স্পোর্টস ডেস্ক : এখনো প্যারিস অলিম্পিক আনুষ্ঠানিকভাবে শুরু না হলেও এরই মধ্যে বিতর্কের কালি লেগে গেছে গায়ে। প্যারিস অলিম্পিকের উদ্বোধনী দিনের আগেই শুরু হয়েছে ফুটবলের মেগা ইভেন্টটি।
আর তুমুল উত্তেজনাপূর্ণ ম্যাচে নাটকীয় হার দিয়ে মিশন শুরু করেছে দুইবারের সোনাজয়ী আর্জেন্টিনা। তাদেরকে লক্ষ্য করে গ্যালারি থেকে ছুঁড়ে মারা হয় পানির বোতলসহ অন্যান্য প্লাস্টিকের কাপ। সেই সঙ্গে ম্যাচের দেড় ঘণ্টা পর আর্জেন্টিনার একটি গোলও বাতিল করেন রেফারি। এসব কিছুতে দৃষ্টি দিয়ে হতবাক লিওনেল মেসি বললেন এটি 'অবিশ্বাস্য'।
গতকাল বুধবার (২৪ জুলাই) সেন্ট এতিয়েনে অলিম্পিকের ফুটবল ইভেন্টে গ্রুপ-বি এর প্রথম ম্যাচে আর্জেন্টিনার মুখোমুখি হয় মরক্কো। সদ্য কোপা জয়ী দলটি এবারের অলিম্পিকে হাভিয়ের মাশ্চেরানোর অধীনে এসেছিল বিরাট প্রত্যাশা নিয়ে। কিন্ত নিজেদের প্রথম ম্যাচেই বিতর্কিত এক সিদ্ধান্তে পরাজয়ের গ্লানি গায়ে মেখে মাঠ ত্যাগ করতে হয় আলবিসেলেস্তেদের।
২০২২ কাতার বিশ্বকাপের সেমিফাইনালিস্ট মরক্কোর বিপক্ষে খেলতে নেমে দুই গোলে পিছিয়ে থেকেও দারুণভাবে ঘু্রে দাঁড়ায় আর্জেন্টিনা। গুলিয়ানো সিমিওনের পর ম্যাচের অতিরিক্ত সময়ে মরক্কোর গোল পোস্টের জাল খুঁজে পান ক্রিস্টিয়ান মেদিনা।
এবারের অলিম্পিকে প্রথম ম্যাচের ফলাফল ২-২ গোলে ড্র ধরে নিয়েছিলেন সবাই। গণমাধ্যম কর্মীরাও এটাকেই ধরে নিয়েছিলেন ম্যাচের চূড়ান্ত ফল। কিন্ত এখানেই বাধে বিপত্তি। আর্জেন্টিনা গোল করার পরই মাঠে শুরু হয় বোতল বৃষ্টি। যেটির সূচনা করে গ্যালারির উত্তপ্ত দর্শকরা। শুধু বোতল নিক্ষেপ করেই ক্ষান্ত হননি তারা। সঙ্গে মেরেছেন প্লাস্টিকের কাপ এবং হুলিয়ান আলভারেজকে লক্ষ্য কর নিক্ষেপ করা হয় অগ্নিশিখাও।
সেই সঙ্গে ম্যাচের অন্তিম মুহূর্তে আর্জেন্টিনার গোলের পর মরক্কোর ভক্তরাও মাঠে নেমে পড়েন। আর তাতেই খেলা বন্ধের নির্দেশ ম্যাচের দায়িত্বে থাকা সুইডিশ রেফারি গ্লেন নাইবার্গের বাশিতে। আবার যখন খেলা শুরু করতে মাঠে নামে দুদল। তখনই ঘটে নজীরবিহীন অবিশ্বাস্য ঘটনাটি। প্রায় দেড় ঘন্টার বেশি সময় পর জানানো হয়, অফসাইডের যাতাকলে বাতিল হয়ে যায় সেই গোলটি। এবং খেলা হবে আরও তিন মিনিট। সেখানে আর জাল খুঁজে পাওয়া হয়নি আর্জেন্টিনার। তাই গোল বাতিলের সুবাদে নিশ্চিত ড্র হওয়া ম্যাচ ২-১ গোলে হারতে হয় মাশ্চেরানো শিষ্যদের।
এমন বিশৃঙ্খলাপূর্ণ ম্যাচ এবং গোল বাতিলের বিষয়টি নিয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন মেসি। বুধবার নিজের দল হারের বেদনায় শিক্ত হয়ে সোশ্যাল মিডিয়ায় আর্জেন্টিনা মূল দলের অধিনায়ক লিখেছেন, 'অবিশ্বাস্য।' আয়োজকদের এমন সিদ্ধান্তের ওপর ক্ষুব্ধ আর্জেন্টাইন কোচ হাভিয়ের মাশ্চেরানো এই ম্যাচটিকে তার 'জীবনের সবচেয়ে বড় সার্কাস কিংবা তামাশা' বলেও আখ্যায়িত করেছেন।
তাদের সঙ্গে সুর মিলিয়েছেন রদ্রিগো দি পল এবং ডিফেন্ডার নিকোলাস ত্যাগলিয়াফিকো। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ক্ষোভ প্রকাশ করে ত্যাগলিয়াফিকো লিখেছেন, 'তামাশা বাদ দিন। আমরা ম্যাচ স্থগিতের কারণ নিয়ে কথা বলছি নাকি নির্বোধের মতো কাজ করছি! এর বিপরীত যদি হতো (প্রতিপক্ষ যদি গোল করত অথবা সেই খেলোয়াড়দের লক্ষ্য করে যদি বোতল কিংবা অগ্নিশিখা ছুড়ে মারা হতো), তখন তারা কীসব বলত আমি সেটা কল্পনাও করতে পারছি না।'
এদিন ফরাসি দর্শকদের আর্জেন্টিনা দলের ওপর চড়া হওয়ারও যথেষ্ট কারণ রয়েছে। কেননা ২০২২ কাতার বিশ্বকাপে ফ্রান্সকে হারিয়েই চ্যাম্পিয়ন হয় আর্জেন্টিনা। সেবার ট্রফি নিয়ে দেশে ফিরে বিমানবন্দরে এমবাপ্পেকে ব্যাঙ করে পুতুল কোলে তুলে নিয়েছিল এমি মার্টিনেজ। এবং সর্বশেষ কোপা আমেরিকা জয়ের পর আর্জেন্টিনার টিম বাসে ফ্রান্সকে নিয়ে বর্ণবাদী গান গেয়ে উদ্যাপনের ভিডিও প্রকাশ করেছিলেন এনজো ফার্নান্দেজ।