স্পোর্টস ডেস্ক : ১২ই ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ড ছুটি দিয়েছিল সাকিব আল হাসানকে। তিনি বর্তমানে কানাডায় খেলছেন গ্লোবাল টি-টোয়েন্টি লীগে। ধারণা করা হচ্ছিল দেশে ফিরে ১৫ই আগস্ট জাতীয় শোক দিবসে বঙ্গবন্ধুর মৃত্যুবার্ষিকীর অনুষ্ঠানে অংশ নেবেন সাকিব। এরপর পাকিস্তান সফরে টেস্ট খেলতে যাওয়ার কথা ছিল দলের সঙ্গে ১৭ই আগস্ট।
তবে বাংলাদেশ ক্রিকেটে সাকিবের ছুটির ঘণ্টা বাজতে শুরু করেছে। আওয়ামী লীগ থেকে নির্বাচন করে মাগুরা-১ আসনের সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন তিনি। সংসদ সদস্য হয়ে খেলেছেন সবশেষ টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে।
বিশ্বকাপ শেষে তিনি জানিয়েছিলেন পাকিস্তানে টেস্ট সিরিজে খেলবেন। পরে বিসিবি থেকে অনাপত্তিপত্র নিয়ে (এনওসি) প্রথমে যুক্তরাষ্ট্র মেজর ক্রিকেট লীগ খেলেন এরপর অংশ নেন কানাডার গ্লোবাল টি- টোয়েন্টি টুর্নামেন্টে। এবার তার থাকার কথা পাকিস্তান সফরে।
তবে তিনি খেলবেন কিনা সেটি জানেন না নির্বাচকরা। কারণ তার খেলা না খেলার বিষয়টি তিনি সরাসরি বিসিবি কর্তাদেরই জানাতেন। তবে ছাত্র বিল্পবে তার দল আওয়ামী লীগ এখন আর সরকারে নেই।
এরই মধ্যে রাষ্ট্রপতি সংসদও বিলুপ্ত ঘোষণা করেছেন। নিরাপত্তার কারণে সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা চলে গেছেন দেশের বাইরে। দলের কর্মীরাও আর প্রকাশ্যে নেই। শুধু তাই নয়, আন্দোলনে সাকিব ছাত্রহত্যার বিপক্ষে কোনো কথা না বলেও বিতর্কিত।
যে কারণে সঙশ্লিষ্ট অনেকের মতে, জাতীয় দলে সাকিবকে রেখে জনরোষে পড়তে চাইবেন না নির্বাচকরা। যদিও জাতীয় দলের কোনো নির্বাচকই এ নিয়ে মুখ খোলেননি। তবে বিসিবি’র ক্রিকেট কমিটির ইনচার্জ শাহরিয়ার নাফীস সংবাদ মাধ্যমে জানিয়েছেন সাকিবের ব্যাপারে ভাবনার কথা। তিনি বলেন, ‘সাকিব এখন আর সংসদ সদস্য নন।
তিনি একজন ক্রিকেটারই রয়েছেন। প্রত্যেক মানুষেরই নিরাপত্তার ব্যাপার আছে। বিসিবি’র নির্বাচক কমিটি এখন পর্যন্ত দল (পাকিস্তান সফরের) ঘোষণা করেনি। সে যদি দলে থাকে, তখন একরকম। আর যদি দলে না থাকে তখন তো তার এনওসি’র কোনো বিষয় আসছে না।’
ছাত্র আন্দোলনের সময় সাকিবের যে ভূমিকা তা নিয়ে তিনি আছেন জনরোষে। এরই মধ্যে কানাডাতে খেলার সময় দর্শকদের সঙ্গে এ নিয়ে জড়িয়েছেন বিবাদে। শেখ হাসিনার পদত্যাগের পরও কানাডায় প্রবাসী বাংলাদেশিদের কেউ কেউ মাঠেই তাকে গাল-মন্দ করেছেন। ভুয়া ভুয়া বলে স্ল্লোগান দিচ্ছেন।
এমন অবস্থায় নির্বাচকরা তাকে দলে নিয়ে নিজেদের নিরাপত্তা ঝুঁকি বাড়াতে চান না। একটি বিশ্বস্ত সূত্রে জানা গেছে, শেষপর্যন্ত পাকিস্তান সফরে যে দল ঘোষণা হবে সেখানে রাখা হচ্ছে না দেশের সবচেয়ে অভিজ্ঞ এই ক্রিকেটার ও সাবেক অধিনায়ককে।
অতিদাম্ভিক এই ক্রিকেটার বিশ্বের অন্যতম সেরা অলরাউন্ডারদের একজন হলেও নানা বিতর্কে জড়িয়ে বারবার হারিয়েছেন সম্মান। সবশেষ বিশ্বকাপেও তিনি সংবাদমাধ্যমে বিরূপ আচরণ করেছেন। নিজের ব্যর্থতা ঢাকতেই সবসময় তিনি থাকেন মারমুখী। বাঁকা বাঁকা উত্তর দেয়া ছিল তার জন্য সাধারণ বিষয়। এমপি হওয়ার পর তার ক্ষমতা আরও বেড়ে যায় তখন তার আচরণ হয়ে ওঠে আরও বেপরোয়া। বিসিবি সভাপতিকেও তিনি পাত্তা দিতে চাইতেন না।
১২ই আগস্ট পর্যন্ত এনওসি (যুক্তরাষ্ট্র ও কানাডায় খেলার) রয়েছে। এরপর বাংলাদেশ দলে যোগ দেয়ার কথা। কিন্তু বর্তমানে দেশের যে পরিস্থিতি তার হয়তো আর জাতীয় দলে ফেরা হবে না। একটি সূত্রের দাবি তার আচরণের কারণেই জাতীয় দল থেকে অবসর ঘোষণা ছাড়াই হয়তো বাদ পড়বেন এই ক্রিকেটার।
অন্যদিকে সবকিছু ঠিক থাকলে আগামীকাল থেকেই পাকিস্তানের বিপক্ষে দুই টেস্টের সিরিজ সামনে রেখে বাংলাদেশ দলের অনুশীলন শুরু করতে চায় বিসিবি। এ বিষয়ে শাহরিয়ার নাফীস বলেন, ‘আল্হামদুলিল্লাহ্ আজকে আমরা ‘এ’ দলের অনুশীলন শুরু করতে পেরেছি। গত ৩-৪ দিনের অবস্থার কারণে আমাদের ফ্যাসিলিটিজের কী অবস্থা সেটাও আমরা বুঝতে পারছিলাম না। মাঠকর্মীরা নিয়মিত কাজ করতে পারছিলেন না।’
মিরপুর শেরেবাংলা মাঠের নিরাপত্তা নিয়ে শঙ্কা
সারা দেশে ছাত্র আন্দোলন চলার সময় মিরপুর শেরেবাংলা মাঠে হামলা হয়। জাতীয় দলের ক্রিকেটারদের ব্যর্থতা, বিসিবি সভাপতি নাজমুল হাসান পাপনের নানা মন্তব্য, সরকারদলীয় এমপি হয়ে সাকিব ও মাশরাফির ছাত্র আন্দোলনে নীরবতা- সবকিছুই ক্রিকেটপ্রেমীদের মনে হতাশা ও ক্ষোভের কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছিল।
এবার দেশের সরকার পতনের পর অনেকেই তাদের সেই ক্ষোভের বহিঃপ্রকাশ ঘটাতে চায়। আবার মাঠে বর্তমানে কোনো নিরাপত্তা ব্যবস্থা না থাকায় সেখানে ঢুকে পড়ছে বহিরাগতরা। বিশেষ করে গতকাল ‘এ’ দলের অনুশীলনের সময় এই ঘটনা ঘটতে দেখা যায়। তাসকিন আহমেদ সেখান থেকে ফিরছিলেন ড্রেসিংরুমের দিকে। ততক্ষণে গ্র্যান্ডস্ট্যান্ডে জড়ো হয়েছেন একদল বহিরাগত মানুষ।
সেখান থেকে কয়েকজন তাসকিনের সঙ্গে কথা বলারও চেষ্টা করেন। নিরাপত্তা নিয়ে শাহরিয়ার নাফীস বলেন, ‘বাংলাদেশ আর্মির যে প্যাট্রল টিম আছেন, ওনারা ৬ই আগস্ট থেকে আমাদের এখানে একবার ঘুরে যান। এটা তাদের রুটিনওয়ার্ক।
নিরাপত্তার কোনো হুমকির জন্য নয়। তারা যেভাবে সারা দেশে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি স্বাভাবিক করার চেষ্টা করছেন, এটা তারই একটা অংশ।’ হঠাৎ বিসিবিতে বহিরাগতদের আনাগোনা বেড়ে যাওয়ায় কিছুটা অস্বস্তিতে ক্রিকেটাররা।
নিরাপত্তাহীনতাও আছে। বহিরাগতদের আরেকটি দলকে দেখা গেল স্টেডিয়ামের ২ নম্বর গেটের ভেতরে। বিষয়টি নিয়ে শাহরিয়ার নাফীস বলেন, ‘আগেও দেখেছি, যখন ক্ষমতার পালাবদল হয়, তখন এমন হয়। আমরা পরিস্থিতি সম্পর্কে অবগত আছি। সারা দেশে কিন্তু পরিস্থিতি একটু অনিশ্চিত। আমরা আশা করছি, দুই-এক দিনের মধ্যে সারা দেশ যেমন স্বাভাবিক গতিতে ফিরবে, ক্রিকেট বোর্ডও স্বাভাবিক গতিতে চলবে।’