষ আফগানরা অবশ্য কিছুটা নির্ভারই আছে। কারণ তাদের হারানোর কিছু নেই, খুব বেশিদিন হয়নি তাদের আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে পথচলার। তবে ইতোমধ্যে তারা যে পরাশক্তিদের কাঁপন ধরিয়ে দেওয়া অবস্থান তৈরি করে নিয়েছে, সেটি নতুন করে বলার অপেক্ষা রাখে না। শেষ ম্যাচে জিতে বাংলাদেশ ও অস্ট্রেলিয়াকে বিদায় করে সেমিফাইনালে ওঠে রশিদ খানের দলটি।
এখন পর্যন্ত টি-টোয়েন্টিতে দু’বার মুখোমুখি হয়েছে দক্ষিণ আফ্রিকা ও আফগানিস্তান। দু’বারই বিশ্বকাপের মঞ্চে দেখা হওয়া ম্যাচে জয় পেয়েছে প্রোটিয়ারা। ২০১০ সালে ৫৯ রানে এবং ২০১৬ সালে ৩৭ রানে জয় পেয়েছিল দক্ষিণ আফ্রিকা। গ্রুপ পর্বে দুর্দান্ত ক্রিকেট খেলেছে আফগানিস্তান। প্রথম তিন ম্যাচে নিউজিল্যান্ড, উগান্ডা ও পাপুয়া নিউগিনিকে হারিয়ে সুপার এইট নিশ্চিত করে তারা। গ্রুপ পর্বের শেষ ম্যাচে ওয়েস্ট ইন্ডিজের কাছে হেরে যায় আফগানরা। গ্রুপ রানার্স-আপ সুপার এইটে উঠে আরও বড় চমক দেখায় আফগানিস্তান। ভারতের কাছে হারলেও, অস্ট্রেলিয়াকে হারিয়ে দেয় রশিদ-নবিরা। এখন পর্যন্ত বিশ্বকাপে রান ও উইকেট সংগ্রহেও শীর্ষে দুই আফগানি, রহমানউল্লাহ গুরবাজ (২৮১ রান) ও ফজলহক ফারুকি (১৬ উইকেট)।
অন্যদিকে, চলতি আসরে এখন পর্যন্ত অপরাজিত দক্ষিণ আফ্রিকাকে টানা ৭ জয়ের মধ্যে ৬টিতেই ঘাম ঝরিয়ে ও ভাগ্যের জোরে জিততে হয়েছে। কিন্তু সেমিফাইনালের মঞ্চে শ্বাসরুদ্ধকর জয় চান না প্রোটিয়া অধিনায়ক এইডেন মার্করাম। দাপুটে জয়ে প্রথমবারের মত ফাইনালে নাম লেখানোর স্বপ্ন মার্করামের। ২০০৯ ও ২০১৪ সালে টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের সেমিফাইনাল থেকে তারা বিদায় নিয়েছিল। তবে অতীতের পরিসংখ্যান ভুলে নতুন পরিকল্পনা নিয়ে আফগানদের হারাতে চায় মার্করামের দল। এত কিছুর পরও টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে আপনার মতে ফাইনাল খেলবে কোন দুই দল?
সাম্প্রতিক সময়ে আইসিসির প্রতিটি মেগা আসর মানেই অন্যতম শীর্ষ ফেবারিট ভারত। কিন্তু ব্যাট-বলে দুর্দান্ত ধারাবাহিক দলটির চূড়ান্ত সাফল্য পাওয়া হচ্ছে না। এবার সেই বৃত্ত থেকে বেরিয়ে আসার পাশাপাশি প্রতিশোধের সুযোগ আসছে রোহিতদের সামনে। কারণ সর্বশেষ আসরে তারা সেমিফাইনালে হেরেছিল ইংলিশদের কাছে। ২০২২ টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের গ্রুপপর্বে দক্ষিণ আফ্রিকা ও সেমিফাইনালে ইংল্যান্ডের বিপক্ষে ১০ উইকেটে হারে ভারত।
এখন পর্যন্ত টি-টোয়েন্টিতে ২৩ বার মুখোমুখি হয়েছে ভারত-ইংল্যান্ড। যেখানে ১২টিতে ভারত আর ইংলিশদের জয় ১১ ম্যাচে। এ ছাড়া টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে দু’দল ৪ বার মুখোমুখি লড়েছে, যেখানে উভয় দলই জিতেছে সমান দুটি করে ম্যাচ।
চলতি আসরের গ্রুপপর্বে মনে হয়েছিল ইংল্যান্ড বুঝি বাদ পড়তে যাচ্ছে! সেখান থেকে সুপার এইটে ওঠে ওয়েস্ট ইন্ডিজ ও আমেরিকাকে একরকম উড়িয়ে দিয়ে সেমিফাইনাল নিশ্চিত করেন বাটলাররা। ব্যাটিংয়ে বাটলার-ফিল সল্ট আর বোলিংয়ে জফরা আর্চার, আদিল রশিদরা ভারতকে চ্যালেঞ্জ জানাবেন। অন্যদিকে, বিরাট কোহলির অবদান ছাড়াই সেমিফাইনালে ওঠে এখন পর্যন্ত অপরাজেয় ভারত। তবে ফর্মে আছেন রোহিত, জাসপ্রিত বুমরাহ ও আর্শদীপ সিংরা। চ্যালেঞ্জ জানাতে প্রস্তুত রিষাভ পান্ত ও কুলদীপ যাদবের মতো ফর্মে থাকা তারকারা।