স্পোর্টস ডেস্ক: বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ডের (বিসিবি) ক্রিকেট পরিচালনা বিভাগের চেয়ারম্যান নাঈমুর রহমান দুর্জয়। চলতি বছর বিশ্বকাপ ক্রিকেটের কিছুদিন আগে এই পদে সাবেক অধিনায়ক আকরাম খানের স্থলাভিষিক্ত হয়েছেন তিনি। কিন্তু বিশ্বকাপ থেকে ফিরেই জাতীয় দলের প্রধান কোচ চন্ডিকা হাথুরুসিংহের সঙ্গে দ্বন্দ্বে জড়িয়ে পড়েছিলেন দুর্জয়। বিষয়টি গোপন থাকেনি; মিডিয়াতেও তা ফলাও করে প্রকাশিত হয়েছিল।
মূলত তখন থেকেই হাথুরুসিংহে ও নাঈমুর রহমান দুর্জয়ের মধ্যে এক ধরনের সমন্বয়হীনতা স্পষ্ট হয়ে উঠেছে। বর্তমানে বিসিবি সভাপতি নাজমুল হাসান পাপনের সঙ্গেও দূরত্ব সৃষ্টি হয়েছে তার। যদিও দুর্জয় বিষয়টিকে দূরত্ব নয়, কাজের পলিসিগত কিছু সমস্যা তৈরি হয়েছে বলে মত দিয়েছেন।
কোচ হাথুরুসিংহে যে কোনো ইস্যুতেই নাজমুল হাসান পাপনের শরণাপন্ন হন। এই বিষয়টি পছন্দ নয় দুর্জয়ের। এই নিয়ে তিনি সংবাদ মাধ্যমের কাছে ক্ষোভও প্রকাশ করেছেন তিনি।
বর্তমানে ভারত সফর করছে বাংলাদেশ ‘এ’ দল। সফরে দলের কোচ হিসেবে সারোয়ার ইমরান ও ম্যানেজার হিসেবে হাবিবুল বাশারের যাওয়ার কথা ছিল। ক্রিকেট পরিচালনা বিভাগ তেমনটাই সাজেশন করেছিল। কিন্তু দলটির কোচ হিসেবে গিয়েছেন জাতীয় দলের বোলিং কোচ হিথ স্ট্রিক ও ম্যানেজার হিসেবে রয়েছেন প্রধান নির্বাচক ফারুক আহমেদ। হাথুরুসিংহের ইচ্ছেতেই বোর্ড হিথ স্ট্রিক ও ফারুক আহমেদকে পাঠিয়েছে।
এদিকে, বাংলাদেশ প্রিমিয়ার লিগের (বিপিএল) তৃতীয় আসরে খেলোয়াড়দের পারিশ্রমিক নির্ধারণের দায়িত্ব অর্পিত হয়েছে নাঈমুর রহমান দুর্জয়ের ওপরই। কিন্তু এই বিষয়ে তিনি কিছুই জানেন না। মঙ্গলবার এমনটাই দাবি করেছেন দুর্জয়। বিপিএল ইস্যুর পাশাপাশি সাম্প্রতিক সময়ের বিভিন্ন বিষয়ে এ দিন মিডিয়ার সঙ্গে কথা বলেছেন তিনি।
প্রশ্ন : বিপিএলে দেশী ও বিদেশী খেলোয়াড়দের তালিকা এবং পারিশ্রমিক নির্ধারণের কমিটিতে আপনি আছেন। কিন্তু আপনি বলছেন যে এই বিষয়ে কিছুই জানেন না। এটা কী বোর্ডের সঙ্গে আপনার দূরত্ব তৈরির বিষয়টিই ফুটিয়ে তুলছে না?
দুর্জয় : আমি বোর্ডে আছি। এখন আমাকে কীভাবে কাজে লাগানো হবে, তা তো বোর্ডের ব্যাপার। যদি আমাকে দায়িত্ব দেওয়া হয়, আমি কাজটি করব। যদি দায়িত্ব না দেওয়া হয়, তাহলে তো জোর করে দায়িত্ব নিয়ে কাজ করা যাবে না।
প্রশ্ন : ভারতীয় ক্রিকেট বোর্ডের সভাপতি জগমোহন ডালমিয়া মারা যাওয়ার পর বোর্ডের পক্ষ থেকে কেউ ভারতে যায়নি। এখানেও কি সমন্বয়ের অভাব স্পষ্ট নয়?
দুর্জয় : আমি ব্যক্তিগতভাবে মনে করি, অবশ্যই বিসিবির কোনো প্রতিনিধির সেখানে যাওয়া উচিত ছিল। আমি যতদূর জানি, যাওয়ার কথাও ছিল। কিন্তু কেন যেতে পারেননি, জানি না। শুনেছি ভিসা জটিলতা কিংবা টিকিট না পাওয়ায় যাওয়া হয়নি।
প্রশ্ন : আপনার কাজের ক্ষেত্র কী কমে যাচ্ছে?
দুর্জয় : কাজের জায়গা কমা-বাড়ার কিছু নেই। আমার কাজটুকু আমি করার চেষ্টা করি। আর আমার কাজ কিন্তু সুপারিশ করা পর্যন্তই। অনুমোদন দেওয়ার বিষয়টি আমার এখতিয়ার নয়। আমি সুপারিশ করি। তা গৃহীত হতেও পারে, আবার নাও পারে। বোর্ড সভাপতি মহোদয় যদি মনে করেন, আমি যেটা সুপারিশ করেছি এর চেয়েও ভাল কিছু হতে পারে, তাহলে তিনি তাই করেন।
প্রশ্ন : এমন অবস্থায় কাজ করে স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করছেন?
দুর্জয় : সত্যি কথা বললে, খুব যে স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করছি তা নয়। সোজাসুজি বললে, আমার সুপারিশ করা কিছু যদি আপনি গ্রহণ না করেন এবং পাল্টে দেন, তাহলে তা আমাকে বললেই আমিই পাল্টে দিতে পারি; আলাপটা অন্তত আমার সঙ্গেই হওয়া উচিত।
প্রশ্ন : জাতীয় দলের কোচিং স্টাফ আপনার ডিপার্টমেন্টেই। তাদের বিষয় নিয়ে আলাপ আপনার সঙ্গেই হওয়া উচিত?
দুর্জয় : খেলোয়াড় হোক কিংবা সাপোর্ট স্টাফ, এটা আমরা ক্রিকেট অপারেশন্স থেকেই সুপারিশ করি। এবার যেমন আমরা ঠিক করেছিলাম বাংলাদেশ ‘এ’ দলের ভারত সফরে ম্যানেজার ও নির্বাচক একজনই হবেন। সে জন্য আমি প্রধান নির্বাচকের কাছ থেকে সুপারিশ চেয়েছিলাম। বলেছিলাম, আপনি নাম দেন, যাকে আপনি ম্যানেজার কাম নির্বাচক হিসেবে সফরে পাঠাতে চান। উনিই নাম পাঠিয়েছেন। পরে দেখা গেল যিনি সুপারিশ করেছেন, তিনিই চলে যাচ্ছেন।
প্রশ্ন : আপনার কথায় পরিষ্কার যে বোর্ড সভাপতির সঙ্গে আপনার একটা দূরত্ব তৈরি হয়েছে। এটি ঘোঁচানোর জন্য তার সঙ্গে কী আপনার কথা হয়েছে?
দুর্জয় : উনি দেশের বাইরে। উনি ফিরলে আমি অবশ্যই তার সঙ্গে কথা বলব। দূরত্ব বলব না। তবে কিছু পরিবর্তন হয়েছে যেগুলো আমাকে না জানিয়েই করা হয়েছে। আমার সুপারিশ না-ই গৃহীত হতে পারে। কারণ, আমি তো সুপারিশ করি কেবল; অনুমোদন দেই না।
প্রশ্ন : আপনার কী মনে হয় যে আপনাদের মাঝে তৃতীয় কোনো পক্ষ ভূমিকা রাখছে?
দুর্জয় : আসলে বোর্ড সভাপতির সঙ্গে যতক্ষণ না কথা বলছি, এটা নিয়ে স্বচ্ছ ধারণাও পাব না। আবার এর আগে এটা নিয়ে কিছু বলাও ঠিক হবে না। ওনার সঙ্গে কথা বললেই বুঝতে পারব আসলে ঘটনাটা কী। ওনার সঙ্গে দূরত্ব নয়, আসলে কাজের পলিসিগত কিছু সমস্যা তৈরি হয়েছে।
প্রশ্ন : দায়িত্ব নেওয়ার পরেও প্রটোকলের বিষয়ে আপনি খুব সোচ্চার ছিলেন। বিশেষ করে হেড কোচ যাতে প্রটোকল ভেঙ্গে সরাসরি বোর্ড সভাপতির কাছে চলে না যান, সে বিষয়ে উচ্চকণ্ঠ ছিলেন। কিন্তু এখন তো শোনা যায় কোচ সরাসরিই বোর্ড সভাপতির কাছে চলে যান।
দুর্জয় : প্রটোকলের কথা আসলে পরে কিছু লোকের কথা বলতে হয়। আমি নাম উল্লেখ করব না। অনেকেই এসে খুব সুন্দর করে আমাকে বলেন, ‘না, প্রটোকল মেনে চলা উচিত। তোমার মাধ্যমেই কোচের বোর্ড সভাপতির কাছে যাওয়া উচিত।’ কিন্তু ওই লোকটিই সবার আগে কোচকে সভাপতির কাছে নিয়ে যাচ্ছেন।
প্রশ্ন : এই পরিস্থিতিতে আপনি পদত্যাগ করতে চান বলেও খবর ছড়িয়ে পড়েছিল।
দুর্জয় : নাহ, ওই ধরনের চিন্তা আমি এখনো করিনি। এখনো বিশ্বাস করি, বোর্ড সভাপতির সঙ্গে কথা বলার পর সমস্যাগুলো মিটে যাবে।-দ্যা রিপোর্ট
২২ সেপ্টেম্বর,২০১৫/এমটিনিউজ২৪/রাসেল/মাহমুদ