স্পোর্টস ডেস্ক : পাকিস্তানের ব্যাটিং লাইনে মেহেদি হাসান মিরাজ এখন যেন বড় আতঙ্কের নাম! প্রথম টেস্টে তার ঘূর্ণি বলেই নাজেহাল হয়ে দ্বিতীয় ইনিংসে পাকিস্তান ১৪৬ রানে গুটিয়ে যায় এবং শেষ পর্যন্ত পরাজয় বরণ করে।
এবার সেই রাওয়ালপিন্ডিতেই সিরিজের দ্বিতীয় টেস্টে মিরাজের ঘূর্ণিতে দিশাহারা পাকিস্তানের প্রথম ইনিংস থেমেছে মাত্র ২৭৪ রানে। গত টেস্টের পঞ্চম দিনে এই অফস্পিনার ক্যারিশমা দেখিয়েছেন।
কিন্তু এবার সবুজ ঘাসের উইকেটেও ছোবল হেনেছেন টেস্টের শুরুর দিনে। ক্যারিয়ারে দশম বারের মতো ইনিংসে ৫ উইকেট শিকারের কৃতিত্ব দেখিয়েছেন তিনি। যদিও শনিবার দ্বিতীয় টেস্টের দ্বিতীয় দিন।
কিন্তু প্রথম দিন বৃষ্টির দাপটে খেলাই হয়নি। সে বিবেচনায় প্রথম দিনেই মিরাজের এই দাপট পুরোপুরি কিংকর্তব্যবিমূঢ় করেছে স্বাগতিক দলকে। অবশ্য শুরুটা ডানহাতি পেসার তাসকিন আহমেদই করেন।
১৪ মাস পর ফিরে তিনিও ৩ উইকেট তুলে নেন। পাকিস্তানের ইনিংস আরও কম রানেই গুটিয়ে যেতে পারত যদি সহজ ৪টি ক্যাচ হাতছাড়া না করত বাংলাদেশের ফিল্ডাররা। দিনশেষে বিনা উইকেটে ১০ রান তুলেছে বাংলাদেশ। টানা দ্বিতীয় টেস্টেও টস জিতেছেন নাজমুল হোসেন শান্ত।
বৃষ্টির জন্য প্রথম দিন ভেসে গেছে, আর্দ্র পরিবেশ এবং গত টেস্টের তুলনায় পিন্ডির উইকেটে ঘাসের বেশি অস্তিত্ব দেখেই এমন সিদ্ধান্ত নেন তিনি। স্বাভাবিকভাবেই এমন অবস্থায় পেসারদের দাপট দেখানোর কথা।
প্রথম থেকে তাসকিন সেটা করতে পেরেছেন। তার বলের সামনে বেশ সমস্যায় ভুগেছেন পাক ব্যাটাররা। ইনিংসের ৬ নম্বর বলেই তাসকিন বোল্ড করে দেন ওপেনার আব্দুল্লাহ শফিককে (০)। তবে এরপর ওপেনার সাইম আইয়ুব ও অধিনায়ক শান মাসুদ বেশ সাবলীল ব্যাটিং করেছেন।
বিশেষ করে অন্য দুই পেসার নাহিদ রানা ও হাসান মাহমুদকে ভালোভাবেই মোকাবিলা করেন তারা এবং লাঞ্চ বিরতি পর্যন্ত নির্বিঘেœই কাটিয়ে দেন। ২৫ ওভারে লাঞ্চ বিরতিতে যায় তারা ১ উইকেটে ৯৯ রান তুলে।
তবে লাঞ্চ বিরতির ঠিক পরপরই ঘূর্ণি ছোবল হেনেছেন মিরাজ। আক্রমণাত্মক খেলতে থাকা শানকে তিনি এলবিডব্লিউর ফাঁদে ফেরেন। ৬৯ বলে ২ চারে ৫৭ রান করে বিদায় নেন শান এবং ভেঙে যায় ১০৭ রানের জুটি। কয়েক ওভার পরই আরেকটি আঘাত হানেন মিরাজ।
এবার তার শিকার হাফ সেঞ্চুরি পাওয়া ওপেনার সাইম আইয়ুব। দেখেশুনে ১১০ বলে ৪টি চার ও ২টি ছক্কায় ৫৮ করা এ ধৈর্যশীল ওপেনারকে শিকার করে বাংলাদেশ দলকে খেলায় ফেরান মিরাজ।
এই জোড়া ধাক্কা সামলে উঠতে পারেনি পাকরা। বেশকিছু ক্যাচ মিস করে এ সময় বাংলাদেশের ফিল্ডাররা। এরপরও সৌদ শাকিল ১৬ রানে তাসকিনের পেসে ও বাবর আজম ৩১ রানে সাকিব আল হাসানের বলে ফিরে যান। ফলে এই সেশনে ৩০ ওভারে ৮৪ রান তুলে ৪ উইকেট হারায় পাকিস্তান। সবমিলিয়ে ৫ উইকেটে ১৮৩ রান নিয়ে চা বিরতিতে যায় তারা।
চা বিরতির পর সহজ কয়েকটি ক্যাচ মিস করেছেন বাংলাদেশের ফিল্ডাররা। সেই সুযোগে সালমান আলী আগা একাই লড়াই করে পাকিস্তানের রান আরেকটু বাড়িয়ে নিয়েছেন।
তবে মিরাজের ঘূর্ণির সামনে বাকিরা টিকতে পারেননি। অবশ্য নাহিদ রানার পেসে মোহাম্মদ রিজওয়ান ২৯ রানে আউট হন আগেই। আর খুররম শাহজাদ ১২, মোহাম্মদ আলী ২ রানে মিরাজের শিকার হন। একাই সংগ্রাম করা সালমানও ৯৫ বলে ৩ চার, ২ ছক্কায় ৫৪ রানে ফিরে যান তাসকিনের তৃতীয় শিকার হয়ে।
সর্বশেষ ব্যাটার হিসেবে আবরার আহমেদকে (৯) স্টাম্পিংয়ের ফাঁদে ফেলে নিজের ৫ উইকেট পূর্ণ করেন মিরাজ। ৬৯ টেস্টে সাকিব ১৯ বার এবং ৪৬ টেস্টে তাইজুল ইসলাম ১২ বার ৫ উইকেট নিয়েছেন ইনিংসে। তৃতীয় বাংলাদেশী হিসেবে এবং দেশের প্রথম অফস্পিনার হিসেবে ৫ উইকেট নেওয়ার কৃতিত্ব দেখিয়েছেন মিরাজ। তিনি ২২.১ ওভারে ২ মেডেনে ৬১ রানে ৫ উইকেট নেন। দিনশেষে মাত্র ২ ওভার ব্যাটিং করে বাংলাদেশ বিনা উইকেটে করেছে ১০ রান। এখনো ২৬৪ রানে পিছিয়ে থাকলেও বেশ ভালো অবস্থানেই আছে বাংলাদেশ দ্বিতীয় টেস্টের দ্বিতীয় দিনশেষে।