স্পোর্টস ডেস্ক : প্রথমবারের মতো আয়োজিত হতে যাওয়া ফ্র্যাঞ্চাইজিভিত্তিক ঘরোয়া টি-টোয়েন্টি আসর পাকিস্তান সুপার লিগ (পিএসএল) শুরু এবং শেষের সময় চূড়ান্ত হয়েছে, তবে ভেন্যু এখনো নয়। আগামী ৪-২৪ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত অনুষ্ঠেয় টুর্নামেন্টের ম্যাচগুলো আসলে কোথায় হবে, তা নিশ্চিত করে বলার উপায় নেই এখনো। তবে যেখানেই হোক না কেন, এর কোনো ম্যাচই পাকিস্তানের মাটিতে হবে না। ভিনদেশি তারকা ক্রিকেটারদের টানতে যে নিজেদের দেশে এটি আয়োজন করলে হবে না পাকিস্তান ক্রিকেট বোর্ডের (পিসিবি)! তাই বিকল্প ভেন্যু হয় কাতারের দোহা নয়তো সংযুক্ত আরব আমিরাত। নিরাপত্তা ঝুঁকির কারণে ঘরোয়া আসরই বাইরে সরিয়ে নিচ্ছে যে পাকিস্তান, সেখানেই কিনা বাংলাদেশ নারী ক্রিকেট দলকে পাঠানোর প্রক্রিয়া প্রায় চূড়ান্ত!
এখন কেবল সরকারের তরফ থেকে সবুজ সংকেতের অপেক্ষায় বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ড (বিসিবি)। তার আগে ভিসা প্রক্রিয়া থেকে শুরু করে অন্য সব আনুষ্ঠানিকতাই সেরে রাখা হচ্ছে বলে গতকাল জানিয়েছেন বিসিবির প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা নিজাম উদ্দিন চৌধুরী, 'আমরা নারী ক্রিকেট দলকে পাকিস্তানে পাঠাতে প্রস্তুত। তবে সরকারের অনুমোদনেরও ব্যাপার আছে। সেটিরই অপেক্ষায় আছি। এর আগে এই সফরের সঙ্গে সম্পৃক্ত অন্যান্য আনুষঙ্গিক বিষয়গুলো আমরা এগিয়ে রেখেছি।
যদিও পাকিস্তানে নিরাপত্তা ঝুঁকির ব্যাপারটি তাঁদেরও ভালো করেই জানা। তবে লাহোর ও করাচি ঘুরে আসা চার সদস্যের নিরাপত্তা প্রতিনিধিদলের ইতিবাচক প্রতিবেদনের ভিত্তিতে আশ্বস্ত হয়ে তাঁরা নারী ক্রিকেট দলকে পাকিস্তানে পাঠানোর 'প্রতিশ্রুতি' রাখতে চলেছে। পিসিবির তরফ থেকে বরাবরই দল পাঠানোর চাপ ছিল। আবার এই সফরের সঙ্গে বাংলাদেশ প্রিমিয়ার লিগের (বিপিএল) তৃতীয় আসরে পাকিস্তানি ক্রিকেটারদের অংশগ্রহণ নিশ্চিত করার স্বার্থও জড়িয়ে রয়েছে বিসিবির। কিন্তু পিসিবির সঙ্গে দ্বিপক্ষীয় সম্পর্কোন্নয়ন করতে গিয়ে নারী ক্রিকেটারদের ঝুঁকির মুখে ঠেলে দেওয়া হচ্ছে বলেই মনে করছেন ক্রিকেট সংশ্লিষ্ট অনেকে।
এমনকি গত মাসের শুরুতে পাকিস্তানে নিজেদের নিরাপত্তা নিয়ে শঙ্কার কথা বলেছিলেন বাংলাদেশ নারী ক্রিকেট দলের অধিনায়ক সালমা খাতুনও, পাকিস্তান সফর নিয়ে সাধারণ মানুষের মনেও ভয় কাজ করে, আমাদের তো করবেই। সেই সঙ্গে তিনি এও বলেছিলেন, 'বিসিবি বললে তো যেতেই হবে। এ কারণেই প্রশ্নটা জাগছে যে নারী ক্রিকেটারদের ওপর এ মাসেই পাকিস্তানে যাওয়ার সিদ্ধান্ত চাপিয়ে দেওয়া হচ্ছে না তো? এ বিষয়ে ক্রিকেটারদের ভাষ্য পাওয়ার সুযোগ নেই। কারণ সালমার ওই মন্তব্যের পর থেকেই তাঁদের মুখে কুলুপ এঁটে দিয়েছে বিসিবি।
অবশ্য বিসিবির পরিচালক জালাল ইউনুসের দাবি, মেয়েদের জোর করে পাকিস্তানে পাঠানো হচ্ছে না, 'মেয়েরা সবাই পাকিস্তানে যেতে সম্মত। দূতাবাসের ডিফেন্স অ্যাটাশে এসে নিরাপত্তা ব্যবস্থাপনার বিষয়ে ওদের অবগত করে গেছেন। এর পরই পাকিস্তানে যাওয়া কিংবা না যাওয়ার বিষয়টি আমরা ওদের ওপরই ছেড়ে দিয়েছিলাম। কিন্তু পাকিস্তানে যেতে কেউই আপত্তি করেনি।'
বিসিবির চাহিদা অনুযায়ী তিনটি করে ওয়ানডে এবং টি-টোয়েন্টির সিরিজ থেকে ইতিমধ্যেই একটি করে ম্যাচ কমিয়ে এনেছে পিসিবি। ম্যাচগুলো হবে লাহোরের গাদ্দাফি স্টেডিয়াম এবং করাচির সাউথএন্ড মাঠে। পরের ভেন্যুটি করাচির ডিফেন্স অফিসার্স হাউজিং সোসাইটির (ডিওএইচএস) ভেতরে, যেখানে ১৯৯৩ সালে একটি টেস্ট ম্যাচও (পাকিস্তান-জিম্বাবুয়ে) হয়েছে। সংরক্ষিত ওই এলাকার বাসিন্দারা ছাড়া আর কোনো সাধারণ দর্শকের প্রবেশাধিকার থাকবে না পাকিস্তান ও বাংলাদেশের নারী ক্রিকেট দলের ম্যাচে।
বিসিবির নিরাপত্তা প্রতিনিধি দলের চাহিদা মেনেই এ ব্যবস্থা। গাদ্দাফি স্টেডিয়ামে অবশ্য খেলার প্রাণ দর্শকদের প্রবেশাধিকার থাকছে। ২০০৯ সালের মার্চে যে মাঠে যাওয়ার পথেই শ্রীলঙ্কান ক্রিকেট দল সন্ত্রাসী হামলার শিকার হয়েছিল। এর পর থেকে ছয় বছরেরও বেশি পাকিস্তানের মাটিতে আন্তর্জাতিক ক্রিকেট নির্বাসিত ছিল। লম্বা বিরতির পর গত মে মাসে জিম্বাবুয়েকে ধরে-বেঁধে আতিথ্য দিয়েছিল পিসিবি। কিন্তু সেই লাহোরে গত ২৯ মে দ্বিতীয় ওয়ানডে চলার সময় গাদ্দাফি স্টেডিয়ামের পাশেই আত্মঘাতী বোমা বিস্ফোরণের ঘটনা খবরের শিরোনাম হয়েছিল।
যদিও পাকিস্তান সফর করে আসা বিসিবির নিরাপত্তা প্রধান মেজর (অব.) হোসেন ইমাম অন্য রকমই শুনে এসেছেন, 'জিম্বাবুয়ের ম্যাচের সময় বিস্ফোরণের প্রসঙ্গটি আমরা তুলেছিলাম। কিন্তু আমাদের বলা হয়েছে ওটা নাকি গ্যাস সিলিন্ডার বিস্ফোরণ ছিল। এ সম্পর্কিত গোয়েন্দা প্রতিবেদনও দেখানো হয়েছে আমাদের।' অবশ্য আতঙ্ক না ছড়ানোর স্বার্থে ঘটনার পর জিম্বাবুয়ে দলকেও 'বিদ্যুতের ট্রান্সফরমার বিস্ফোরণের' কথা বলা হয়েছিল। যার শব্দ স্টেডিয়াম তো বটেই, কাচঘেরা প্রেসবক্সেও গিয়ে পৌঁছেছিল। যদিও খোদ পাকিস্তানের তথ্যমন্ত্রী পারভেজ রশীদ এটিকে আত্মঘাতী বোমা বিস্ফোরণের ঘটনা বলে নিশ্চিত করেছিলেন ওই দিনই। পরদিন পাকিস্তানের প্রভাবশালী দৈনিক 'দ্য ডন'-এর প্রতিবেদনে মন্ত্রীর বরাত দিয়ে এটিও বলা হয় যে সন্ত্রাসীদের লক্ষ্য ছিল স্টেডিয়াম! কিন্তু এক পুলিশ কর্মকর্তার প্রাণের বিনিময়ে সেই চেষ্টা প্রতিহত হয় মাত্র মাস চারেক আগেই।
জিম্বাবুয়ে দল নিরাপদেই ফিরেছে দেশে। প্রার্থনা, নিরাপদে ফিরবেন সালমারাও। কিন্তু নিরাপত্তার পূর্ণ নিশ্চয়তা কি কেউ দিতে পারবেন নারী ক্রিকেটারদের?
২৩ সেপ্টেম্বর, ২০১৫/এমটিনিউজ২৪/এস.এ.সুমন/একে