শুক্রবার, ০১ নভেম্বর, ২০২৪, ০৯:৩১:১৬

‘আব্বা আমরা জিইত্যালছি, অহন তোমার বাজারে গিয়া কলা বেচন লাগত না’

 ‘আব্বা আমরা জিইত্যালছি, অহন তোমার বাজারে গিয়া কলা বেচন লাগত না’

স্পোর্টস ডেস্ক : বাংলাদেশের নারীরা সাফ চ্যাম্পিয়ন শিপের শিরোপা অর্জন করে দেশে ফিরেছেন। আর দেশে ফিরেই এই দলের দ্বিতীয় গোলরক্ষক মিলি আক্তার মোবাইলে ময়মনসিংহের নান্দাইলের গ্রামের বাড়িতে বাবা সামছুল হককে কল করে কথা বলেছেন। 

ফোনকলে মিলি বলেন, ‘আব্বা আম্মারে কও আমরা জিইত্যালছি, অহন আমরারে সরকার অনেক পুরস্কার দিবো। অহন আর তোমারার কষ্ট করন লাগত না। আর বাজারে গিয়া তোমার কলাও বেচন লাগত না। খুব তাড়াতাড়ি বাড়িত আইতাছি।’

জমিজমাহীন অবস্থায় সরকারের আশ্রয়ণ ঘরে থেকে বেড়ে ওঠা মিলি আক্তার গতকাল বৃহস্পতিবার (৩১ অক্টোবর) সাফ নারী ফুটবলের সদস্য হয়ে নেপাল থেকে দেশের বিমানবন্দরে নেমেই কলা বিক্রেতা বাবাকে ফোন করে প্রথমে খুশির সংবাদ এভাবেই জানান দেন।

জানা যায়, গত বুধবার (৩০ অক্টোবর) নেপালের রাজধানী কাঠ্মুন্ডুর দশরথ রঙ্গশালা স্টেডিয়ামে স্বাগতিক নেপালকে ২-১ গোলে হারিয়ে দ্বিতীয়বারের মতো চ্যাম্পিয়ন হন বাংলাদেশে নারীরা।

টুর্নামেন্টে জাতীয় দলের হয়ে খেলেছেন নান্দাইল উপজেলার চন্ডীপাশা ইউনিয়নের বারইগ্রামের হতদরিদ্র সামছুল হকের মেয়ে মিলি আক্তার। জাতীয় দলের সাফল্য ছাড়াও এই দলে মিলি অন্তর্ভুক্ত থাকায় চ্যাম্পিয়নের খবরে মিলির এলাকা ছাড়াও সর্বত্রই আলোচনা চলে। অনেকে খুশির খবরে মিলির বাড়িতে গিয়ে মিলির বাবা-মাকে মিষ্টিমুখ করান। এখন অপেক্ষায় কবে আসবেন মিলি।
তখন তাকে বরণ করে নেবে গ্রামবাসী।

আজ শুক্রবার (১ নভেম্বর) দুপুরে মিলির গ্রামের বাড়িতে গিয়ে দেখা গেছে মা আনোয়ারা বেগম সরকারের দেওয়া আশ্রয়ণের ঘরটি পরিষ্কার করছেন। গত দুই দিনে গ্রামের মানুষকে তার মেয়ের খুশির খবরটি দিয়েছেন। অন্য মেয়েদের শ্বশুরবাড়িতে খবর দিয়েছেন মিলি আসার সঙ্গে সঙ্গে চলে আসার জন্য। এ যেন একটা ঈদ ঈদ ভাব রয়েছে পুরো বাড়িতে। মিলির খবরে প্রতিবেশীরাও খুশি।

মিলির বাবা সামছুল হক জানান, পাশের মসজিদে তিনি জুমার নামাজ আদায় করেছেন। সেখানে তিনি সবার কাছে মেয়ের জন্য দোয়া চেয়েছেন। তিনি বলেন, ‘গতকাইল (বৃহস্পতিবার) বিহালে মোবাইলে ছেড়িডা ফোন দেয়। কিছু জিগানোর আগেই হে খুশিতে কয় আব্বা তোমার দোয়া কামে লাগজে। আমরা জিতছি। বাড়িত আইলে বেহেরে মিষ্টি খাওয়াইবা।’

মিলির মা আনোয়রা বেগম জানান, তার চার মেয়ে ও দুই ছেলে। নিজেদের জমিজমা বলতে কিছুই নেই। সরকারের দেওয়া ঘরে বসবাস করেন। তিন মেয়েকে বিয়ে দিয়েছেন। আর মিলিকে নিয়েই থাকেন। অতি কষ্ট করে মিলিকে লালন-পালন করেছেন। এলাকার একজনের কাছে তার মেয়ে ফুটবল খেলা শিখেছে। ছোটবেলা থেকেই ফুটবল খেলার নেশা ছিল। বর্তমানে মিলি বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর নারী টিমে খেলছে। সেখান থেকেই জাতীয় দলে সুযোগ পেয়েছে।

মিলির স্থানীয় কোচ মো. দোলোয়ার হোসেন উজ্জল। তিনি জানান, স্কুলপর্যায়ে খেলায় তিনি মিলির খেলা দেখে মুগ্ধ হয়েছেন। এরপর পরই তিনি তাকে টেনে নেন। নিজের মতো করে প্রশিক্ষণ দেন। তার প্রতিভা দেখে অনেকেই প্রসংশা করেন। এরপর আর পেছনে থাকতে হয়নি। বাংলাদেশ সেনাবাহিনীতে সুযোগ পেয়েই মিলি বাজিমাত করেন।

Follow করুন এমটিনিউজ২৪ গুগল নিউজ, টুইটার , ফেসবুক এবং সাবস্ক্রাইব করুন এমটিনিউজ২৪ ইউটিউব চ্যানেলে