এমটিনিউজ২৪ ডেস্ক : দেশত্যাগে আদালতের নিষেধাজ্ঞা রয়েছে পাপন পরিবারের সবার বিরুদ্ধে। রয়েছে নির্বাচনি এলাকা কিশোরগঞ্জ-০৬ (ভৈরব-কুলিয়ারচর) এবং কিশোরগঞ্জ সদর থানাসহ একাধিক থানায় জুলাই আন্দোলনের সহিংসতার মামলা। কিন্তু দীর্ঘদিন পরেও পতিত ফ্যাসিস্ট হাসিনা সরকারের ক্ষমতার কেন্দ্রবিন্দুতে থাকা কিশোরগঞ্জের দ্বিতীয় প্রভাবশালী ব্যক্তি সাবেক রাষ্ট্রপতি জিল্লুর রহমানের ছেলে সাবেক সংসদ-সদস্য নাজমুল হাসান পাপন অধরাই রয়ে গেলেন।
তবে, সংশ্লিষ্ট একাধিক সূত্র মতে, নাজমুল হাসান পাপন সরকার পতনের বেশ কিছুদিন আগে থেকেই সপরিবারে লন্ডনে অবস্থান করছিলেন। অবশ্য অন্য একটি সূত্র মতে, সরকার পতনের আগেই তিনি সপরিবারে লন্ডন থেকে ফিরে এসেছিলেন। বর্তমানে দেশেই সপরিবারে আত্মগোপনে রয়েছেন বলে নানা গুঞ্জন রয়েছে।
সম্প্রতি সাবেক রাষ্ট্রপতি আবদুল হামিদ জুলাই আন্দোলনের সহিংসতার মামলা মাথায় নিয়ে মধ্যরাতে বিদেশ পাড়ি জমানোর পর পাপনের নামও লোকজনের মুখে মুখে উচ্চারিত হচ্ছে। সাবেক প্রধানমন্ত্রীর বেসরকারি শিল্প ও বিনিয়োগ উপদেষ্টা সালমান এফ রহমান আটক হন। তার আটকের ঘটনার পর থেকেও ব্যাপকভাবে আলোচিত হচ্ছিল তার অপকর্মের অন্যতম সহযোগী ব্যবসায়িক পার্টনার সাবেক যুব ও ক্রীড়া মন্ত্রী, বিসিবি সভাপতি পাপনের নাম।
২০১৯ সালের দিকে ক্যাসিনো পাপনের তকমা পাওয়া কিশোরগঞ্জ-৬ আসনের সংসদ-সদস্যের প্রত্যক্ষ মদদে বাংলাদেশে ক্যাসিনো জুয়ার প্রচলন ঘটে। আর তখন ক্যাসিনো কাণ্ডে তোলপাড় সৃষ্টি হয় দেশে। অভিযোগ রয়েছে, সালমান এফ রহমানের সব অপকর্মের অন্যতম সহযোগী নাজমুল হাসান পাপন যুব ও ক্রীড়া মন্ত্রী, বিসিবির সভাপতি, আবাহনী লিমিটেডের ক্রিকেট কমিটির সভাপতির দায়িত্ব পালনকালে বাংলাদেশে ক্যাসিনো জুয়ার প্রচলনের পাশাপাশি বিভিন্নভাবে হাজার হাজার কোটি টাকা হাতিয়ে নেন। গুঞ্জন আছে, দুবাইয়ে তার রয়েছে সালমান এফ রহমানের যৌথ মালিকানায় হাজার কোটি টাকার ব্যবসা প্রতিষ্ঠান।
বিসিবির সাবেক সভাপতি এবং সাবেক মন্ত্রী নাজমুল হাসান পাপন এবং তার পরিবারের আরও ৫ সদস্যের দেশত্যাগের নিষেধাজ্ঞা চেয়ে দুদকের উপপরিচালক সাইদুজ্জামান ঢাকা মহানগর সিনিয়র স্পেশাল জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে দেশত্যাগে নিষেধাজ্ঞা চেয়ে আবেদন করে। ১৬ মার্চ আদালতের বিচারক জাকির হোসেন গালিব এ আবেদন শুনানি শেষে আবেদন মঞ্জুর করে।
দুদকের উপপরিচালক সাইদুজ্জামান আদালতে দেশত্যাগে নিষেধাজ্ঞা চেয়ে আবেদনে বলেন, নাজমুল হাসান পাপন ও অন্যদের বিরুদ্ধে বিভিন্ন অনিয়ম, দুর্নীতির মাধ্যমে বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ড ও সরকারি অর্থ আত্মসাৎপূর্বক নিজ নামে ও পরিবারের সদস্যদের নামে দেশে-বিদেশে বিপুল পরিমাণ জ্ঞাত আয় বহির্ভূত সম্পদ অর্জনের অভিযোগের অনুসন্ধান চলছে।
গোপন ও বিশ্বস্ত সূত্রে জানা যায়, নাজমুল হাসান পাপন ও তার পরিবারের সদস্যদের নামে দেশের বিভিন্ন স্থানে (কিশোরগঞ্জ, গাজীপুর, ঢাকা এলাকা ছাড়াও অন্যান্য এলাকায়) এবং দেশের বাইরে দুবাই, যুক্তরাষ্ট্র, কানাডাসহ অন্যান্য দেশে জ্ঞাত আয় বহির্ভূত সম্পদ রয়েছে। তারা বিদেশে পালিয়ে গেলে অনুসন্ধান কাজ ব্যাহত হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।
জানা গেছে, ২০১৯ সালের দিকে ক্যাসিনো পাপনের তকমা পাওয়া কিশোরগঞ্জ-৬ আসনের সংসদ-সদস্যের প্রত্যক্ষ মদদে বাংলাদেশে ক্যাসিনো জুয়ার প্রচলন ঘটে। আর তখন ক্যাসিনো কাণ্ডে তোলপাড় সৃষ্টি হয় দেশে। অভিযোগ রয়েছে, সালমান এফ রহমানের সব অপকর্মের অন্যতম সহযোগী নাজমুল হাসান পাপন যুব ও ক্রীড়া মন্ত্রী, বিসিবির সভাপতি, আবাহনী লিমিটেডের ক্রিকেট কমিটির সভাপতির দায়িত্ব পালনকালে বাংলাদেশে ক্যাসিনো জুয়ার প্রচলনের পাশাপাশি বিভিন্নভাবে হাজার হাজার কোটি টাকা হাতিয়ে নেন।
গুঞ্জন আছে, দুবাইয়ে তার রয়েছে সালমান এফ রহমানের যৌথ মালিকানায় হাজার কোটি টাকার ব্যবসা প্রতিষ্ঠান। তার শত শত কোটি টাকা পাচারে সহযোগিতা করে দুবাই প্রবাসী ব্যবসায়ী কুলিয়ারচর উপজেলা পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান ইয়াসির মিয়া। গুঞ্জন রয়েছে ছিচকে ছিনতাইকারী ভূমিদস্যু থেকে কোটি কোটি টাকা এবং অবিশ্বাস্য বিত্তবৈভবের মালিক ভৈরব আ.লীগের পলাতক নেতা মোশাররফ হোসেন মিন্টুও পাপনের অবৈধ অর্থের আরেক বিশেষ বাহক।
তার বিরুদ্ধে অভিযোগ রয়েছে ২০২২ সালে কুলিয়ারচর উপজেলা পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান ইয়াসির মিয়া কর্তৃক চারশ বছরের পুরোনো কিশোরগঞ্জের কুলিয়ারচর উপজেলার ঘোষপাড়ার সনাতন ধর্মাবলম্বী হিন্দু সম্প্রদায়ের লোকজনের শ্মশান গুঁড়িয়ে দিয়ে দখলের মদদদাতা হিসাবে। এমন সাম্প্রদায়িক দখলদারির পরের দিন অভিযুক্ত উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান ইয়াসির মিয়াকে সঙ্গে নিয়েই ঘটনাস্থল পরিদর্শন করতে যান পাপন।
যে কারণে ইয়াসির মিয়া আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী এবং আইন-আদালতের ঝুট-ঝামেলারও ঊর্ধ্বে থেকে যান। এলাকায় তখন থেকেই গুঞ্জন ওঠে দুবাইয়ে ইয়াসির মিয়ার সঙ্গেও পাপনের হাজার কোটি টাকার ব্যবসা থাকায় হিন্দু নির্যাতন ও শ্মশানের শত শত বছরের পুরোনো স্থাপনা গুঁড়িয়ে দিয়ে দখল করে পার পেয়ে যান।
ছাত্র-জনতার জুলাই বিপ্লবের পর স্বৈরাচারী সরকারের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ভারতে পালিয়ে যাওয়ার পর তার বেসরকারি শিল্প ও বিনিয়োগ উপদেষ্টা সালমান এফ রহমান আটক হয়। আর তার আটকের পর থেকে কিশোরগঞ্জসহ গোটা দেশের মানুষের মুখে মুখে উচ্চারিত হচ্ছে, কোথায় তার অন্যতম সহযোগী সাবেক যুব ও ক্রীড়া মন্ত্রী নাজমুল হাসান পাপন?