রবিবার, ২১ ফেব্রুয়ারী, ২০১৬, ১২:৩৯:০৫

টাকার অভাবে খেলা ছেড়ে দেয়া সেই ক্রিকেটার আজ দেশটির ‘মহানায়ক’

টাকার অভাবে খেলা ছেড়ে দেয়া সেই ক্রিকেটার আজ দেশটির ‘মহানায়ক’

স্পোর্টস ডেস্ক: ইয়াসিন হাসান: নেশা থেকে ক্রিকেটে আসা সংযুক্ত আরব আমিরাতের রোহান মুস্তাফার। বাবা মুস্তফা কামাল চেয়েছিলেন ছেলে পাকিস্তানের হয়ে খেলবে। শৈশব থেকে রোহানও সেই স্বপ্ন দেখতেন। কিন্তু বড় হয়ে রোহান পুরোটাই উল্টো! বাবার স্বপ্ন তো পূরণই করলেন না; সঙ্গে নিজেরটাও! খেলছেন সংযুক্ত আরব আমিরাতের জাতীয় দলে। অবশ্য এর জন্যে রোহানকে দোষারোপ করা ভুল হবে। বিধাতা চেয়েছিলেন বলেই রোহান আজ সংযুক্ত আরব আমিরাতের নিয়মিত ক্রিকেটার, অলরাউন্ডার। কী হয়েছিল তা নিশ্চয়ই জানতে ইচ্ছে করছে?

শুক্রবার সন্ধ্যায় ফতুল্লা স্টেডিয়ামে দেশটির প্রথম সারির অনলাইন নিউজ পোর্টালের সঙ্গে নিজের অতীত নিয়ে কথা বলেছেন রোহান মুস্তাফা।

‘১০ বছর বয়সে বাবা আমাদের পরিবার নিয়ে শারজাহ চলে আসেন। এখানে বাবা গাড়ির ব্যবসা করতেন। খুব ভালোভাবেই আমাদের দিন যাচ্ছিল। বাবা-মা, বোন আর আমি মিলে ছিল আমাদের সংসার। ৫ বছর পরই বাবা মারা গেলেন। হঠাৎ করে বাবার মৃত্যুতে পুরো সংসারের ভার চলে আসল আমার ওপর। নিরূপায় হয়ে কাজে লেগে যাই। এখনো করছি। বিপণন কর্মকর্তা হিসেবে কাজ করছি। পাকিস্তানে অর্থ উপার্জন করা খুবই কঠিন। আমি এখানে ভালো করছি। এজন্য পরিবারের সবাই ইউএইকে বেছে নিতে বলে।’

জীবনের আসল অর্থ কী? উত্তর, চ্যালেঞ্জ। সত্যিই রোহান মুস্তাফার কাছে জীবন মানেই চ্যালেঞ্জ। অনেকের কাছে তাই। সারাদিন কাজ করে সন্ধ্যার পর যেখানে বিশ্রামে থাকার কথা সেখানে জাতীয় স্বার্থে নিজেকে বিলিয়ে দিচ্ছেন।’

পেশাদার ক্রিকেটে হিসেবে এখনো স্বীকৃতি পায়নি সংযুক্ত আরব আমিরাতের ক্রিকেটাররা। তবে সুসংবাদ আছে তাদের জন্যে। আগামী সেপ্টেম্বরে বোর্ডের সঙ্গে প্রথমবারের মত কেন্দ্রীয় চুক্তিতে আসছেন ক্রিকেটাররা। প্রসঙ্গটা ম্যাচ পরবর্তীতে তুলে ধরলেই হাসি ফুটল মুস্তাফার মুখে। খুব স্বাচ্ছন্দ্যেই বলে ফেললেন, ‘আমি এখানো বিয়ে করিনি। আমাদের দলের অনেকেই করেছেন। সারাদিন কাজের পর সন্ধ্যা ৬টার পর ক্রিকেট মাঠে নতুন আরেকটি দিন শুরু করা সত্যিই খুব কঠিন। বাইরে থেকে দেখলে মনে হয় কাজটি খুব সহজ। কিন্তু ভিতরে চিত্রটা খুব কঠিন। হ্যাঁ, আমাদের চুক্তি হচ্ছে। আমিও চুক্তিতে আসা ক্রিকেটারের মধ্যে একজন। আমি মনে করি চুক্তিতে চলে আসলে সংযুক্ত আরব আমিরাতের ক্রিকেটের চিত্র পাল্টে যাবে।’

জাতীয় দলে খেলার আগে শারজাহ একাডেমিতে ট্রেনিং করতেন মুস্তাফা। সেখান থেকে সংযুক্ত আরব আমিরাতের অনূর্ধ্ব-১৯ দলে জায়গা পেয়ে যান ২০০৭ সালে। দলের হয়ে মালয়েশিয়ায় অনূর্ধ্ব-১৯ এলিট কাপ টুর্নামেন্ট খেলতে গিয়ে সবার নজর আসেন। দুটি ম্যান অব দ্য পুরস্কার বাদেও স্বাগতিক মালয়েশিয়ার বিপক্ষে ৬৬ ও ২০ রানে ৫ উইকেট নিয়ে বেশ প্রশংসিত হন এ অলরাউন্ডার। কিন্তু ইউএইতে ফেরার পর ক্রিকেট ছেড়ে দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেন। কারণ একটাই পরিবারের অস্বচ্ছলতা।

‘আমি যখন দেশে ফিরে যাই, তখন আমাদের পরিবারের অবস্থা খুব খারাপ ছিল। কোনো উপায় না পেয়ে ক্রিকেট ছাড়ার সিদ্ধান্ত নেই। চাকরি খুঁজতে থাকি। ভাগ্যক্রমে আদিল মির্জা (প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা, ফোনিক্স মেডিসিন) আমাকে তার কোম্পানি কাজের সুযোগ করে দেন। তিনি ক্রিকেট খেলারও অনুমতি দিয়েছিলেন। সত্যি উনি আমার বড় ভাইয়ের ভূমিকায় ছিলেন। সে আমাকে অনেক সাহায্য করেছেন। এখনো করে যাচ্ছেন। খেলার কারণে নতুন কোম্পানি আমাকে কাজে নিতে চেয়েছিল। সে আমাকে একবারের জন্য মানা করেননি।’  
 
শুক্রবার এশিয়া কাপের প্রথম কোয়ালিফাইং ম্যাচে দুর্বার আফগানিস্তানের বিপক্ষে জয় পায় ইউএই। ৭৭ রানের ঝড়ো ইনিংস খেলে শুরুতেই দলকে এগিয়ে নেন রোহান মুস্তাফা। পাকিস্তান বংশোদ্ভূত এই ক্রিকেটার ম্যাচ শেষে জানালেন নিজের ওপর বিশ্বাস থাকার কারণে আজ এ পর্যন্ত আসতে পেরেছেন তিনি। পাকিস্তানের প্রাক্তন ফাস্ট বোলার আকিব জাভেদ এ দলটির কোচের দায়িত্বে আছেন দীর্ঘদিন ধরেই। নিজের সাফল্যের কৃতিত্ব দিয়েছেন কোচকে।

“আমি কীভাবে খেলতে পারি, তা আমার থেকে ভালো দলের সাপোর্টিং স্টাফরা জানেন। বিশেষ করে কোচ। উনি সব সময় আমাকে সাহস জুগিয়েছেন। সব সময় বলেন, ‘আউট হয়ে গেলে আবার সুযোগ পাবে। ওই সুযোগ আউট হয়ে গেলে আবারো সুযোগ পাবে। সুযোগ তুমি পাবেই। স্বাভাবিক খেলাটা খেলে যাও।’ আজ যেভাবে ব্যাটিং করেছি সেটা একমাত্র উনার কারণেই।”

পরিবারের স্বচ্ছলতা ফেরাতে ক্রিকেট ছেড়ে দেওয়া এ ক্রিকেটার এখন দেশটির সেরা ক্রিকেটারের একজন। ঘোষিত নায়ক। সাফল্যের সিঁড়ি বেয়ে দিনদিন উপরে উঠছেন। বাবা কিংবা নিজের স্বপ্ন পূরণ করতে পারেননি। আক্ষেপ বয়ে বেড়ালেও জীবনের বাকিটা সময় সংযুক্ত আমিরাতের নামে লিখে দিয়েছেন রোহান মুস্তাফা।
২১ ফেব্রুয়ারি, ২০১৬/এমটিনিউজ২৪/আরিফুর রাজু/এআর

Follow করুন এমটিনিউজ২৪ গুগল নিউজ, টুইটার , ফেসবুক এবং সাবস্ক্রাইব করুন এমটিনিউজ২৪ ইউটিউব চ্যানেলে