স্পোর্টস ডেস্ক : আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে অবসরের ঘোষণা দিয়ে পরবর্তী সময়ে মাঠে ফিরে আসার নজির নেহাত কম নয়। মঈন আলী, কেভিন পিটারসেন, ডোয়াইন ব্রাভো এবং জাভাগল শ্রীনাথের মতো প্রখ্যাত খেলোয়াড়রাও এই পথ অনুসরণ করেছেন।
তবে পাকিস্তানি ক্রিকেটারদের ক্ষেত্রে অবসর ভেঙে ফিরে আসা যেন একপ্রকার ঐতিহ্য। অনেক পাকিস্তানি খেলোয়াড়ই অবসর থেকে ফিরে এসে আবার জাতীয় দলের জার্সি গায়ে মাঠে নেমেছেন। এমন পাঁচজন পাকিস্তানি ক্রিকেটার- যারা অবসরের ঘোষণা দিয়েও আবার অবসর ভেঙে মাঠে ফিরেছেন।
১. শহীদ আফ্রিদি
১৯৯৮ সালে অভিষেক হওয়া পাকিস্তানি অলরাউন্ডার শহীদ আফ্রিদি ২০০৬ সালে ওডিআই ফরম্যাটে মনোযোগ দিতে টেস্ট থেকে অবসরের ঘোষণা দেন। তবে এর দুই সপ্তাহ পরেই পিসিবি চেয়ারম্যানের অনুরোধে আবার টেস্টে ফেরেন। ২০০৬ সালের পর আফ্রিদি যখন টেস্টে ফিরেন তখন তার নেতৃত্বেই অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে খেলে পাকিস্তান। তবে সেই ম্যাচের পর আবার টেস্ট ক্রিকেট থেকে চূড়ান্ত অবসর নেন তিনি।
২০১১ সালে ওয়ানডে বিশ্বকাপে ভারতের কাছে হেরে সেমিফাইনাল থেকে পাকিস্তান বিদায় নিলে অধিনায়কত্ব হারান আফ্রিদি। এরপরই আন্তর্জাতিক ক্রিকেট থেকে অবসরের ঘোষণা দেন তিনি। তবে কয়েক মাস পর তিনি সিদ্ধান্ত বদলে ফের মাঠে ফিরে আসেন।
২. ইমরান খান
ওডিআই ও টেস্ট মিলিয়ে ৭,০০০-এর বেশি রান এবং ৫৪৪টি উইকেট নিয়ে পাকিস্তানের সর্বকালের অন্যতম সেরা অলরাউন্ডার হিসেবে নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করেছেন ইমরান খান। ১৯৮৭ সালের বিশ্বকাপ শেষে ৩৫ বছর বয়সী ইমরান আন্তর্জাতিক ক্রিকেট থেকে অবসর নেন। তবে ভক্তদের চাপ এবং তৎকালীন প্রেসিডেন্ট জিয়াউল হকের অনুরোধে ১৯৮৮ সালে মাঠে ফেরেন। তার নেতৃত্বেই পাকিস্তান ১৯৯২ সালের বিশ্বকাপ জেতে। এরপর তিনি আন্তর্জাতিক ক্রিকেট থেকে চূড়ান্তভাবে বিদায় নেন।
৩. মোহাম্মদ আমির
মোহাম্মদ আমির ২০০৯ সালে আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে অভিষেকের পর দ্রুত পাকিস্তানের অন্যতম সেরা বোলারে পরিণত হন। তবে ২০১০ সালের লর্ডস টেস্টে স্পট-ফিক্সিং কেলেঙ্কারিতে জড়িয়ে গেলে, আইসিসি তাকে পাঁচ বছরের জন্য নিষিদ্ধ করে। নিষেধাজ্ঞা শেষে আমির ২০১৬ সালে মাঠে ফেরেন। ২০১৭ সালের চ্যাম্পিয়নস ট্রফির ফাইনালে ভারতের বিপক্ষে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখেন। তবে ২০১৯ সালে টেস্ট এবং ওডিআই থেকে অবসর নেন এবং ২০২১ সালে সব ফরম্যাট থেকে অবসরের ঘোষণা দেন।
এরপর ২০২৪ সালের টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের জন্য ফের মাঠে নামার ঘোষণা দেন। সেই টুর্নামেন্টে আমির দলের সেরা বোলার হলেও পাকিস্তান সুপার ৮ পর্যায়ে উঠতে ব্যর্থ হয়। অবশেষে গতকাল ১৪ ডিসেম্বর আমির পুনরায় আন্তর্জাতিক ক্রিকেট থেকে অবসরের ঘোষণা দেন।
৪. ইমাদ ওয়াসিম
২০১৫ সালে আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে অভিষেক হয় ইমাদ ওয়াসিমের। তিনি ১৩০টি ম্যাচে ১,৫৪০ রান এবং ১১৭টি উইকেট নিয়েছেন। তবে ২০২৩ বিশ্বকাপের দলে না থাকায় ইমাদ আন্তর্জাতিক ক্রিকেট থেকে অবসরের ঘোষণা দেন।
তবে পিএসএলে সফল মৌসুম কাটানোর পর ইমাদ আবারও মাঠে ফেরেন এবং ২০২৪ সালের টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের দলে যুক্ত হন তিনি। এরপর ১৩ ডিসেম্বর ইমাদ আন্তর্জাতিক ক্রিকেট থেকে চূড়ান্ত অবসরের ঘোষণা দেন। তবে তিনি ঘরোয়া এবং ফ্র্যাঞ্চাইজি ক্রিকেট চালিয়ে যাবেন বলে জানান।
৫. জাভেদ মিয়াঁদাদ
পাকিস্তানের অন্যতম সেরা ব্যাটসম্যান জাভেদ মিয়াঁদাদের ১৯৭৫ সালে আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে অভিষেক হয়। ৩১টি সেঞ্চুরি এবং ৯৩টি হাফসেঞ্চুরিতে তিনি ১৬,০০০-এর বেশি রান করেন। ১৯৯৪ সালে, বাজে ফর্মের কারণে অধিনায়ক ওয়াসিম আকরাম তাকে দল থেকে বাদ দেন। এরপর মিয়াঁদাদ প্রেস কনফারেন্সে কান্নাকাটি করে আন্তর্জাতিক ক্রিকেট থেকে অবসরের ঘোষণা দেন।
এরপর ভক্তরা ‘নো মিয়াঁদাদ, নো ক্রিকেট’ স্লোগান তোলেন। পাকিস্তানের তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী বেনজির ভুট্টো তাকে সিদ্ধান্ত পুনর্বিবেচনার অনুরোধ করেন। এরপর মিয়াঁদাদ ১৯৯৬ সালের বিশ্বকাপে খেলেন। তবে মাত্র ৫৪ রান করে পাকিস্তানের সেমিফাইনাল ব্যর্থতার পর তিনি চূড়ান্তভাবে অবসর নেন।