স্পোর্টস ডেস্ক : শাহরিয়ার শামিমের বয়স তখন মাত্র নয় মাস। ভুল চিকিৎসায় হারাতে হলো বাঁ পা-টি। এক পা দিয়ে কীভাবে হাঁটবেন দীর্ঘ পথ? সব সংশয়, অনিশ্চয়তাকে দূরে ঠেলে জন্মগত প্রতিভা, দৃঢ় মানসিকতা আর কঠোর পরিশ্রমে এগিয়ে যেতে থাকলেন।
ভালো খেলার পরও কেবল শারীরিক সীমাবদ্ধতার কারণে বিকেএসপির বাছাইয়ে শেষ পর্যায়ে গিয়ে বারবার বাদ পড়েছেন। সেই বিকেএসপিতেই গতকাল আন্তর্জাতিক শারীরিক প্রতিবন্ধী ক্রিকেটে আফগানিস্তানের বিপক্ষে গড়লেন অনন্য রেকর্ড। টুর্নামেন্টে বাংলাদেশের হয়ে প্রথম ফিফটি এল শাহরিয়ার ব্যাট থেকেই।
গত রাতে যখন কথা হলো, পায়ের ব্যথাটা খুব বেড়েছে। তবুও স্বপ্ন পূরণের গল্পটা বলতে বেরিয়ে এল চাপা উচ্ছ্বাস, ‘সব সময় ভেবেছি, কেন পারব না? অনেকবার গোপালগঞ্জে লিগ খেলেছি। দুইবার বিকেএসপিতে সুযোগ পেয়েছি। কিন্তু নেটে নিলেই বাদ পড়েছি পায়ের কারণে। সেই বিকেএসপিতে অবশেষে এলাম খেলতে।
সেখানেই ফিফটি পেলাম। এক দিক দিয়ে হলেও স্বপ্ন পূরণ হলো।’ বাংলাদেশের ইনিংসে মোট বাউন্ডারির সংখ্যা ১৩টি। এর সাতটিই শাহরিয়ারের ব্যাট থেকে। ৪৭ বলে করেছেন ৫৬ রান। রান মানে যদি দৌড়ই হয়, কে বলেছে এর জন্য পা লাগে? একটি সবল পা নিয়েই এত রান শাহরিয়ারের নামের পাশে। ৩২ রানই নিয়েছেন চার-ছক্কায়। চারের মার ছিল ৫টি, ছক্কা ২টি।
পায়ে সমস্যা থাকার পরও শাহরিয়ার লাল-সবুজ জার্সিতে এগিয়ে চলেছেন সামনে। ছবি: শামসুল হকগোপালগঞ্জের ছেলে শাহরিয়ার খেলছেন উইকেটরক্ষক-ব্যাটসম্যান হিসেবে। বাঁ পা-টি কৃত্রিম। শৈশব থেকেই দুরন্ত শাহরিয়ার প্রতিবন্ধকতাকে দেখিয়েছেন বুড়ো আঙুল। শারীরিক সীমাবদ্ধতা নিয়েও ভালো খেলেন বলে লোকে ঈর্ষাও করেছে। পায়ের সমস্যা থাকার পরও জেলা পর্যায়ে উচ্চ লাফে সব সময়ই ভালো ফল করেছেন। বেইজিংয়ে প্যারালিম্পিকেও প্রতিনিধিত্ব করেছেন লাল-সবুজ পতাকার।
শারীরিক প্রতিবন্ধকতা থাকলেও নিজেকে কখনো অসহায় ভাবেননি। সব সময়ই অংশ নিতে চেয়েছেন সুস্থ-সবলদের সঙ্গে লড়াই করেই। কিন্তু সেই স্বপ্ন পূরণ হয়নি। সেই আক্ষেপ মুছে ফেলে সেই শাহরিয়ার এখন বাংলাদেশ দলের অন্যতম সেরা ব্যাটসম্যান।
বাংলাদেশ শারীরিক প্রতিবন্ধী ক্রিকেট দলের কোচ রাশেদ ইকবাল বললেন, ‘শাহরিয়ারের ব্যাটিং দেখে মনে হয় না ওর কোনো শারীরিক সীমাবদ্ধতা রয়েছে।
খুবই সাবলীল ব্যাটিং করে। পাওয়ার ক্রিকেট খেলার দারুণ সামর্থ্য রয়েছে ওর।’ পায়ের সমস্যাতেই খুঁজেছেন সমাধান। দৌড়ের বদলে চার-ছক্কাতেই বেশি ঝোঁক তাঁর। দলের প্রধান কোচ মাসুদ হাসান বললেন, ‘ওর মুভমেন্টে সীমাবদ্ধতা রয়েছে। ফুটওয়ার্ক কাজ করে না ঠিকমতো। এ কারণে সিঙ্গেলের চেয়ে স্ট্রোক খেলার ওপর জোর দিতে হয়। তবে বোলারদের নিজের দুর্বলতা বোঝার সুযোগ খুব একটা দেয় না।
অবশ্য এমন অর্জনে শাহারিয়ারের মনটা খারাপ। দারুণ এক ইনিংস খেললেন। কিন্তু দল জিততে পারল না। ৩ উইকেট হাতে রেখে পাঁচ বল বাকি থাকতেই লক্ষ্যে পৌঁছে যায় আফগানরা। শাহরিয়ার বললেন, ‘হারটা খুবই কষ্টদায়ক। এখান থেকে ফাইনালে যেতে পারলে অনেক ভালো হতো। বিসিবি হয়তো আমাদের আরও গুরুত্ব দিত।’
বাংলাদেশ ফাইনালে যদি না যেতেও পারে, শাহরিয়ার চেষ্টা মিথ্যে হয়ে যাবে না। এতটা দূর যিনি হাঁটতে পেরেছেন, নিশ্চয় তার জন্য রয়েছে আরও অর্জনের হাতছানি। শাহরিয়ারও চান আরও বহুদূরে যেতে, ‘হাঁটতে খুব কষ্ট হয়। আজ ম্যাচের পর ভীষণ দুর্বল হয়ে পড়েছি। মাত্র নয় মাস বয়সে পা-টা হারিয়ে এত দূর আসব, ভাবিনি। দোয়া করবেন, যেন আরও ভালো কিছু করতে পারি।-প্রথম আলো
৫ সেপ্টেম্বর ২০১৫/এমটিনিউজ২৪/হাবিব/এইচআর