শুক্রবার, ২৫ মার্চ, ২০১৬, ০৩:৩১:৪৮

হেরেও হৃদয় জিতেছে বাংলাদেশ : কপিল দেব

হেরেও হৃদয় জিতেছে বাংলাদেশ : কপিল দেব

কপিল দেব : দর্শকেরা রীতিমতো দম বন্ধ করে বসে ছিল। শেষ পর্যন্ত ভারতের ১ রানের জয়ে স্পিনাররা দুর্দান্ত ছিল। বিশেষ করে রবিচন্দ্রন অশ্বিন। এর চেয়ে ভালো চতুর্থ ওভার বোধ হয় সে করতে পারত না। ব্যাটসম্যানদের নিজের লাইন-লেংথ দিয়ে যে যেভাবে বিভ্রান্ত করেছে, সেটাও দেখিয়েছে দলের জন্য সে কত বড় এক সম্পদ।

বাংলাদেশের সাহসী চেষ্টায় অভিজ্ঞতার অভাবটা ধরা পড়েছে। এম এস ধোনিকে পিঠ চাপড়ে দিতে ইচ্ছে করছে, পরিস্থিতিটা কী অসাধারণভাবেই না সে সামলেছে। স্পিনারদের ব্যবহারে সে ছিল দারুণ কুশলী। দুই তরুণ জসপ্রীত বুমরা ও হার্দিক পান্ডিয়াকেও শেষ দিকে দারুণভাবে কাজে লাগিয়েছে! রবীন্দ্র জাদেজার ফিল্ডিংয়ের কথাই বা ভোলা যায় কীভাবে। আর শেষটাই বা কেমন হলো! চিতার ক্ষিপ্রতায় দৌড়ে এসে স্টাম্প ভেঙে এনে দিল বিস্ময়কর এক জয়। যা বাংলাদেশকে তাড়িয়ে ফিরবে বহু বহুদিন।

মাশরাফি বিন মুর্তজার দলের জন্য এর চেয়ে হৃদয়ভাঙা আর কিছু হতে পারত না। তবে এ জন্য কাউকেই তাদের দোষ দেওয়ার নেই। যখন ধীরেসুস্থে ব্যাট করলেই জয় এসে যায়, তারা খেলল উচ্চাভিলাষী শট। সামনের এমন পরিস্থিতিতে ভালো করার জন্য এটা শিক্ষা হয়ে থাকল তাদের কাছে। বুমরা ও পান্ডিয়ার পারফরম্যান্স থেকে ভারতের ক্রিকেট অনেক কিছুই পেতে পারে। ধোনির দৃঢ়প্রতিজ্ঞ দল দুজন উদীয়মান তারাকে এদিন পেয়ে গেল।

পুরো ম্যাচেই স্নায়ুচাপ তাড়া করে ফিরেছে ভারতকে। টস হেরে তারা এমন একটা পিচে ব্যাট করতে নামল, বিস্ময়করভাবে যেটি ছিল একটু মন্থর। ওপেনাররা যেমন চেয়েছিল, বল ঠিক সেভাবে ব্যাটে আসছিল না। তবে রোহিত শর্মা ও শিখর ধাওয়ানের জন্য নতুন কিছু করে দেখানোটা ভীষণ কঠিনও ছিল না। ভারতের ব্যাটিং লাইনআপ তো শক্তিশালী; হয়তো ব্যাটসম্যানরা উইকেটের সঙ্গে মানিয়ে নেওয়ার জন্য একটু বেশি সময় নিয়ে ফেলেছিল।

ছোট বাউন্ডারিও ব্যাটসম্যানদের জন্য খুব লোভনীয় ছিল। আফসোস, ভারতের ওপেনাররা সেটা টের পেয়েছে ষষ্ঠ ওভারে এসে। রোহিত ও শিখরের মুস্তাফিজকে মারা দুটি ছক্কার কৌশলটা আগে নেওয়া উচিত ছিল। কারণ ভারতের স্কোরবোর্ডেও চোখ রেখে খেলার দরকার ছিল, কেননা পরের দিকে রানরেটটা যে বড় হয়ে উঠতে পারে।

আগের ম্যাচগুলোয় বাংলাদেশের ফিল্ডিং নিয়ে প্রশ্ন ছিল, কিন্তু কাল তাদের কৌশল নিয়ে কোনো প্রশ্ন নেই। প্রথম ৬ ওভারে পাঁচজন বোলারকে দিয়ে বল করিয়েছে বাংলাদেশ। এটা ছিল দারুণ একটা চাল। চাপটা তাই সব সময় প্রতিপক্ষের ব্যাটসম্যানদের ওপর ছিল। পাওয়ার প্লেতে তাই সুবিধা নেওয়া যায়নি। শেষ পর্যন্ত বাংলাদেশের বোলাররা ভারতকে চেপে ধরেছিল, তাতেও অবাক হওয়ার কিছু নেই।

দুটি আউটই ভারতকে বেশি চাপে ফেলেছে, তার মধ্যে বিরাট কোহলির কথা তো বলতেই হবে। সাকিব আল হাসানের মতো ধ্রুপদি বোলারের সঙ্গে তার দ্বৈরথটাও উপভোগ করেছি। সাকিব এই সময়ের স্পিনারদের মধ্যে সেরাদের একজন। ওর মতো নিয়ন্ত্রণও খুব কম বোলারেরই আছে, ক্রিজের প্রতিটি ইঞ্চি সে কাজে লাগিয়েছে, এটাই তাকে অসাধারণ এক বোলারে পরিণত করেছে।

পান্ডিয়াকে ওপরের দিকে উঠিয়ে নিয়ে আসাটা ভালো পরিকল্পনা ছিল, কিন্তু তার পক্ষে গতিটা ধরে রাখা সম্ভব হয়নি। এ ধরনের উইকেটে সুরেশ রায়নার ওপর অনেক আশা থাকে, কিন্তু সে প্রত্যাশা পূরণ করতে পারেনি।

বাংলাদেশের বোলারদের আবারও পুরো নম্বর দেব ধোনি ও যুবরাজের বিপক্ষে ওদের সাফল্য দেখে। ফিল্ডিং অনুযায়ীই তারা বোলিং করেছে এবং এটাই ছিল বাংলাদেশের সবচেয়ে উজ্জ্বল দিক। পরিকল্পনা অনুযায়ী সব সময় সব কাজ করা যায় না, কিন্তু বাংলাদেশ ছিল ব্যতিক্রম। শেষ পর্যন্ত ম্যাচ জিততে না পারলেও অনেকের হৃদয় তারা এই রাতে জিতে নিয়েছে, যদিও খাদের কিনারা থেকে রোমাঞ্চকর প্রত্যাবর্তন ঘটিয়েছে ভারত। (পিচ সলিউশন) সূত্র : প্রথম আলো

লেখক : কিংবদন্তি ক্রিকেটার ও সাবেক বিশ্বকাপ জয়ী ভারতীয় অধিনায়ক
২৪ মার্চ, ২০১৬/এমটি নিউজ২৪/এসবি/এসএস

Follow করুন এমটিনিউজ২৪ গুগল নিউজ, টুইটার , ফেসবুক এবং সাবস্ক্রাইব করুন এমটিনিউজ২৪ ইউটিউব চ্যানেলে