শুক্রবার, ২০ মে, ২০১৬, ১০:৫৯:২২

‘মুস্তাফিজ’র খোঁজে সাঁতার

‘মুস্তাফিজ’র খোঁজে সাঁতার

স্পোর্টস ডেস্ক:  বাংলাদেশ নদীমাতৃক দেশ হওয়াতে এ দেশে অপেশাদার সাঁতারুর অভাব নেই বললেই চলে। আর নৌবাহিনীর কর্মপরিধি যেহেতু জলসীমাজুড়ে, তাই সাঁতার ফেডারেশনের সভাপতিও এ বাহিনীর হবেন—এমনটাই চলে এসেছে। তবে অ্যাডমিরাল নিজামউদ্দিন অনেকটাই যে ব্যতিক্রম, উদাহরণ দিয়েই বলেছেন যুব ও ক্রীড়া প্রতিমন্ত্রী ড. বীরেন শিকদার, ‘চট্টগ্রাম বন্দরের দায়িত্বে থাকার সময় তাঁর (নৌবাহিনীপ্রধান) সঙ্গে আমার পরিচয়। সেই থেকে জানি তিনি অত্যন্ত ডাইনামিক একজন মানুষ। আশা করছি দেশের সাঁতারও তাঁর হাত ধরে এগিয়ে যাবে।’

এগিয়ে যাওয়ার প্রথম পদক্ষেপ গতকাল ঢাকা অঞ্চলের ‘ট্যালেন্ট হান্ট’দিয়ে যাত্রা শুরু হয়। দেশের ৬৪ জেলা আর ৪৮৯ উপজেলা থেকে আনুমানিক ২৫ হাজার সাঁতারুর মধ্য থেকে সেরা এক হাজার সাঁতারুকে নিয়ে চূড়ান্ত পর্ব আয়োজনের পরিকল্পনা করেছে বাংলাদেশ সাঁতার ফেডারেশন। ব্যাপ্তি চিন্তা করলে এ এক মহাযজ্ঞই। এ তো আর শুধু ঢোল পিটিয়ে প্রতিযোগী সংগ্রহ করা নয়, চূড়ান্তভাবে নির্বাচিতদের দীর্ঘমেয়াদে প্রশিক্ষণ, সার্টিফিকেট প্রদান, প্রাইজমানি মিলিয়ে ৬৫ লাখ টাকার বিনিয়োগের ঝক্কিও নিতে হয়েছে ফেডারেশনকে। যারা ক্রীড়াঙ্গনের খোঁজখবর রাখে, তারাও জানে ছোট ফেডারেশনগুলোর একটি মাত্র কর্মসূচির জন্য এ পরিমাণ অর্থ জোগাড় কতটা কষ্টসাধ্য, বাস্তবে অসাধ্যই। সব শেষ সাফ গেমসে সাঁতারের সাফল্যই এ কর্মসূচির অনুপ্রেরণা, আর চালিকাশক্তি ফেডারেশনের ঊর্ধ্বতনদের সদিচ্ছা।

তো, গতকাল দুপুরে ঢাকা অঞ্চলের ‘ট্যালেন্ট হান্ট’ দিয়েই আনুষ্ঠানিকভাবে শুরু হয়েছে এ কর্মসূচি। উন্মুক্ত প্রতিভা অন্বেষণে যা হয় আর কি, অনেকেই সাঁতারের ‘এ-বি-সি-ডি’ও জানে না। তাই ৫০ মিটার পুল পেরোতেই পারল না। একজন ফ্রি-স্টাইল দিচ্ছে তো অন্যজন ব্রেস্ট স্ট্রোক। ছেলেমেয়ে আলাদা করা গেলেও বয়সভেদের কোনো ঠিক-ঠিকানা নেই। একে অব্যবস্থা বলার উপায় নেই। উন্মুক্ত যখন, তখন ক্রিকেটের পেসার হান্টেও নাম লেখান অদ্ভুতুড়ে সব বোলার। উন্মুক্ত সাঁতারের সুযোগটা কাজে লাগাতে দেখা গেছে পঞ্চাশোর্ধ্ব এক ‘যুবক’কেও, যিনি আগ্রহীদের নাম রেজিস্ট্রেশনের কাজে ব্যস্ত। তাঁর কাছ থেকে জানা গেল, ‘ঢাকা থেকে ৬০০ জন এরই মধ্যে রেজিস্ট্রেশন করেছে। এখনো চলছে।’ কিন্তু বাছাই যে শেষ হয়ে গেল! সে সমাধানও করে রেখেছে ফেডারেশন। যারা উদ্বোধনের দিন সাঁতরাতে পারেনি, তাদের বিচলিত হওয়ার কিছু নেই। ওয়েবসাইটের মাধ্যমে দিনক্ষণ জানানো হবে তাদের।

এ শুরুর শেষ হবে সেপ্টেম্বরে। এরপর অক্টোবরে চূড়ান্ত বাছাইকৃতরা যাঁর হাতে উঠে আসবে, সেই পার্ক তে গুন পুলের চারধারে পরমানন্দে পায়চারি করছেন। কাল যারা সাঁতরেছে, তাদের কাউকেই মনে ধরেনি কোরিয়ান এ সাঁতার কোচের। তবে তিনি অধীর অপেক্ষায় সারা দেশে ট্যালেন্ট সার্চের শেষ দিনটির জন্য, ‘কয়েকজনকে তো পাবই।’ প্রতিভা অন্বেষণের কার্যকারিতা এখানেই। প্রথম বছরে সারা দেশে খোঁজাখুঁজি করে একজনও ‘মুস্তাফিজ’ মানের সাঁতারু না-ও পাওয়া যেতে পারে। তবু কর্মসূচিটা ফি-বছর করে যেতে হয়। তাতে একদিন না একদিন পাওয়া যাবে একজন ‘মুস্তাফিজ’ সাঁতারুকে, যে সাফের বৃত্ত ভেঙে বিশ্বে পরিচিত করবে বাংলাদেশকে, এ প্রত্যাশা ফেডারেশনের সহসভাপতি মোল্লা মোহাম্মদ আবু কাওসারের। অনুষ্ঠানের প্রধান অতিথি জনপ্রশাসনমন্ত্রী সৈয়দ আশরাফুল ইসলাম সে প্রত্যাশার কথাই জানিয়েছেন, ‘একদিন অলিম্পিক থেকেও সোনা জিতে ফিরবে বাংলাদেশের সাঁতারু।’

স্বপ্নের পরিধিটা তাঁর আকাশছোঁয়া। ‘সেরা সাঁতারুর খোঁজে বাংলাদেশ’ কর্মসূচিটাও তো কম উচ্চাভিলাষী নয়! ফেডারেশন সভাপতির এ উদ্যোগে এগিয়ে এসেছে বেশ কয়েকটি ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান, যদিও লোগো কিংবা ব্যানার-ফেস্টুনের কোথাও তাদের চিহ্নটি নেই। কিন্তু অ্যাডমিরাল নিজামউদ্দিন আহমেদ তাঁর বক্তব্যে নামগুলো স্মরণ করেছেন কৃতজ্ঞচিত্তে। সাঁতারের উন্নতিকল্পে অংশীদার হতে পেরেই যেন তাঁরা খুশি। পৃষ্ঠপোষকতার এ এক অনন্য নজিরও বটে।

ওহ! সাঁতারের মুস্তাফিজকে চেনানো হয়নি। তিনি ক্রিকেটের মুস্তাফিজুর রহমান, যাঁর প্রতিভায় মুগ্ধ সারা বিশ্ব।-কালের কন্ঠ
২০ মে২০১৬/এমটিনিউজ২৪/এআর

Follow করুন এমটিনিউজ২৪ গুগল নিউজ, টুইটার , ফেসবুক এবং সাবস্ক্রাইব করুন এমটিনিউজ২৪ ইউটিউব চ্যানেলে