স্পোর্টস ডেস্ক: নিজস্ব কোনো ব্যাট নেই। ধার করা ব্যাট। অন্যান্য ক্রিকেট সরঞ্জাম কারও না কারও কাছ থেকে উপহার নেয়া। সিএবি-র স্কুল ক্রিকেট টুর্নামেন্ট মেয়ার্স কাপে দ্য পার্ক ইন্সটিটিউশনের বিরুদ্ধে ৩৮৩ রান করলেন তীর্থপতি ইন্সটিটিউশনের ঋত্বিক সিংহ।
১৬৬ বলে ৩৮৩ রান করেছে ঋত্বিক সিংহ। ৪৫ ওভারের ফরম্যাটে যে ইনিংস সিএবি-র ইতিহাসে সর্বোচ্চ। তীর্থপতি ইনস্টিটিউটের হয়ে পার্ক ইনস্টিটিউশনের বিরুদ্ধে ট্রিপল সেঞ্চুরি করার পথে ঋত্বিক মেরেছিল ৪৮টি চার ও ২৬টি ছক্কা! যখন সে আউট হয়, দলের রান পাঁচশো পেরিয়ে গিয়েছে। ঋত্বিকের সেই দাপটে তীর্থপতি ইন্সটিটিউশন তুলল ৮ উইকেট হারিয়ে ৫০০ রান। তবে ঋত্বিকদের রানের জবাবে পার্ক ইন্সটিটিউশন ৮৬ রানে গুটিয়ে যায়।
ঘটনাটি আশ্চর্যজনক হলেও সত্যি, এই ইনিংসের আগে কোনও সেঞ্চুরিই ছিল না ডানহাতি ব্যাটসম্যানের! কারণটা নিজেই জানাল ঋত্বিক। তার কথায়, ‘‘তিন নম্বরটা আমার প্রিয় জায়গা। তবে আগে ব্যাটিং অর্ডারের অনেক নীচের দিকে নামতাম। তাই স্কুলের হয়ে বেশিরভাগ ম্যাচে ব্যাট করার সুযোগই পেতাম না।’’
পেশায় গাড়ির চালক আশিস সিংহ তাঁর ১৫ বছর বয়সী ছেলেকে ব্যাট-প্যাড কিনে দিতে পারেননি। তাই স্কুলের ম্যাচ থাকলে ঋত্বিকের ভরসা সতীর্থদের ব্যাট বা কোচের উপহার দেওয়া হেলমেট। প্রবল দারিদ্র অবশ্য তার ক্রিকেটপ্রেমকে নষ্ট করতে পারেনি। হাজরার বেনিয়াপাড়া লেনের আট ফিট বাই দশ ফিটের ঘরে বসেও ঋত্বিক স্বপ্ন দেখে ভারতের হয়ে খেলার। ঋত্বিকের অর্থনৈতিক অবস্থার কথা জানতে পেরে বাংলার অধিনায়ক মনোজ তিওয়ারি তাকে নিজের একটি ব্যাট উপহার দিলেন। মনোজের উপহার নিতে মা-বাবাকে নিয়ে কালীঘাট ক্লাবে হাজির হয়েছিল ঋত্বিক। তার রেকর্ডের কথা শুনে খুশি মনোজও।
ভারতের বেনিয়াপাড়া লেনের এক কামরার বাড়িতে মা, স্ত্রী ও দুই সন্তানকে নিয়ে সংসার আশিসবাবুর। তিনি বলছিলেন, ‘‘ঋত্বিকের যখন আড়াই বছর বয়স, তখন কাঠের স্কেলকে ব্যাট ও জলের বোতলের ছিপিকে বল করে ক্রিকেট খেলত। তবে ওকে কোনও অ্যাকাডেমিতে ভর্তি করার মতো অবস্থা ছিল না।
মুশকিল-আসান হয়ে হাজির হন তীর্থপতি ইনস্টিটিউটের ক্রিকেট কোচ দীপক পোদ্দার। ঋত্বিককে বিনা খরচে ক্রিকেট শেখার ব্যবস্থা করে দেন। কিট্সও কিনে দিতেন। দীপকের হাত ধরেই সিএবি-র দ্বিতীয় ডিভিশনের বিজয়া স্পোর্টস ক্লাবের ক্রিকেট অ্যাকাডেমিতে ভর্তি হয় ঋত্বিক। ব্যাটিং করার পাশাপাশি ডান হাতে মিডিয়াম পেস বোলিংও করে ঋত্বিক সিংহ। তার এখন লক্ষ্য সৌরভ গাঙ্গুলির সঙ্গে দেখা করা। ‘‘কীভাবে স্পিনারদের বলে স্টেপ আউট করে আরও বিশাল ছক্কা মারা যায়, সৌরভ স্যারের কাছে জানতে চাইব।-এবেলা
১৯ ফেব্রুয়ারি,২০১৬/এমটি নিউজ২৪/আল-আমিন/এএস