স্পোর্টস ডেস্ক : জুলাই গণঅভ্যুত্থানের সময় নীরবতার জন্য ব্যাপক সমালোচিত হয়েছিলেন সাকিব আল হাসান। অভ্যুত্থানের আগে থেকেই বিদেশে অবস্থান করা সাকিব আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর দেশে একপ্রকার ব্রাত্য হয়ে পড়েন। গেল বছরের অক্টোবরে দেশের মাটিতে ক্যারিয়ারের শেষ টেস্ট খেলতে চেয়েছিলেন। পরে অবশ্য ছাত্র-জনতার প্রতিবাদ এবং ক্রীড়া মন্ত্রণালয়ের পরামর্শে আর দেশে ফেরা হয়নি তার।
চব্বিশের অক্টোবরে দেশের মাটিতে বিদায়ী টেস্ট খেলতে চেয়ে নিজের ভেরিফায়েড ফেসবুক পেজে একটি স্ট্যাটাস দিয়েছিলেন সাকিব। সেখানে জুলাই-আগস্টের অভ্যুত্থানে নিজের নীরব ভূমিকার জন্য ক্ষমা চেয়েছিলেন এই অলরাউন্ডার।
লিখেছিলেন, ‘আমি শ্রদ্ধাভরে স্মরণ করছি সে সকল আত্মত্যাগকারী ছাত্রদের, যারা বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নেতৃত্বে ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে শহীদ হয়েছেন এবং আহত হয়েছেন। তাদের প্রতি এবং তাদের পরিবারের প্রতি আমার অন্তরের অন্তস্তল থেকে শ্রদ্ধা এবং সমবেদনা। যদিও স্বজন হারা একটি পরিবারের ত্যাগকে কোন কিছুর বিনিময়ে পূরণ করা সম্ভব না। সন্তান হারানো কিংবা ভাই হারানোর বেদনা কোন কিছুতেই পূরণযোগ্য নয়।’
‘এই সংকটকালীন সময়টাতে আমার সরব উপস্থিতি না থাকায় আপনারা যারা ব্যথিত হয়েছেন বা কষ্ট পেয়েছেন তাদের অনুভূতির জায়গাটার প্রতি আমার শ্রদ্ধা এবং এজন্য আমি আন্তরিকভাবে দুঃখিত। আপনাদের জায়গায় আমি থাকলে হয়তো এভাবে মনঃক্ষুণ্ন হতাম’-যোগ করেন তিনি।
তবে সেই পোস্টের বছর না পেরোতেই যেন ১৮০ ডিগ্রি ঘুরে গেলেন সাকিব। যে অভ্যুত্থানে ছাত্র-জনতার আত্মত্যাগ তিনি শ্রদ্ধাভরে স্মরণ করেছিলেন–সেই ছাত্র-জনতার ওপর যে সরকার গুলি চালিয়েছে সেই সরকারের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে তিনি গতকাল রোববার (২৮ সেপ্টেম্বর) জন্মদিনের শুভেচ্ছা জানিয়েছেন।
সাকিবের এমন দ্বিচারিতার ফলে ক্ষুব্ধ হয়েছেন নেটিজেনরা। এমনকি জুলাই আন্দোলনের ছাত্রনেতারাও তাকে একহাত নিয়েছেন। এর মধ্যে জুলাই আন্দোলনের অন্যতম সক্রিয় সংগঠক ও বর্তমান ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ (ডাকসু) সহ-সভাপতি (ভিপি) আবু সাদিক কায়েম। সামাজিক মাধ্যমকে দেওয়া এক পোস্টে তিনি লিখেছেন, ফ্যাসিস্ট হাসিনা ও তার দোসরদের একমাত্র পরিচয় - খুনি ও গণহত্যাকারী। জুলাইয়ের ঘাতকদের আর কোনো পরিচয় হতে পারে না।
তিনি আরও লিখেছেন, ক্রিকেটার সাকিব এবং রাজনীতিবিদ সাকিব আলাদা- এই বয়ান প্রতিষ্ঠার চেষ্টা যারা করেছিলেন, তাদের উদ্দেশ্য জাতির কাছে স্পষ্ট। একইভাবে বিভিন্ন পেশার গণহত্যাকারীদেরকে তথাকথিত বুদ্ধিজীবী, সাংবাদিক, পেশাজীবি, রাজনীতিবিদ, কূটনৈতিক নানা পরিচয় দিয়ে নরমালাইজ এবং পুনর্বাসনের চেষ্টা করা হয়েছে।
ডাকসুর এই ভিপি লিখেছেন, আমরা স্পষ্ট ভাষায় বলতে চাই, দীর্ঘ ফ্যাসিবাদী আমলে সর্বস্তরে জেঁকে বসা ফ্যাসিস্ট, ফ্যাসিস্টের দোসর এবং ফ্যাসিবাদী কাঠামো ভেঙে চুরমার করা পর্যন্ত জুলাই প্রজন্ম ক্ষান্ত হবে না।
এদিকে জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) মুখ্য সমন্বয়ক (উত্তরাঞ্চল) সাকিবের কড়া সমালোচনা করে লিখেছেন, ‘টাকার কাছে নিজেকে বেঁচে দেওয়া তোর মতো লোভী, শুয়োর রক্তে কেনা বাংলাদেশের জার্সি বাংলাদেশের মাটিতে আর কোনোদিন গায়ে দিতে পারবে না।’