বুধবার, ৩০ মার্চ, ২০১৬, ০২:৫৫:৫৪

মুসলিম ইস্যুতে চুপ কেন শান্তিতে নোবেল জয়ী সু চি

মুসলিম ইস্যুতে চুপ কেন শান্তিতে নোবেল জয়ী সু চি

পিটার পেহাম : মিয়ানমারের বিপুলসংখ্যক বৌদ্ধ মুসলিমের বিরুদ্ধে অনিষ্ট করে থাকেন। কিন্তু শান্তিতে নোবেল পুরস্কার বিজয়ী অং সান সু চি? সম্প্রতি বিবিসির টুডে প্রোগ্রামে তিনি মিশাল হোসেনকে একটি সাক্ষাৎকার দেন।

তাতে তাকে ক্ষুব্ধ হয়ে বলতে শোনা যায় ‘কেউ আমাকে বলেনি যে, একজন মুসলিম আমার সাক্ষাৎকার নিচ্ছে’। এ বিষয়টি আমাকে বলেছেন আমার এক নির্ভরযোগ্য সূত্র। আমার নতুন বই ‘দ্য লেডি অ্যান্ড দ্য জেনারেলস’-এ ওই বক্তব্যটি উদ্ধৃত করেছি। সু চির এমন বক্তব্য তার দৃষ্টিভঙ্গি সম্পর্কে আমাদের কী বলে?

এটা সত্য যে, মিয়ানমারের পশ্চিমাঞ্চলের নিষ্পেষিত কয়েক লাখ মুসলিম, যারা রোহিঙ্গা নামে পরিচিত, তাদের সমর্থন নিয়ে কখনও স্পষ্ট কোনো বিবৃতি দেননি তিনি। ওইসব রোহিঙ্গা রাষ্ট্রহীন, গৃহহীন। এমনকি তারা রাষ্ট্রের অধিকার বঞ্চিত। তিনি আরাকান রাজ্যের সহিংসতা নিয়ে বিলাপ করেছেন। কিন্তু হিউম্যান রাইটস ওয়াচের মতো সংগঠনের দেয়া ফয়সালা অনুমোদন দিতে অস্বীকৃতি জানিয়েছেন। আরাকানে মুসলিমদের ওপর নিষ্পেষণের জন্য বৌদ্ধদের দায়ী করেছে হিউম্যান রাইটস ওয়াচ।

এসব ঘটে যাওয়া ঘটনায় তিনি নিন্দা পর্যন্ত করেননি, এতে পশ্চিমা অনেকেই তার ব্যাপক সমালোচনা করেন। যেহেতু তার রয়েছে ব্যাপক জনসমর্থন, তাই অনেকেই মনে করতে পারেন তিনি যদি যথাসময়ে কথা বলতেন তাহলে এই নির্যাতনের আকস্মিক ইতি টানতে পারতেন।

সু চির জীবনী ‘দ্য লেডি অ্যান্ড দ্য পিকক’-এ তার প্রথম বয়ফ্রেন্ডের প্রসঙ্গে লিখেছি। তখন সু চি অক্সফোর্ডে পড়াশোনা করতেন। সেখানে এক পাকিস্তানি ছাত্র ছিলেন তার প্রথম সিরিয়াস বয়ফ্রেন্ড। পরে ওই ব্যক্তি পাকিস্তানের একজন শীর্ষস্থানীয় কূটনীতিক হয়েছেন। বহু সংস্কৃতির বৃটেনে কোনো শত্রুতা ছাড়া ২০টি বছর অতিবাহিত করেছেন সু চি। তাকে যারা মিয়ানমারের গণতন্ত্রের আন্দোলনে উদ্বুদ্ধ করেন তাদের মধ্যে মূল একজন ব্যক্তি হলেন মুয়াং থা কা। তিনি একজন মুসলিম সাংবাদিক, লেখক। পরে জেলে তার মৃত্যু হয়েছে।

তার তো রয়েছে সহনশীলতা, উদারতা। তাহলে তিনি কেন ওই সাক্ষাৎকারের পর সাংবাদিক মিশাল হোসেনের ওপর ওই ক্ষোভ ঝারলেন? তবে কি এর কারণ এই যে, তার চিফ অব স্টাফ ও একটানা প্রচারণা সহযোগী ড. তিন মার অং আরাকানের বৌদ্ধ সম্প্রদায়ের বলে? তার মাঝেও কি তবে গোঁড়া মত আছে, যা সু চিকে আক্রান্ত করতে পারে?

এটা থাকা সম্ভব। তবে এ ক্ষেত্রে একটি সাধারণ ব্যাখ্যা থাকতে পারে। তিনি মিয়ানমারে ক্ষমতায় যাওয়ার জন্য ২৮ বছর ধরে সংগ্রাম চালিয়ে যাচ্ছিলেন। দেশে তার রয়েছে ব্যাপক জনপ্রিয়তা, যেখানে শতকরা ৯০ ভাগেরও বেশি মানুষ তার মতো বৌদ্ধ। কিন্তু সেনাবাহিনীর ভেতরে তার যেসব শত্রু রয়েছে তারা কখনও তার নামকে ম্লান করে দেয়ার চেষ্টা থেকে বিরত হয়নি।

এ ক্ষেত্রে তাদের পছন্দের পদ্ধতি হলো, সু চি খাঁটি বার্মিজ নন। কারণ, তিনি বিয়ে করেছেন একজন ইংলিশকে। অনেক বছর ধরে তিনি বসবাস করেছেন পশ্চিমা দেশে। জন্ম দিয়েছেন দুটি সন্তান, যারা বিদেশি নাগরিক। ওইসব শত্রু তাকে বিদেশি হিসেবে দেখিয়ে মুসলিম সংখ্যালঘুদের মতো তাকে দেখাতে চেষ্টা করেছে। তাদের কাছে মুসলিমরা হলো মিয়ানমারের বৌদ্ধদের কাছে এলিয়েন বা ভিনগ্রহের আগন্তুক। তাদের মিয়ানমারে বসবাসের কোনো অধিকার নাই- এমনটাই বোঝানোর চেষ্টা হয়েছে।

আমার বিশ্লেষণ হলো, সু চির মধ্যে আতঙ্ক আছে, যদি তিনি রোহিঙ্গাদের পক্ষে কথা বলেন, তার বিরুদ্ধে ওইসব কথা বলা সহজ হবে তার শত্রুদের জন্য। এতে তার ক্ষমতায় যাওয়ার সুযোগ নষ্ট হবে। তাই তিনি গত ৫টি বছর অস্বস্তিতে চুপচাপ রয়েছেন। এমন একটি ভাবমূর্তিতে তিনি আর থাকতে পারেন না। মানবাধিকার ও তার অবস্থান নিয়ে সাংবাদিকের প্রশ্নে তিনি উষ্মা প্রকাশ করেছেন। এখন তিনি সংখ্যাগরিষ্ঠ পার্লামেন্টে ক্ষমতায়। এখন তিনি স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলতেই পারেন এবং আমাদের বলতে পারেন আসলেই তিনি কী ভাবছেন। -এমজমিন

(লন্ডনের দি ইনডিপেনডেন্টে প্রকাশিত লেখার অনুবাদ)

৩০ মার্চ, ২০১৬/এমটি নিউজ২৪/এসবি/এসএস

Follow করুন এমটিনিউজ২৪ গুগল নিউজ, টুইটার , ফেসবুক এবং সাবস্ক্রাইব করুন এমটিনিউজ২৪ ইউটিউব চ্যানেলে