স্পোর্টস ডেস্ক : দশ বছর আগেও তিনি ছিলেন মাওবাদী গেরিলাবাহিনীর সক্রিয় সদস্য। কিন্তু এ মুহূর্তে দেশের সফলতম মহিলা অ্যাথলিট হিসেবে প্রতিষ্ঠিত হওয়ার পথে মীরা রাই।
টাইমস অব ইন্ডিয়ার এক প্রতিবেদনে এ খবর জানা গেছে।
শৈশব কেটেছে তার চরম দারিদ্রের মধ্যে। একসময় সেই অসহ্য জ্বালা মেটাতে বাড়ি থেকে পালিয়ে গিয়েছিলেন কিশোরী মীরা। পরিবারের অজান্তে নাম লিখিয়েছিলেন নেপালের মাওবাদী গেরিলাবাহিনীতে।
পূর্ব নেপালের প্রত্যন্ত গ্রাম সানু দুমা ৯। এখানেই বাবা, মা এবং ভাই-বোনদের সঙ্গে ছেলেবেলা কেটেছে মীরার। লিঙ্গবৈষম্যের শিকার নেপালের রীতি মেনে পরিবারের ছেলেরা যখন স্কুলে পড়াশোনা করার সুযোগ পেয়েছিল, তার কাঁধে চাপিয়ে দেয়া হয়েছিল গৃহস্থালির কাজের বোঝা।
বাবা-মায়ের ইচ্ছে ছিল, এরপর বিয়ে করে সন্তান প্রসব ও মানুষ করেই জীবন কেটে যাবে, কিন্তু স্বভাব-দস্যি মীরার মগজে ভিন্ন স্বপ্ন ভিড় করত। তীব্র অর্থকষ্ট ও অন্ধকার ভবিষ্যতের চিন্তায় জেরবার হয়ে বাড়ি থেকে পালানোর সিদ্ধান্ত নেন তিনি।
ঘরের কোণ থেকে বেরিয়ে এসে মাওবাদী গেরিলাদের সঙ্গে পরিচয় হয় মীরার। ২০০৩ সালে তাদের দলেই অন্তর্ভুক্ত হন সাহসী কিশোরী। সেই সময় নেপালের মাওবাদী যোদ্ধারা সেনাবাহিনীর হাত থেকে বাঁচতে পালিয়ে বেড়াচ্ছেন। পদে পদে মৃত্যুভয়, ধরা পড়লে নির্মম অত্যাচার, পণবন্দিদের ঠাণ্ডা মাথায় হত্যার মতো দৃশ্য দেখে ধীরে ধীরে মানসিকভাবে অত্যন্ত মজবুত হয়ে ওঠেন তিনি। তবে মাওবাদী গেরিলাদের মধ্যে প্রচলিত খেলাধুলার প্রতি ক্রমে আকৃষ্ট হয়ে পড়েন মীরা। সেখানেই শুরু হয় দৌড়ের প্রথম ধাপ।
২০০৬ সালে যুদ্ধ শেষ হয়। কাঠমাণ্ডুর তখতে বসেন একদা মাওবাদী চরমপন্থী নেতা প্রচণ্ড। সরকারি পুনর্বাসন প্রকল্পে যোগ দেয়ার পর দৌড়ের নেশা পেয়ে বসে। এই সময় ২১ কিমি রেসে প্রথম নাম দেন মীরা। কিন্তু খালি পেটে সেই দৌড় সেষ করতে পারেননি। ফিনিশিং লাইনের ৪০০ মিটার আগেই জ্ঞান হারিয়ে মাটিতে লুটিয়ে পড়েন তিনি।
এবার তার সাহায্যে এগিয়ে আসেন কাঠমাণ্ডুর এক ক্যারাটে প্রশিক্ষক। ফোনের মাধ্যমে তার থেকে তালিম এবং সামান্য অর্থ সাহায্য পেতে শুরু করেন মীরা। রাজধানীর নোংরা রিং রোড হয়ে ওঠে তাঁর প্রশিক্ষণ ট্র্যাক। ঠিক এই সময় দূরপাল্লার প্রাকৃতিক ট্র্যাকে দৌড়ানোর নেশা পেয়ে বসে।
২০১৪ সালের মার্চ মাসে কাঠমাণ্ডু উপত্যকা জুড়ে ৫০ কিমি রেসে যোগ দেন মীরা। এবারও তার পেটে খাদ্য ছিল না, পকেটে ছিল না অর্থ। সহ-দৌড়বীরের থেকে ৫০ টাকা ধার করে নুডলস ও কমলালেবুর রসে পেট ভরিয়ে শেষ পর্যন্ত রেস জেতেন তিনিই।
সেই সাফল্যই তার ভাগ্য পরিবর্তন করে দেয়। ইভেন্ট অর্গানাইজার রিচার্ড বুলের সাহায্যে একের পর এক রেস জিতে রেকর্ড গড়তে শুরু করেন মীরা রাই। বিদেশের মাটিতেও অব্যাহত থাকে তার ফর্ম। চলতি বছরে বিশ্বের অন্যতম কঠিন ৮২ কিমির মঁ ব্লাঁ স্কাইরানার ওয়ার্ল্ড সিরিজ রেসে অংশগ্রহণ করে তৃতীয় স্থান অধিকার করেছেন মীরা রাই।
বিশ্বমানের ইভেন্ট জেতার পর এখন মীরার চৌকাঠে স্পনসরদের ভিড় লেগেই রয়েছে। তবে সাফল্য তার মাথা ঘুরিয়ে দিতে পারেনি। নেপালের সর্বকালের সেরা ক্রীড়াবিদ হওয়ার লক্ষ্যে নিরন্তর পরিশ্রমে মগ্ন বছর ছাব্বিশের এই দৌড়বীর। তার ভবিষ্যত্ উজ্জ্বলতর হোক, এমনই কাম্য।
২৯ মার্চ,২০১৬/এমটিনিউজ২৪/এমআর/এসএম