উবায়েদ রনিঃ কিশোরগঞ্জ প্রতিনিধি: ২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলায় আহত ভৈরবের মোঃ নাজিম উদ্দিন ভাগ্যক্রমে সেদিন বেচেঁ গেলেও শরীরে অসংখ্য স্প্রিন্টার নিয়ে দূর্বিসহ দিন কাটাচ্ছে। পংগুত্বের মতই তাকে চলাফেরা করতে হচ্ছে। প্রতিদিন শরীরে তীব্র ব্যথা আর যন্ত্রনা তার। ব্যথার কারনে রাতে ঠিকমত ঘুমাতে পারেন না তিনি। তার শরীরে আরও দুটি অপারেশন প্রয়োজন কিন্তু অর্থের অভাবে অপারেশন করতে পারছেনা। এখন সংসার চালানো তার জন্য খুবই কঠিন হয়ে পড়েছে। পরিবারের সদস্য স্ত্রী, ৩ সন্তান নিয়ে গত ১২ বছর যাবত তিনি নিদরুণ কষ্টে দিন যাপন করছে। ভাইদের সহযোগীতায় এখনও তিনি বেচেঁ আছেন বলে জানান নাজিম উদ্দিন। ভৈরবে তার নিজ বাড়ীতে বসে প্রতিনিধির সাথে কষ্ট আর দুঃখের একথাগুলি বলেন আর অঝোর ধারায় কাদঁতে থাকেন। তার বাবার নাম মফিজ উদ্দিন মেম্বার এবং মাতা জোবেদা খাতুন। মা জীবিত থাকলেও বাবা কিছুদিন আগে মারা যান বলে তিনি জানান। বাড়ী ভৈরবের কালিকাপ্রসাদ ইউনিয়নের আকবর নগর গ্রামে।
২০০৪ সালের ২১ আগস্ট বিকেলে ঢাকার বঙ্গবন্ধু এভিউনিউতে আওয়ামী লীগের জনসভায় নেতাদের বক্তৃতা শুনতে যান নাজিম। প্রিয় নেতা জিল্লুর রহমান ও তার সহধর্মীনি নেত্রী আই ভি রহমানের বাড়ী ভৈরবে। আই ভি রহমানের সাথে রাস্তায় দাড়িঁয়ে ছিলেন তিনি। সভা চলাকালীন সময়ে হঠাৎ বিকট শব্দে প্রকম্পিত হয়ে উঠে এলাকা। এসময় তার পাশে তাকিয়ে দেখেন প্রিয় নেত্রী আই ভি রহমান গ্রেনেড হামলায় গুরুতর আহত অসহায় রক্তাক্ত হয়ে মাটিতে লুটিয়ে পড়েছে। নেত্রীকে বাচাঁতে একটু এগিয়ে গেলে তার উপরও গ্রেনেড পড়লে তিনিও বুকে ও পায়ে গুরুতর আহত হন এবং মাটিতে পড়ে যান। তারপর আর কিছুই মনে নেই তার। জ্ঞান ফিরে এলে দেখতে পান ঢাকা মেডিকেল কলেজের হাসপাতালের বারান্দায় চিকিৎসাধীন আছেন। সেদিনের ঘটনায় ২২ জন নিহত হয় এবং আহত হন অসংখ্য নেতা কর্মী। পরবর্তীতে তৎকালীন আওয়ামী লীগ নেত্রী এবং বর্তমান প্রধান মন্ত্রী শেখ হাসিনা অন্যান্য আহতদের সাথে তাকেও ভারতের পিয়ারলেস হাসপাতালে উন্নত চিকিৎসার জন্য পাঠান। সেখানে চিকিৎসা শেষে ৩ মাস পর দেশে ফিরে আসেন। তখন থেকেই তার জীবন সংগ্রাম শুরু হয়। একদিকে চিকিৎসা, অপরদিকে সংসার চালানোর অর্থসংকট। সেদিন ভাগ্যক্রমে বাচঁলেও এখনও পুরোপুরি সুস্থ্য নন তিনি। পংগু মানুষের মতই চলাফেরা করতে হয় তাকে। ভারতে চিকিৎসার পর দেশে ফিরেও চিকিৎসা করতে গিয়ে তার সহায় সম্বল, জমি জমা সব শেষ হয়ে গেছে। অর্থের অভাবে পরিবার পরিজন নিয়ে কষ্টে দিন কাটছে তার। নাজিম উদ্দিন বলেন, ডাক্তার বলেছে, শরীরে থাকা স্প্রিন্টার গুলি অপসারন করতে আরও দুটি অপারেশন লাগবে। শরীর থেকে স্প্রিন্টার অপসারন না করলে ব্যথা যন্ত্রনা কখনই কমবেনা। অর্থের অভাবে অপারেশন করতে পারছেনা তিনি। সরকার থেকে প্রতি মাসে ৩ হাজার টাকা চিকিৎসা আর ঔষধের জন্য দেয়া হয় যা খুবই অপ্রতুল বলে তিনি জানান। তবে তাকে ভারত থেকে চিকিৎসার জন্য তিনি শেখ হাসিনাকে ধন্যবাদ জানান। বাকী দুটি অপারেশনসহ খুবই জরুরি।
আহত নাজিম উদ্দিন পরিশেষে বলেন, দীর্ঘ এক যুগ পার হয়ে গেলেও আজও এই ঘটনার অপরাধীদের বিচার শেষ হলনা। এজন্য খুবই কষ্ট লাগে। সেদিনের ঘটনার জন্যই আজ আমি পংগুত্ববরন করে দূর্বিসহ দিন কাটাচ্ছি।
২১ আগস্ট ২০১৬/এমটিনিউজ২৪/এইচএস/কেএস