রবিবার, ১৬ মার্চ, ২০২৫, ০২:১৯:০৫

ফুটবলার হামজার স্ত্রী নামাজ পড়েন, রোজা রাখেন, কুরআন শিখেছেন

ফুটবলার হামজার স্ত্রী নামাজ পড়েন, রোজা রাখেন, কুরআন শিখেছেন

স্পোর্টস ডেস্ক : সিলেট হবিগঞ্জের বাহুবলের এক জন স্থানীয় তরুণ সাংবাদিক জানালেন একজন সরকারি কর্মকর্তা জিজ্ঞাসা করেছিলেন হামজা চৌধুরী কে। জবাবে সেই তরুণ সাংবাদিক বলেছেন এতো বড় একজন ফুটবলার আমাদের সন্তান সিলেটে আসছেন অথচ আপনি তাকে চেনেন না? দেশের সবাই জানেন।

ইংলিশ লিগে খেলা ফুটবলার বাংলাদেশের ছেলে হামজা চৌধুরী আসবেন উনি তাকে চেনেই না-কথা বলতে বলতে তার মোটরসাইকেল ছুটল হামজার বাড়ির দিকে। স্বস্তিপুর পার হয়ে ছুটে চলা মোটরবাইকে বসে দুই পাশের সবুজের পর সবুজ ধানখেত দেখে চোখ জুড়িয়ে যায়। ছবির মতো এমন দৃশ্য সহজেই হামজার স্ত্রী অলিভিয়ার হৃদয় কেড়ে নেবে। বাংলাদেশের সৌন্দর্য্য সম্পর্কে তার ধারণা বদলে যাবে।

হামজার আগমনকে কেন্দ্র করে গ্রামের সাধারণ মানুষের মধ্যে আনন্দ অন্যরকম। স্বস্তিপুর থেকেই শুরু হয়েছে সড়কে তোরণ স্থাপন করা। রাজনৈতিক ব্যক্তিরা এলাকায় গেলে তাকে ঘিরে পথে পথে তোরণ স্থান করে। কিন্তু একজন ফুটবলারের আগমন উপলক্ষ্যে যেভাবে পথে পথে তোরণ নির্মাণ করা হয়েছে তা বিস্ময়কর। বাংলাদেশের ফুটবলের ইতিহাসে এমন ছবি আর ছিল না। সিলেট মহাসড়ক থেকে হামজার গ্রাম স্নানঘাট পর্যন্ত পথে পথে তোরণের ভেতর দিয়ে যেতে হবে। ওখানকার মানুষ এতো দিন মেসি-রোনালদো নিয়ে ব্যস্ত ছিলেন এখন সেই মুখে হামজা চৌধুরীর নাম। গ্রামের সাধারণ মানুষের মুখে শোনা যায়, ‘ঘরের পোলা ঘরে আইতাছে আমরা তারে দেখতে অপেক্ষা করতাছি। হে আমরার গৌরব নামকরা ফুটবল খেলোয়াড়। আমরা হকলে মিলে তাকে দেখব।

স্নানঘাটের সাধারণ মানুষের মনে এখন অন্য রকম আনন্দ। বাড়ির গেটের সামনে বাঁশ গেঁথে পতাকা লাগানোর উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। এসব কি হামজার জন্য করা হয়েছে কিনা জানতে চাইলে গ্রামের মানুষরা বলেন, ‘অয় অয়।

হামজা আসবেন তার স্ত্রী এবং তিন সন্তান নিয়ে। তাদের জন্য বাবা দেওয়ান মোরশেদ ব্যস্ত। গতকাল বিকালে বাড়িতে গিয়ে দেখা যায়। লন্ডন প্রবাসী দেওয়ান মোরশেদ হামজার আগমন উপলক্ষ্যে পুরো বাড়ি নিরাপত্তা দিয়ে ঘিরে রাখার ব্যবস্থা করছেন। ওয়েল্ডিং মিস্ত্রি এনে লোহা দিয়ে ঝালিয়ে নিচ্ছেন ভাঙা অংশ। বড় বাড়ি। এতো দিন চার দিকে খোলামেলা ছিল। কিন্তু হামজার পরিবারের আগমনে যেভাবে গ্রামের মানুষ উচ্ছ্বাস প্রকাশ করছে তাতে সাধারণ জীবন যাপন ব্যাহত হওয়ার সম্ভাবনা দেখছেন দেওয়ান মোরশেদ। ‘দেখুন হামজার স্ত্রী অলিভিয়া চৌধুরী এবং তাদের সন্তানরা কখনো বাংলাদেশে আসেনি। এবারই প্রথম আসছেন তারা। বাড়িতে আসবেন মাত্র এক দিনের জন্য। একটু ফ্রি চলাফেরা করতে গিয়ে যদি দেখেন বাড়ির উঠান তরা কৌতুহলি মানুষ। তাহলে ওরা স্বস্তি পাবে না।’

তিনি বলেন, ‘আমাদের বাড়ির চারদিকটা ঘিরে দিয়েছি। যাতে কেউ চাইলেই যেন ফাঁক ফোকর দিয়ে প্রবেশ করতে না পারেন। শক্ত করে কাঁটা তারের বেড়া দেওয়া হচ্ছে।’ তিনি বলেন, ‘হামজা আসছে আমার ছেলে হিসাবে। এখানে এসে ভালো না লাগলে মায়া না লাগলে আর আসবে না।

হামজা আসবেন বলে তার জন্য পুরো বাড়ি ঝাড়পোছ করা হচ্ছে। রঙের কাজ করা হয়েছে। ঘরের ভেতরে ফার্নিচার সব এলোমেলো হয়ে আছে, লেবার এনে সবকিছু সাজানো হচ্ছে। দেখে মনে হতে পারে যেন বিয়ে বাড়ির সাজে সেজে উঠছে। হামজার বাবা জানালেন পাশেই স্ত্রী অলিভিয়া ও সন্তানদের নিয়ে হামজা কোন রুমে থাকবেন। হামজার স্ত্রী এবং তার তিন সন্তানের কথা বেশি গুরুত্ব দিচ্ছেন বাড়ির লোকজন। হামজার দুই ছেলে এক মেয়ে। লন্ডনের বাড়িতে প্রতিসপ্তাহে মিলাদ পড়েন তারা। দেওয়ান মোরশেদ জানান হামজা লন্ডনে কুরআন শিখেছেন। রোজা রাখেন, কিন্তু ম্যাচের দিন রোজা থাকেন না। অনুশীলনের দিন রাখেন। স্ত্রী অলিভিয়া হামজার সঙ্গে বিয়ের আগেই মুসলিম ধর্ম গ্রহণ করেছেন। তিনিও কুরআন পাঠ করেন। এখন অনলাইনে সন্তানদের ইসলামের শিক্ষা দিচ্ছেন।

গ্রামের বাড়িতে এক দিনের জন্য আসবেন হামজা। ১৭ মার্চ সকালে সিলেট বিমানবন্দরে নামার কথা রয়েছে। ওখান থেকে ঢাকায় ফিরবেন ১৮ মার্চ সন্ধ্যায়।-ইত্তেফাক

Follow করুন এমটিনিউজ২৪ গুগল নিউজ, টুইটার , ফেসবুক এবং সাবস্ক্রাইব করুন এমটিনিউজ২৪ ইউটিউব চ্যানেলে