বুধবার, ২৯ জুন, ২০১৬, ০৭:৩৩:১৩

সারা রাত কেঁদে কেঁদে চোখ ফুলিয়েছে মেসির ভক্তরা

সারা রাত কেঁদে কেঁদে চোখ ফুলিয়েছে মেসির ভক্তরা

স্পোর্টস ডেস্ক : সারা রাত কেঁদে কেঁদে চোখ ফুলেছে কারও, কারও। কারও চোখে আবার এক ফোঁটাও জল নেই!‌ শুধু শূন্যতা। রুক্ষ, শুষ্ক গ্রীষ্মের ফুটিফাটা জমির মতোই বলিরেখাগুলো ফুটে উঠেছে মুখে। শ্রান্ত, অবসন্ন একটা দিন, একটা রাত পেরিয়ে। ভাল নেই, একেবারেই ভাল নেই আর্জেন্টিনা। আর্জেন্টিনীয়রা।

কী করে থাকবে?‌ কী করে থাকবেন?‌ বড় আদরের, বড় ভালবাসার যে, সে বলেছে ‘‌আর নয়’‌। সারা বছর ক্লাবের হয়ে খেলতে ছেলেটা এমনিতেই দূরে থাকত। তবু মাটির টান অস্বীকার করেনি।‌ ওই টানেই তো ছেলেটা বিপক্ষের ফুটবলারের লাথি খেয়েছে, কখনও খেয়েছে কনুইয়ের গুঁতো। পায়ের চোট, কোমরের চোট সে সব উপেক্ষা করেও তো নেমেছে মাঠে। শুধু, শুধুই ওই মাটির টানে। দেশের টানে।

অথচ সেই, সেই ছেলে, সেই লিও মেসি যন্ত্রণায় আর অভিমানে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নিয়ে ফেলেছেন!‌ দেশের জার্সি গায়ে আর মাঠে নামবেন না। সিদ্ধান্তটা মানা তো দূর, বিশ্বাসই হচ্ছে না আর্জেন্টিনার সাধারণ সমর্থকদের। মেসি আর আর্জেন্টিনা— ২০০৫ থেকে এ তো সমার্থক। তা হলে সেই সমার্থক শব্দ অস্বীকার করবে কী করে মন?‌ করবে না, পারবে না। আর্জেন্টিনীয়রা বুঝছেন প্রতি মুহূর্তে। তাই আর্জেন্টিনীয়রা দাবি তুলছেন, ‘‌ফিরে এসো, ফিরে এসো মেসি’‌।

উনতিরিশের অভিমানীকে বোঝাতে, তাই এগিয়ে এসেছেন তিনিও। দিয়েগো মারাদোনা। তিনি নিজেও তো কোপা শুরুর আগে কিংবা চলাকালীন কম কড়া ভাষায় আক্রমণ করেননি। তবু আক্রমণের আড়ালে, স্নেহের ফল্গুধারা বইত। আর সেই ধারা প্রকাশ্যে চলে এল মেসি অভিমানী সিদ্ধান্ত নিতেই। ফুটবল রাজপুত্র বলেছেন, ‘‌জাতীয় দলে মেসিকে দরকার। কারণ, ওর ফুটবল জীবন এখনও ফুরিয়ে যায়নি। আরও অনেকটাই পথ বাকি রয়েছে। বিশ্বাস করি, বিশ্বচ্যাম্পিয়ন হওয়ার জন্য ফর্মে থাকতে থাকতেই ও রাশিয়া যাবে।’‌

এখানেই শেষ নয়, মারাদোনা আরও যোগ করেছেন, ‘‌মেসি যাতে দলকে আরও এগিয়ে নিয়ে যেতে পারে, তার জন্য আর্জেন্টিনা ফুটবল অ্যাসোসিয়েশনের উচিত ছিল, ওকে আরও বেশি করে সাহায্য করা। যারা বলছে, মেসির সরে যাওয়াই উচিত, তারা আসলে চাইছে, আর্জেন্টিনা ফুটবলে যে চূড়ান্ত ডামাডোল চলছে, সেটা আমাদের নজরে না আসুক। এটা ধামাচাপা দেওয়ার একটা কৌশল।’‌ ‘‌ফিরে এসো মেসি’‌, একই আকুতি আর্জেন্টিনার রাষ্ট্রপতি মরিসিও ম্যাক্রির গলায়ও।

ব্যক্তিগতভাবে মেসিকে অনুরোধ করেছেন, অবসরের সিদ্ধান্ত প্রত্যাহার করে নিতে। রাষ্ট্রপতি দফতরের এক মুখপাত্র সংবাদ মাধ্যমকে জানিয়েছেন,‘‌রাষ্ট্রপতি মেসির সঙ্গে নিজেই যোগাযোগ করেছিলেন। মেসিকে বলেছেন, জাতীয় দলের পারফরমেন্সে তিনি কতখানি গর্বিত। সেই সঙ্গে বলেছেন, সমালোচকদের কথায় কান দিও না। আর্জেন্টিনা দলের সঙ্গে থাকো।’‌ সোশ্যাল নেটওয়ার্কে গত চব্বিশ ঘণ্টায় আর্জেন্টিনার সমর্থকরাও বারবার দাবি জানিয়ে চলেছেন একই। ভালবাসায়, আবেগে প্রিয় তারকার অভিমান দূর করতেই হবে, এমনই যেন পণ নিয়েছেন। এর মাঝে মেসি–‌‌সহ পুরো আর্জেন্টিনা দল পৌঁছেছে বুয়েনস এয়ার্সে। তুমুল বৃষ্টিকে উপেক্ষা করে সমর্থকরা হাজির হয়েছিলেন।

সবার হাতেই ভিক্ষার ঝুলি, ‘‌মেসি, তুমি ছেড়ে যেও না।’‌ তাঁদের হাতে স্প্যানিশ ভাষায় লেখা পোস্টার, ‘‌ছেড়ে যেও না মেসি। আমার বান্ধবীর থেকেও তোমাকে বেশি ভালবাসি।’‌ কারও পোস্টারে লেখা ‘আমরা জানি, এ দেশ তোমার যোগ্য নয়। তবু দয়া করে চলে যেও না।’‌‌ বিমানবন্দরে হাজির সাংবাদিকরা চাইছিলেন মেসি বা তাঁর সতীর্থদের মুখ থেকে কিছু শুনতে। কিন্তু কেউই কোনও উত্তর দেননি। এমনকী কোচ মার্টিনোও এড়িয়ে যান সাংবাদিকদের।

রোজারিওতে মেসির ফুটবল জীবনের শুরুর দিকের কোচ আরনেস্তো ভেচিও ‌জানিয়েছেন, ‘‌ও আসলে সমালোচনায় জর্জরিত। বিধ্বস্ত। চাই না, ও দেশের হয়ে খেলা ছেড়ে দিক। তবে ওর জায়গায় নিজেকে যখন রাখছি, তখন এটা ভেবেই খারাপ লাগছে যে, দলে এগারোজন প্লেয়ার থাকা সত্ত্বেও, ত্রাতা হিসেবে খালি মেসিকেই দেখা হচ্ছে!‌ সব চাপ ওর ঘাড়েই চাপানো হচ্ছে।’‌

এত, এতদিন পরে মেসির মন, মেসির যন্ত্রণা, মেসির অভিমান বোঝার চেষ্টা করছেন সবাই। আরেকটু আগে যদি বুঝতেন!‌

২৯ জুন ২০১৬/এমটি নিউজ২৪/এসবি/এসএস

Follow করুন এমটিনিউজ২৪ গুগল নিউজ, টুইটার , ফেসবুক এবং সাবস্ক্রাইব করুন এমটিনিউজ২৪ ইউটিউব চ্যানেলে