স্পোর্টস ডেস্ক : যোগ্যতা থাকার পরও সাফ চ্যাম্পিয়নশিপে বাংলাদেশ একবারই চ্যাম্পিয়ন হয়েছে। সুতরাং ফুটবলে ব্যর্থতা নতুন কিছু নয়। কিন্তু এবার কেরালা সাফে বাংলাদেশ সেমিফাইনালে উঠতে না পারায় দেশজুড়ে নিন্দার ঝড় বয়ে যাচ্ছে।
এতটা খারাপ অবস্থা যে বাফুফে সভাপতি কাজী সালাউদ্দিন ব্যর্থতার জন্য ক্ষমা চাইতে বাধ্য হয়েছেন। অথচ আগের দুই আসরেও গ্রুপপর্ব থেকেই বাংলাদেশ বিদায় নিয়েছিল। যাক আগে বাফুফে নীরব থাকলেও এবার ব্যর্থতা চিহ্নিত করতে উঠে-পড়ে লেগেছে। আসর শেষ হওয়ার পরই তদন্ত কমিটিও গঠন হয়েছে।
ফুটবলে যে করুণ অবস্থা তা সত্যিই মানা যায় না। সে কারণে তদন্ত কমিটি গঠন হওয়ায় ফুটবলপ্রেমীরা খুশি হয়েছেন। ব্যর্থতার কারণ বের করলে ফুটবলই উপকৃত হবে। দেশের সাবেক নন্দিত ফুটবলার শেখ মো. আসলামকে প্রধান করে তিন সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন হয়। অপর দুই সদস্য হচ্ছেন জাতীয় দলের আরেক সাবেক ফুটবলার ইলিয়াস হোসেন ও আজমল হোসেন তপন।
বাংলাদেশে তদন্ত মানেই কমিটি গঠন করেই শেষ। রিপোর্ট জমা পড়েছে এমন ঘটনা কমই বলা যায়। তবে আসলামদের ধন্যবাদ দিতে হয় তারা ব্যর্থতা চিহ্নিত করে বাফুফে সভাপতি কাজী সালাউদ্দিনের কাছে রিপোর্ট জমা দিয়েছেন। তদন্তে সাফের ব্যর্থতা হিসেবে মূলত একটাই কারণ তুলে ধরা হয়েছে, আর তা শৃঙ্খলা ভঙ্গ।
কারও কারও বিরুদ্ধে মাদক সেবনের অভিযোগও আনা হয়েছে। এর আগে বিভিন্ন অপরাধে ফুটবলারদের শাস্তি দেওয়া হয়েছে। বর্তমানে বাফুফে সভাপতি কাজী সালাউদ্দিনও ১৯৭৮ সালে কয়েক মাসের জন্য নিষিদ্ধ হয়েছিলেন। সঙ্গে ছিলেন আরও পাঁচ তারকা ফুটবলার।
অপরাধ ছিল এশিয়ান গেমস বর্জন করা। সাফ ব্যর্থতার তদন্ত কমিটির প্রধান আসলামও ১৯৮৭ সালে ১ বছরের জন্য নিষিদ্ধ হন। তবে কখনো কারও বিরুদ্ধে মাদক সেবনের অভিযোগ আনা হয়নি। বাংলাদেশের ফুটবল ইতিহাসে এটাই প্রথম।
সোমবার তদন্ত কমিটির রিপোর্ট পর্যালোচনা করতে এক সভায় বসেন ন্যাশনাল টিম কমিটির কর্মকর্তারা। ফেডারেশন সহ-সভাপতি কাজী নাবিল আহমেদের সভাপতিত্বে এই বৈঠকে তদন্ত কমিটির রিপোর্ট নিয়ে কেউ আপত্তি করেননি।
অর্থাৎ খেলোয়াড়রা দোষী এটাই সত্যি। পুরো দল নয়, সাত খেলোয়াড় অধিনায়ক মামুনুল ইসলাম, জাহিদ হোসেন, ইয়াসিন মুন্না, সোহেল রানা, ইয়াসিন আহমেদ, আতিকুর রহমান মিশু ও সোহেলের বিরুদ্ধে শৃঙ্খলা ভঙের অভিযোগ আনা হয়েছে।
তবে এখন পর্যন্ত কোনো শাস্তি দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়নি। তাদেরকে নির্দোষ প্রমাণের সুযোগ দেওয়া হচ্ছে। এজন্য সাতজনকেই শোকজ নোটিস দেওয়া হবে। নোটিসে তারা কী জবাব দেবেন এটার উপরই নির্ভর করছে শাস্তি।
ন্যাশনাল টিম কমিটির সিদ্ধান্ত নিয়ে আবার মিশ্র প্রতিক্রিয়া দেখা দিয়েছে। কেউ কেউ আবার একে উদ্দেশ্যমূলকও বলছেন। জাতীয় দলের সাবেক ফুটবলার ছাইদ হাছান কানন বলেন, শৃঙ্খলা ভাঙলে শাস্তি পেতেই হবে। কথা হচ্ছে সাত ফুটবলার শৃঙ্খলা ভাঙার সুযোগ পেল কিভাবে?
খেলোয়াড়দের দেখাশোনার জন্য কেরালায় দল নেতা, ম্যানেজার, কোচ ও অন্য কর্মকর্তারা ছিলেন। তাদের চোখকে ফাঁকি দিয়ে কেউ অপকর্ম করবে তা আমি ভাবতেই পারছি না। খেলার আগের দিন কোনো কোনো ফুটবলার নাকি মদপানও করেছেন। দীর্ঘদিন আমি ফুটবল খেলেছি, তাই একথা আমি জীবনেও বিশ্বাস করব না জাতীয় দলের ফুটবলাররা খেলার আগের দিন মদ খেয়েছেন।
যাক তর্কে না জড়িয়ে ধরলাম মদ খেয়েছে কেউ কেউ। কিন্তু এ ঘটনা ঘটল কিভাবে। এখানে তো আমি দায়ী করব কেরালায় যাওয়া টিম ম্যানেজমেন্টকে। তারা এ সময়ে কি করছিলেন? তদন্তে কেন শুধু খেলোয়াড়দের দোষী করা হচ্ছে। এক্ষেত্রে তো আসল দোষীইতো ম্যানেজমেন্ট।
এখন দলের সফরসঙ্গী হওয়া সব কর্মকর্তারা ভালো, আর খেলোয়াড়রা ভিলেন তা আমি কোনোভাবে মেনে নিতে পারছি না। আশ্চর্য লাগল সোমবার টিম ম্যানেজমেন্ট বৈঠকে কেরালায় যাওয়া একজন কর্মকর্তার উপস্থিতি দেখে।
খেলোয়াড়দের দেখাশোনার দায়িত্ব মূলত তারই ছিল। অথচ তিনি পার পেয়ে যাবেন এ কেমন কথা। আমি মনে করি এ তদন্ত পুনরায় হোক। তা না হলে খেলোয়াড়দের শুধু শাস্তি কোনো সচেতন মহলই মেনে নেবেন না।
জাতীয় দলের সাবেক অধিনায়ক আমিনুল হক বলেন, সাত ফুটবলারকে দোষী সাব্যস্ত করায় আমি অবাক হইনি। কারণ বাংলাদেশে ফুটবলাররা সব সময় বলির পাঁঠা হচ্ছেন। তারপরও বলব কেউ অপরাধ করলে শাস্তি পেতেই হবে। প্রশ্ন হচ্ছে সাফ ফুটবলারের বিরুদ্ধে যে অভিযোগ আনা হয়েছে তার প্রমাণ কি আছে?
আর সাফ চ্যাম্পিয়নশিপ চলাকালে এরা যদি অপকর্ম করেও থাকে তাহলে টিম ম্যানেজমেন্ট কি করছিল? সাফ হচ্ছে এই অঞ্চলের বিশ্বকাপের মতো। এত বড় টুর্নামেন্ট চলাকালে কেউ মদপান করবে এটা আমি কোনোভাবে বিশ্বাস করব না। এখানে তো বাফুফের আগে ধরা উচিত টিম ম্যানেজমেন্টকে।
তারা কি শুধু ঘুরতেই গিয়েছিলেন। সুতরাং কর্মকর্তাদের বাদ দিয়ে খেলোয়াড়রা শাস্তি পেলে ফুটবলে আরও দুর্গতি নেমে আসবে। একজন কর্মকর্তাকে দেখছি শাস্তির ব্যাপারে বেশ সোচ্চার। কিন্তু ২০০৮ সালের ঘটনা কি তার মনে আছে? কয়েকজন খেলোয়াড় ক্যাম্পে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করছিলেন। চেইন অব কমান্ড মানছিলেন না।
কোচ ডিডো তাদেরকে ছাঁটাই করতে বলছিলেন। অথচ তিনিই বিশৃঙ্খল খেলোয়াড়দের পক্ষ নিলেন। আর এতে ডিডো অভিমানে চলে গেলেন। যদি বলি এখন যদি কেউ উচ্ছৃঙ্খল হয়েও থাকে তার ইন্ধনদাতা তিনিই। আসলে আমাদের দেশে কর্মকর্তারা এমনি নিজেদের ওপর কখনো দোষ চাপান না।
খেলোয়াড়দের তারা দাবার ঘুঁটি হিসেবেই ব্যবহার করেন। আমি বলব হুট করে কাউকে শাস্তি দেওয়া ঠিক হবে না। কর্মকর্তারা এর পেছনে দায়ী কিনা তাও তদন্ত করা হোক। তা না হলে ফুটবলে অশান্তির ঝড় নেমে আসবে। -বিডি প্রতিদিন
২৪ ফেব্রুয়ারি, ২০১৬/এমটি নিউজ২৪/এসবি/এসএস