বুধবার, ২৯ জুন, ২০১৬, ০৬:২৫:৪৮

এমন আবেগপ্রবণ জাতি আর কয়টা আছে!

এমন আবেগপ্রবণ জাতি আর কয়টা আছে!

স্পোর্টস ডেস্ক : কিছুদিন আগেও লিওনেল মেসির প্রতি আর্জেন্টাইনদের ছিল একরাশ অভিমান—কীসের সেরা খেলোয়াড় তুমি, দেশকে কিছু জেতাতে পার না? কীসের ব্যালন ডি’অর, কীসের বার্সেলোনার জার্সিতে সাফল্য, জাতীয় দলের আকাশি নীল জার্সিতে সফল না হলে আমাদের কাছে তোমার কোনো মূল্য নেই!

সেই মেসি আবারও ব্যর্থ! বিশ্বকাপ ফাইনালের পর গত বছরের কোপা আর এবারের কোপা। এবার তো ফাইনালে টাইব্রেকারই মিস করে বসলেন মেসি! মেসিকে তো আরও শাপ-শাপান্ত করার কথা আর্জেন্টাইনদের! কিন্তু কী আশ্চর্য, যাবতীয় অভিমান ভুলে সেই আর্জেন্টাইনরাই এখন নিঃশর্ত ভালোবাসায় ভরিয়ে দিচ্ছেন তাদের ফুটবল-বীরকে। কাঁদছে, আকুতি জানাচ্ছে, ‘প্লিজ মেসি, যেয়ো না। আমরা কত ভালোবাসি তোমাকে!’

ঘৃণা সব পরিণত নিখাদ ভালোবাসায়। মুহূর্তেই। এই আবেগের পরিবর্তন মনোবিজ্ঞানীদের গবেষণার লোভনীয় এক বিষয় হতে পারে। আর্জেন্টাইনরা যে এমনই। কিন্তু কেন তারা এমন?

আর্জেন্টাইনদের এই মনস্তত্ত্ব সম্বন্ধে দারুণ ব্যাখ্যা দিয়েছেন আর্জেন্টিনা মনোবিজ্ঞান সংস্থার (এপিএ) সভাপতি আন্দ্রেস রাসকোভস্কি। তিনি বলেছেন, ‘আর্জেন্টিনার জন্য ভীষণ রকমের প্রয়োজন একটা হিরো। আইডল। জীবনের প্রতিটি মুহূর্তে আর্জেন্টাইনরা রাজনীতিকদের মাধ্যমে অপমানিত হচ্ছে। রাজনীতিকেরা জনগণকে না পাওয়ার বেদনায় জর্জরিত করছেন। মানুষ এ অবস্থা থেকে একটু হাঁফ ছেড়ে বাঁচতে একজন ক্রীড়া তারকাকে অবলম্বন করে। সেই তারকা ম্যারাডোনা কিংবা মেসি, যে কেউ–ই হতে পারে।’

এর পাশাপাশি আর্জেন্টিনার মানুষের আবেগপ্রবণ চরিত্রটাও এ ক্ষেত্রে একটা বড় ভূমিকা রাখছে। এই মেসিকেই হয়তো গালিগালাজ করে ধুয়ে দিয়েছিল তারা টাইব্রেকার মিস করার পর। কিন্তু ম্যাচ হারার পর যখন মেসি বিদায় বলে দিলেন, তখন সেই গালি দেওয়া সমর্থকটাই হয়ে উঠলেন তাঁর বড় সমর্থক। ব্যানার, ফেস্টুন নিয়ে বুয়েনেস এইরেস বিমানবন্দরে ভিড় জমাল তারা, গেয়ে উঠল এখনই বিদায় না বলার আকুতি-মিশ্রিত গান।

ম্যারাডোনার কথা ধরুন। এই ম্যারাডোনা সাফ বলে দিয়েছিলেন কোপা জিততে ব্যর্থ হলে​ মেসিরা যেন দেশে না ফেরেন। সেই ম্যারাডোনা কোপা ব্যর্থতার পর মেসিকে বুক আগলে ধরে রাখছেন।

অনেকে ম্যারাডোনার সঙ্গে মেসির তুলনা করেন। মিল খোঁজেন। যদিও দুজনের ব্যক্তিত্ব একেবারেই আলাদা। ম্যারাডোনা তেড়েফুঁড়ে যাওয়া মানসিকতার। কুছ পরোয়া নেই। কাউকে দুই পয়সা দাম দেন না। একই ম্যাচে হাত দিয়ে অন্যায় গোল করেন। আবার কয়েক মিনিটের মধ্যেই করতে জানেন শতাব্দীর সেরা গোল।

আশ্চর্যের বিষয় হলো, হাত দিয়ে গোল করাটাকে নৈতিক জায়গা অন্যায় ও অপরাধ হিসেবে গণ্য করা হলেও এ নিয়ে একজন আর্জেন্টাইনকেও পাবেন না নেতিবাচক কিছু বলতে। বরং হাত দিয়ে গোল করার জন্য ম্যারাডোনা যেন আরও বড় দেবতার আসন পেয়েছেন!

এরও ব্যাখ্যা দিয়েছেন রাসকোভস্কি, ‘আর্জেন্টিনার সমাজে মূল্যবোধের যে সংকট, চারদিকে যে অন্যায় ও নৈরাজ্য; এর তুলনায় ম্যারাডোনার মধ্যে তারা যেন অনেক বেশি দেবতাতুল্য একটা ভাবমূর্তি খুঁজে পান। অন্যদিকে মেসি অনেকটাই শান্ত ও বিনয়ী ব্যক্তিত্বের।’

কিন্তু আসলেই কি তা-ই? মেসি কি আসলেও একটু কম আবেগের? তা কী করে হয়! মেসির শরীরেও তো আর্জেন্টিনার রক্ত! মেসির ছোটবেলার কোচ এনরিকে ডমিঙ্গুয়েজ তাই বলছেন, ‘আমি ওকে সেই ছোট্টটি থেকে চিনি। ওর মধ্যেও অনেক আবেগ। কিন্তু সেটা সে ভেতরে পুষে রাখে, বাইরে থেকে দেখলে বোঝা যায় না।’

এ জন্যই মেসি সহসা কাঁদেন না। আর যখন কাঁদেন, সেই কান্না কেউ থামাতে পারে না! আর্জেন্টাইনরা এমনই। বুকের ভেতর থইথই আবেগ।-প্রথম আলো
২৯ জুন ২০১৬/এমটিনিউজ২৪.কম

Follow করুন এমটিনিউজ২৪ গুগল নিউজ, টুইটার , ফেসবুক এবং সাবস্ক্রাইব করুন এমটিনিউজ২৪ ইউটিউব চ্যানেলে